Kaushik Sen Statement: একদিকে ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য হেনস্থার শিকার নিরীহ শ্রমিকরা। অন্যদিকে মুম্বইয়ের একটি অনুষ্ঠানে হিন্দিতে কথা না বলে ঝরঝরে মারাঠিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুরোধ সত্ত্বেও হিন্দিতে কথা বলেননি। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজলের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নেটনাগরিকরা। অনেকে আবার খোঁচা মেরে বলেছেন, হিন্দিতে কেন কাজ করছেন? ভারতের বিভিন্নপ্রান্তে ভাষা নিয়ে কেন উত্তপ্ত পরিবেশ? এই প্রসঙ্গে মতামত জানতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে বিশিষ্ট অভিনেতা কৌশিক সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তাঁর মতে, 'ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষা বলার জন্য শ্রমিকদের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। অন্যদিকে কাজলের মারাঠি ভাষা নিয়ে যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে দুটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ভাষাকে কেন্দ্র করেই ঘটনা দুটো ঘটেছে, তবে সেই অর্থে কিন্তু এক নয়। কাজলের প্রসঙ্গে বললে বলতে হয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে দাপটের সঙ্গে বলতেই পারেন, মারাঠিতেই কথা বলব হিন্দি-তে নয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে কাজল হিন্দি সিনেমায় আর কাজ করবেন না? সেটা সম্পূর্ণ কাজলের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু, একইসঙ্গে এটাও বলব কাজল কোন ভাবনা থেকে এটা বলেছেন সেটা কিন্তু আমরা কেউ জানি না। কাজল তো হাফ বাঙালিও। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েই এই বক্তব্য রেখেছেন। ওঁর মনে হয়েছে আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলবেন। এরপর যাঁরা বোঝার বুঝবেন।'
আরও পড়ুন শো বাতিল করা-ছবি মুক্তির দিন পিছনোর নেপথ্যে পুরোপুরি অর্থনীতি জড়িত: কৌশিক সেন
আরও বলেন, 'হিন্দি সিনেমাতে ওঁর কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুললে বলতে পারেন, যাঁরা কাস্ট করছেন তাঁদেরকে গিয়ে বলার জন্য। কাজল সেলিব্রিটি, কিন্তু ভাষা নিয়ে যাঁদের ভিন রাজ্যে বিপদে ফেলা হচ্ছে তাঁরা কিন্তু, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। পেটের দায়ে যাঁরা কাজ করতে যাচ্ছেন তাঁরা টার্গেট হচ্ছে। আমি যদি ভারতবর্ষের কোনও জায়গায় যাই তাহলে কিন্তু, এই অত্যাচারের শিকার হব না। কারণ প্রথমত আমি হিন্দু, দ্বিতীয়ত আমার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান। যে মুহূর্তে আমি ইংরাজিতে দুটো কথা বলব সেই মুহূর্তেই ওঁরা বুঝে যাবেন আমাকে বিপদে ফেলা যাবে না। কাজলের বক্তব্যের সঙ্গে বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলনকে এক সুতোয় কখনই বাঁধা সম্ভব নয়।'
আরও পড়ুন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের অনেক গুণ রয়েছে কিন্তু ওঁর ভিতর অসূয়াটা অসুখের মতো বেড়ে যাচ্ছে: কৌশিক সেন
কৌশিকের সংযোজন, 'বাল ঠাকরের সময় শিবসেনার আমলে এই রকম ঘটনা কিন্তু ঘটেছে। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা ছাড়া কেউ এখানে কাজ করবে না, উত্তরপ্রদেশের মানুষেদের মারধরের মতো ঘটনা তো অতীতে ঘটেছে। এখন ধর্মের সঙ্গে ভাষাকে নিয়ে নতুন ইস্যু তৈরি হয়েছে। সিন্ধি সরকারের সাহায্যে বিজেপি সেই নিয়ম ফলো করছে। আর সেই চাপটা হয়তো ওখানে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উপর আছড়ে পড়েছে। এটা একটা নতুন 'ন্যারেটিভ'। ভারতবর্ষে প্রচণ্ড আর্থিক চাপ, মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে, আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। এতগুলো সমস্যা থেকে মানুষের মন ঘোরানোর জন্য তো নতুন কোনও ইস্যু প্রয়োজন। কখনও যুদ্ধের আবহ তৈরি তো কখনও আবার অনুপ্রবেশ নিয়ে মাতামাতি। সর্বোপরি যাঁরা ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষার জন্য হেনস্থার শিকার হচ্ছেন তাঁরা প্রকৃত অর্থে অর্থনৈতিকভাবে একেবারেই স্বচ্ছল নয়।'