অনুব্রত মণ্ডলের মুখে লাগাম টানতে অবশেষে পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের। কখনও বিরোধীদের 'গুড় বাতাসা', কখনও 'পাঁচন গেলানো', কখনও 'চড়াম চড়াম', এবং ভোটের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে 'নকুলদানা' খাওয়ানো সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বক্রোক্তি, একের পর এক বিতর্কিত এবং ইঙ্গিতবহ মন্তব্য করে বিতর্কের শিরোনামে এসেছেন বীরভূমের প্রবল প্রতাপান্বিত তৃণমূল নেতা অনুব্রত। 'নকুলদানা' নিয়ে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিরোধীদের তরফে অভিযোগ জমা পড়েছিল কমিশনে। তারই জেরে কমিশন সতর্ক করল অনুব্রতকে। কমিশনের নির্দেশে বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদালা চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছেন অনুব্রতকে।
মঙ্গলবার অনুব্রতকে পাঠানো এক চিঠিতে জেলাশাসক বেফাঁস কথা বলার জন্য পরিচিত এই নেতাকে ভবিষ্যতে প্রকাশ্যে কথাবার্তা বলার সময় সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আগে শো-কজ করার পরেও তিনি সংযত হননি এবং বিতর্কিত মন্তব্য চালিয়েই যাচ্ছেন, এ কথাও চিঠিতে লেখা হয়েছে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: ‘অনুব্রত আগে কমিশনের নকুলদানা খান’
গত সপ্তাহে দলীয় নির্বাচনী বৈঠকে এক সরকারি আইনজীবীকে হাজতে থাকা এক তৃণমূল নেতার জামিন করানোর নির্দেশ দিয়েও বিতর্কের মুখে পড়েন অনুব্রত। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জমা পড়েছিল, একজন রাজনৈতিক নেতা কোন ক্ষমতাবলে, কোন অধিকারে একজন সরকারি আইনজীবীকে এভাবে ‘জামিন’ করিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন? কমিশন সেই অভিযোগেরই সূত্র ধরে নোটিশ পাঠায় অনুব্রতকে।
ঘটনার সূত্রপাত তারও দিনকয়েক আগে বীরভূমে অনুষ্ঠিত হওয়া তৃণমূলের এক অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী বৈঠকে, যেখানে বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়, বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী অসিত মাল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারীরা। তৃণমূল সমর্থক সরকারি আইনজীবী মলয় মুখার্জিও হাজির ছিলেন বৈঠকে। মলয়বাবু জেলা তৃণমূলের অন্যতম সহ-সভাপতিও বটে।
আরও পড়ুন: অনুব্রতকে পাঁচন মেখে নকুলদানা খাওয়াবেন বাবুল!
খয়রাশোল এলাকা প্রসঙ্গে আলোচনা যখন চলছে, তখন হঠাৎই অনুব্রত স্বভাবসিদ্ধ দাপুটে ভঙ্গিতে মলয়বাবুর উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন, "মলয়, উজ্জ্বলের বেল করিয়ে দাও।" সেই নির্দেশের ভিডিও ক্লিপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমে। কে উজ্জ্বল? গত বছর খয়রাশোলে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা দীপক ঘোষ। অভিযোগ উঠেছিল, এই খুন দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। পুলিশি তদন্তে গ্রেফতার হয়েছিলেন এলাকার প্রভাবশালী নেতা আব্দুল হক কাদেরি ওরফে উজ্জ্বল। ভোটের আগে সেই ‘উজ্জ্বল’-এরই ‘জামিন’ করানোর নির্দেশ দিয়ে কমিশনের বিরাগভাজন হন অনুব্রত।