সুশীল ভট্টাচার্য। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম পেশাদার কোচ। ভারতীয় ফুটবলের এক পুরনো নাম। যাঁর না পাওয়ার গল্পটাও থেকে গিয়েছে প্রচারের আড়ালে। আজ তাঁকে নিয়ে এত কথা বলছি কারণ একটা তথ্যচিত্র। নাতি শুভম ভট্টাচার্যের উদ্যোগেই মূলত বাস্তবায়ন ঘটছে এই ভাবনার। তথ্যচিত্রের প্রযোজকের ভূমিকায় রয়েছে শুভম।
১৯৪৫ কলকাতা ফুটবল লীগে প্রথমবার ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেছিলেন সুশীল ভট্টাচার্য।তারপর সালটা ১৯৬১, কলকাতা লিগে শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল, কোচ ছিলেন সুশীল বাবু। এরপর জাতীয় মহিলা দল ও বাংলার মহিলা দলেরও কোচ ছিলেন তিনি। কৃশানু দে, শান্তি মল্লিক, কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নামী ফুটবলারাও তাঁর হাতেই তৈরি।
আরও পড়ুন, ছোটদের গরমের ছুটি মানেই ‘ফেলুদা’! এল ‘ছুটির লুটোপুটি’
শুভমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ''ভাবনাটা আমার। কিন্তু মনে হয়েছে আমার থেকে ভাল তৃষা বানাতে পারবে তথ্যচিত্রটা সেকারণেই ওর উপর দায়িত্ব দিয়েছি। গল্প দাদুর কাছ থেকেই শুনেছি অল্প বিস্তর। স্বীকৃতি নিয়ে দাদু কখনওই আক্ষেপ করেননি, চিরকাল ভাল লাগা থেকেই কোচিং করিয়ে গিয়েছেন। অফিস থেকে ফিরে দুটো জায়গায় কোচিং করাতেন, রামকৃষ্ণ মিশন ও ভেটেরান ক্লাব"।
শুভম আরও বলেন, ''রামকৃষ্ণ মিশনে কোচিং করাতেন তিনি। সেখানেই একবার সংকোচ থেকে পারশ্রমিক দেওয়া হয় দাদুকে। সেটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মিশনকে। পরে কোনও সময় পুরস্কার পাওয়া টাকা থেকে তাঁর সহকারী কোচের সঙ্গে ময়দান মার্কেটে গিয়ে একটি দোকান থেকে সমস্ত না বিক্রি হওয়া অনেক জোড়া জুতো কিনেছিলেন। ভেটেরান ক্লাবের বাচ্চাদের জন্য রাখা থাকত সেই জুতো''।
তথ্যচিত্রের পরিচালক তৃষা নন্দী বলেন, ''আমাকে সবথেকে বেশি নাড়িয়ে ছিল উনি মহিলাদের ফুটবল কোচিং শুরু করেছিলেন তাও জাতীয় স্তরে। অথচ মানুষটার কথা কতজনই বা জানে? ওনার কথা জেনেছি সুশীল বাবুর ডায়েরি থেকে। যেখানে উনি সমস্ত পেপার কাটিং সংগ্রহ করে রাখতেন। ওই খাতাটাই আমাদের মূলধন। কলকাতার সঙ্গে ফুটবলের নিবিড় সম্পর্ক, তথ্যচিত্রটা দেখার পর ফুটপ্রেমীদের মনে যেন এই প্রশ্ন ওঠে ওনাকে ভুলে যাওয়া হল কেন''?
আরও পড়ুন, সোহিনীর ‘মানভঞ্জন’-এ ব্যস্ত অনির্বাণ
সুশীল বাবুর তথ্যচিত্র হওয়ার খবরে বেজায় খুশি তাঁর দুই কৃতী শিষ্য়া-কুন্তলা ও শান্তি। কুন্তলা বললেন, “অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে। আমার জীবনে উনি দ্বিতীয় বাবা। একটা অসাধারণ অনুভূতি। ওনার প্রশিক্ষণেই তৈরি হয়েছি আমি। সত্যি বলতে এই আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। আমরা সবাই ভীষণ খুশি। ফুটবলার শান্তি মল্লিকও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সুশীল বাবুর কাছে। তিনি এদিন বলেন, “এর থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। ওনার থেকে কোচিং নিয়েই আজ করে খাচ্ছি। অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল। আমরা যাঁরাই ওনার কাছে কোচিং নিয়েছি সকলেই আজ ভীষণ খুশি। মানুষ হিসেবেও দারুণ ছিলেন''।
শোনা যায়, প্র্যাকটিস হয়ে যাওয়ার পর কবীর বোস মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে থাকতেন। সুশীল বাবু জানতেন ওঁনার কাছে ফেরার টাকা নেই। সেটা নিজের পকেট থেকে দিয়ে দিতেন যাতে প্র্যাকটিসে ক্ষতি না হয়। বেশ কিছু বিখ্যাত ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলার কাজ প্রায় শেষ। আগামীতে বাগডোগরা (ওনার জন্মস্থান) ও বহরমপুরে শুটিং করার কথা রয়েছে। ক্যামেরার দায়িত্ব রয়েছে সোহম দে। এই বছরের শেষেই তথ্যচিত্র শেষ করার কথা।