Abhishek Chatterjee-Rajeshwari Raychowdhury: টলিপাড়ায় একাধিক অসমবয়সী প্রেমের যেমন নজির রয়েছে তেমনই আবার আখছাড় বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে। সদ্য ডিভোর্স হয়েছে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের। ২৫ বছরের ছোট স্ত্রী পৃথার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। অন্যদিকে আবার দীপঙ্কর দে-দোলন রায়ের মতো সম্পর্কের বন্ধন অসমবয়সী প্রেমের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। আজকের প্রজন্মের কাছে এই বিষয়গুলো জলভাত হলেও প্রয়াত অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের জমানায় কিন্তু, বুকের পাটার প্রয়োজন হত। যেটা অবশ্যই তাঁর ছিল। বয়সে বেশ অনেকটাই বড় অভিনেত্রী রাজেশ্বরী রায়চৌধুরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অভিষেক। শুধু তাই নয়, সাহসীকতার সঙ্গে একটি 'কঠিন' পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। একত্রবাস করতেন তাঁরা। সেই সময়ে এই কাজ নিঃসন্দেহে কঠিন সিদ্ধান্ত।
আটের দশকে রাজেশ্বরী রায়চৌধুরী ছিলেন একজন সফল অভিনেত্রী। আর সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে রীতিমতো স্ট্রাগল করছেন অভিষেক। রাজেশ্বরী ভালবেসে অভিষকের নাম দিয়েছিলেন মিঠু আর অভিষেকের আদরের ডাক ছিল রাজু। সেই যুগে বাঙালি সমাজে অভিষেক-রাজেশ্বরীর এই লিভ ইন সংসার সত্যিই অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা। বয়সে বড় নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে চর্চায় ছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। অভিনয়ের কদর যত না ছিল তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, বিখ্যাত কবি কবিতা সিংহর মেয়ে ছিলেন রাজেশ্বরী রায়চৌধুরী। প্রথম যৌবনের প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন। তাঁদের ছিল তিনটি সন্তান। বিয়ের পর সংসার নিয়েই মেতে থাকতেন রাজেশ্বরী। কিন্তু অভিষেকের সঙ্গে সিনেমায় কাজ করতে করতে একে অপরের কাছাকাছি আসেন। প্রেমের গাঢ় হতেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়। অভিনেত্রী রাজেশ্বরীর স্বামী তাঁর উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করতে পারতেন না বলেই নাকি তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে এন্ট্রি নিয়েছিলেন অভিষেক। সংসারের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সন্তানদের নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাটে জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: মাকে ছাড়া প্রথম নববর্ষ, তবে পুরাতনে মায়ের গন্ধুটুকু পাচ্ছি: ঋতুপর্ণা
সেই সময়ের একটি জনপ্রিয় সিনেপত্রিকার ফোটোশুটে মাত দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেমিকযুগল। সাহসী অন্তরঙ্গ অবস্থায় ফোটোগ্রাফার ছিলেন নিমাই ঘোষের লেন্সবন্দি হয়েছিলেন। অভিষেকের কোলে সাহসী পোশাকে রাজেশ্বরীর ছবি দেখে ক্লিক বোল্ড হয়েছিল পাঠকরা। শিহরিত জাগিয়ে যেন কেঁপে উঠেছিল কলকাতা। কিন্তু, অভিষেক-রাজেশ্বরীর প্রেমের শেষ পরিণতি মোটেই সুখকর হয়নি। অবসাদের জেরেই নাকি ভেঙে যায় সম্পর্ক। পরাণের মিঠুর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একটা অতি সাধারণ ফ্ল্যাটে থাকতেন রাজেশ্বরী। মদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। নেশায় ডুবে থাকতেন। অন্যদিকে অভিষেকের জীবন বইছে অন্য স্রোতে।
অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য সিরোসিস অফ লিভার হয় রাজেশ্বরীর। হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন তিনি। তখনও নাকি অভিষেকের কথাই ভাবতেন। দীর্ঘ অসুস্থতার সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে যান রাজেশ্বরী। নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছিল সিনেমহল। রাজেশ্বরী মা মেয়ের স্বেচ্ছাচারিতাকে মেনে নিতে পারেননি তবে মৃত্যুযন্ত্রণা ছিল আরও ভয়ংকর। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর পত্র ছবি দিয়ে রাজেশ্বরী রায়চৌধুরী টলিউডে পা রেখেছিলেন। শিশুশিল্পী হিসাবে শুরু হয়েছিল তাঁর পথ চলা। রাজেশ্বরী একজন চিকিৎসকও ছিলেন। তবে পেশা হিসেবে অভিনয়কেই বেছে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: আজও আমার কাছে শুটিং ফ্লোর প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার জায়গা, আবার সুযোগ এলে সিনেমা করব: শতাব্দী