Entertainment News: সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন, এই অভিনেতাকে ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে বাঁচান প্রধানমন্ত্রী খোদ! প্রতিবাদীকে চেনেন?

তিনি এমন এক নাম, যার উচ্চারণেই কেরালার মাটিতে বিস্ময়ের সুর বাজে। তাঁর মৃত্যু আজ থেকে ১৩ বছর আগে হলেও, তাঁর স্মৃতি, তাঁর অভিনয়, আর তাঁর স্পষ্টভাষী মানসিকতা আজও যেন জীবন্ত।

তিনি এমন এক নাম, যার উচ্চারণেই কেরালার মাটিতে বিস্ময়ের সুর বাজে। তাঁর মৃত্যু আজ থেকে ১৩ বছর আগে হলেও, তাঁর স্মৃতি, তাঁর অভিনয়, আর তাঁর স্পষ্টভাষী মানসিকতা আজও যেন জীবন্ত।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
Thilakan-actor-movies-biography-1

কে ছিলেন এই অভিনেতা?

তিনি কি শুধুই একজন অনন্য অভিনেতা? নাকি তিনি সেই আগুনঝরা প্রতিবাদী, যিনি মালায়ালাম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষমতা-কাঠামোর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন? থিলাকান এমন একটা নাম, যার উচ্চারণেই কেরালার মাটিতে বিস্ময়ের সুর বাজে। তাঁর মৃত্যু আজ থেকে ১৩ বছর আগে হলেও, তাঁর স্মৃতি, তাঁর অভিনয়, আর তাঁর স্পষ্টভাষী মানসিকতা আজও যেন জীবন্ত।

Advertisment

শুরুর গল্প: মঞ্চ থেকেই উত্থান

১৯৩৫ সালের ১৫ জুলাই, তিরুভাল্লার কাছাকাছি ছোট্ট গ্রাম, আইরুরে জন্ম নেন পি কে সুরেন্দ্রনাথ থিলাকান। ছোটবেলা থেকেই নাটকে ঝোঁক ছিল। আর্টস ক্লাবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন, অভিনয় করতেন ক্লাসিক নাটকে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘জুলিয়াস সিজার’-এ মার্ক অ্যান্টনি চরিত্রে তাঁর অভিনয় ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

Advertisment

এক এমন অভিজ্ঞতা, যা জীবন বদলে দেয়

অভিনয় থেকে হঠাৎই সেনাবাহিনীতে যাত্রা করেন। কিন্তু সেখানে শারীরিক অসুস্থতা তাঁকে শয্যাশায়ী করে দেয়। ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন, একটি পা কেটে ফেলতে হবে। তখনকার দিনে, রোগীর অনুমতি ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত চলত। ঠিক সেই সময় ঘটে যায় এক ঘটনা, যা তাঁর জীবনই বদলে দেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সেই সামরিক শিবিরে পরিদর্শনে আসেন। আদেশ ছিল, কেউ মুখ খুলবে না তাঁর সামনে। কিন্তু থিলাকান নীরব থাকেননি। নিজের জীবন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, তার অনুমতি ছাড়াই পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নেহরু হতবাক। তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দেন থিলাকানকে ভালো হাসপাতালে পাঠাতে এবং একটি নীতি গঠন করেন। কোনও সৈনিক বা তাঁদের পরিবারের সম্মতি ছাড়া, আর কোনও অঙ্গচ্ছেদ হবে না। সেইদিন নেহরুর নির্দেশে বাঁচে থিলাকানের পা, আর বেঁচে যায় তাঁর অভিনয় জীবন।

Satyajit Ray Bangladesh House: 'জঘন্য!' বাংলাদেশে ধ্বংসের মুখে সত্যজি…

নাটকের মঞ্চ থেকে রূপালি পর্দা

সেনাবাহিনী ছেড়ে ফিরে এসে থিলাকান নাটকের দলে যোগ দেন। মুণ্ডাকায়াম নাটক সমিতি গড়ে তোলেন নিজে হাতে। কেপিএসি, কালিদাস কালকেন্দ্রম ও চাঙ্গানাচেরি গীতার মতো সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। এই সময়ে তাঁর দেখা হয় থিয়েটারের লিজেন্ড পি জে অ্যান্টনি-র সঙ্গে। জানা যায়, থিলাকান তাঁকে আজীবন নিজের মেন্টর বলে মেনে চলতেন।

 ক্যামেরার সামনে এক কিংবদন্তির উত্থান

থিয়েটার থেকে সিনেমা। থিলাকানের স্ক্রিন প্রেজেন্স ছিল দুর্দান্ত। তিনি ছিলেন সেই অভিনেতা, যিনি ‘চক্কিকোথা চাঙ্করন’-এর কমিক রোল আর ‘পেরুমথাচান’-এর আবেগপ্রবণ দৃশ্য, দুইয়েই সমান দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। ‘পেরুমথাচান’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু পুরস্কারটা চলে যায় অমিতাভ বচ্চনের হাতে,‘অগ্নিপথ’-এর জন্য। পরবর্তীতে থিলাকান বলেছিলেন, এক প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতাই চেয়েছিলেন, যেন ওই বছর বিগ বি-কে পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে পুরস্কার না পেলেও, থিলাকান হয়ে ওঠেন মালায়ালাম সিনেমার সবচেয়ে সম্মানিত চরিত্র অভিনেতা।

Rudranil Ghosh: ২১- জুলাই মানেই কি ডিমভাতের মঞ্চ? রুদ্রনীল বলছেন, 'পশ্চিমবাংলার গ্রামে এদিন চুরি...!'

সব রঙের চরিত্রে

থিলাকান ছিলেন সেই শক্তি, যিনি চরিত্রকে শুধু জীবন্তই করতেন না, চরিত্রের মধ্য দিয়ে, সমাজে নানা বার্তাও দিতেন তিনি। ‘স্পাদিকাম’-এর সিপি চাকো—যে কঠোর পিতার চরিত্র আজও আতঙ্ক আর মুগ্ধতার মিলিত উদাহরণ। ‘সন্দেশম’, ‘গডফাদার’, ‘সাদায়াম’, ‘মিন্নারাম’, ‘পিঙ্গামি’, ‘মায়িলপিলিক্কাভু’—সব সিনেমাতেই তাঁর উপস্থিতি ছিল সাংঘাতিক। থিলাকান ছিলেন এমন একজন, যিনি প্রত্যেকটা সংলাপ, প্রতিটি অভিব্যক্তিকে শিল্পে পরিণত করতে জানতেন।

সাহসী-স্পষ্টভাষী এই কিংবদন্তি

তিনি কেবল অভিনেতা নয়, ভীষণ প্রতিবাদী একজন মানুষ ছিলেন। শিল্পজগতে গ্রুপবাজির বিরুদ্ধে বারবার মুখ খুলেছেন তিনি। কখনও ক্ষমতার কাছে মাথা নত করেননি। থিলাকান ছিলেন 'অ্যাঙ্কমফর্টেবল ট্রুথ'—যার উপস্থিতি ক্ষমতাবানদের বিচলিত করত। আর সেই কারণেই তিনি আজও কিংবদন্তি।

Entertainment News Entertainment News Today