Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

বন্ধ ব্যোমকেশ সিরিজের কাজ, ওয়েবে কপিরাইট নিয়ে বিতর্ক

কিছুদিন আগেই জানা গিয়েছিল যে ফেলুদার পাশাপাশি ব্যোমকেশের গল্প নিয়ে সিরিজ তৈরির কাজে হাত দিয়েছে আড্ডাটাইমস। সম্প্রতি ওয়েব মাধ্যমে ব্যোমকেশের কপিরাইট নিয়ে বিতর্ক ওঠায় তা স্থগিত হল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Addatimes defers production of Byomkesh web series over copyright debate

গ্রাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস

কিছুদিন আগেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল যে হইচই-এর পরে এবার আড্ডাটাইমস-এও আসছে ব্যোমকেশ নিয়ে নতুন ওয়েবসিরিজ। এখানে ব্যোমকেশের ভূমিকায় দেখা যাবে গৌরব চক্রবর্তীকে ও সত্যবতীর ভূমিকায় থাকবেন ঈশা সাহা। কিন্তু সম্প্রতি ওয়েবে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশের গল্পগুলির রাইটস নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আপাতত সিরিজের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আড্ডাটাইমস কর্তৃপক্ষ। কপিরাইট কার এ নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। পরিচালক-প্রযোজক স্বপন ঘোষালের দাবি, তাঁর কাছেই রয়েছে ব্যোমকেশের ২৬টি গল্পের ওয়েব ও টিভি উপস্থাপনার কপিরাইট। অন্যদিকে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস কয়েক দিন আগেই একটি নোটিস মারফত আড্ডাটাইমস-কে জানিয়েছে, ওয়েব মাধ্যমে ব্যোমকেশ নিয়ে কাজ করার রাইট শুধুমাত্র তাদের হাতেই রয়েছে। এই আইনি ঝুটঝামেলায় আপাতত ব্যোমকেশ সিরিজের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আড্ডাটাইমস।

Advertisment

এই প্রসঙ্গে আড্ডাটাইমস-এর কর্ণধার রাজীব মেহরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান, ''আমরা স্বপনের কাছ থেকে শৈল রহস্য গল্পটার রাইট নিয়েছিলাম ওয়েবসিরিজের জন্য। সেটা নিয়েছিলাম আমি ও রানে (নিসপাল সিং রানে, সুরিন্দর ফিল্মস)। তার পরেই আমরা গোটা প্ল্যানিংটা করি। আমাদের সিরিজের শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল কিছুদিনের মধ্যেই। কিন্তু সম্প্রতি ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর পক্ষ থেকে নোটিস দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ওয়েবে ব্যোমকেশের কপিরাইট ওই কোম্পানির, তাই আমরা ওয়েবে ব্যোমকেশ নিয়ে কাজ করতে পারি না। এই নোটিস পাওয়ার পরে আমরা স্বপন ঘোষালের কাছে যাই। স্বপনবাবু জানান, তিনি বিষয়টি দেখবেন। যেহেতু একটা বিতর্ক উঠেছে এবং স্বপনবাবু আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন, আমরা ঠিক করেছি এ ব্যাপারে আদালতের রায় না বেরোনো পর্যন্ত আমরা সিরিজের কাজ বন্ধ রাখব।''

আরও পড়ুন: ক্রিকেটার লালা অমরনাথ-এর বায়োপিকের পরিচালনায় রাজকুমার হিরানি!

পরিচালক-প্রযোজক স্বপন ঘোষালের দাবি, তাঁর কাছেই রয়েছে ব্যোমকেশের ২৬টি গল্পের টিভি ও ইন্টারনেট মিডিয়ার পারপেচুয়াল রাইটস। সেক্ষেত্রে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস কীভাবে ওয়েব কপিরাইট তাঁদের বলে দাবি করতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে তিনি জানান, ''সত্যজিৎ রায়ের পরে বাংলায় প্রথম ব্যোমকেশ নিয়ে কাজ আমি করেছিলাম ২০০১ সালে। সেটা দূরদর্শনের দন্য। সুদীপ মুখোপাধ্যায় হয়েছিলেন ব্যোমকেশ আর অজিত দেবদূত ঘোষ। এর পরে ২০০৪-এ তারা চ্যানেলে সপ্তর্ষি-রাজর্ষিকে নিয়ে আরও একবার ব্যোমকেশ নিয়ে কাজ করি আমি। এর পরে ২০০৫ সালে আমি একটি হলফনামার মাধ্যমে ২৬টি গল্পের টিভি ও ডিজিটাল মাধ্যমের পারপেচুয়াল রাইটসও নিই। আমার প্রশ্ন, তাহলে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস কীভাবে দাবি করতে পারে যে ওয়েব কপিরাইট ওদের?''

Addatimes defers production of Byomkesh web series over copyright debate ডিজিটাল ও টিভি মাধ্যমে ব্যোমকেশের ২৬টি গল্পের পারপেচুয়াল রাইটস তাঁর কাছে রয়েছে, এমনটাই দাবি করেছেন স্বপন ঘোষাল।

স্বপনবাবুর বক্তব্য, ব্যোমকেশের গল্প নিয়ে সিনেমা প্রযোজনা করার রাইট একাধিকজনকে দেওয়া হয়েছে কিন্তু টিভি ও ডিজিটাল মাধ্যমের রাইটস তাঁর কাছে আছে ২০০৫ সাল থেকে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে যে ২০১৮ সালে যখন ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর মালিকানাধীন হইচই-এ ব্যোমকেশ ওয়েবসিরিজের স্ট্রিমিং শুরু হয়, তখন তিনি কেন কপিরাইটের প্রসঙ্গটি তোলেননি?

এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ''ভেঙ্কটেশের কাছে কয়েকটি গল্পের ফিল্ম রাইটস আছে। সেটা শরদিন্দুবাবুর পারিবারিক বন্ধু প্রবীর চক্রবর্তী ওঁদের দিয়েছেন। প্রবীরবাবুর কাছেই কপিরাইট সংক্রান্ত পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি রয়েছে। আমাকেও রাইটস কেনার সময়ে প্রবীরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। আমি ভেবেছিলাম যে আগে ছবি হয়েছে ভেঙ্কটেশে, তেমনই কোনও গল্প নিয়ে হয়তো ওয়েবে কাজ হয়েছে এনওসি নিয়ে। কিন্তু ওরা কখনওই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আড্ডাটাইমস আমার কাছে রাইটস চেয়েছিল, ওদের আমি দুটো গল্পের রাইটস দিয়েছি। কিন্তু যখন শুনলাম ভেঙ্কটেশ ওদের নোটিস পাঠিয়েছে তখন তো আমার ওনারশিপ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। আমি এই ব্যাপারে আলিপুরের সিজেএসডি কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। কারণ কপিরাইট নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠলে আমার আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। বিষয়টা এখন বিচারাধীন কিন্তু আদালত আমার সমস্ত ডকুমেন্টস খতিয়ে দেখে ৩ ডিসেম্বর একটি স্টে-অর্ডার দিয়েছে।''

আরও পড়ুন: হায়দরাবাদ কাণ্ডে দোষীদের নজিরবিহীন শাস্তি চান অজয় দেবগণ

অভিযোগকারী স্বপন ঘোষাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে এই স্টে-অর্ডারের কপিটি দেখাননি। কিন্তু তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই স্টে অর্ডারটি অচিরেই ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর দফতরে পৌঁছে যাবে। স্বপন ঘোষালের দাবি, এই স্টে অর্ডারের ফলে আপাতত বাংলায় টিভি এবং ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যোমকেশ নিয়ে যাবতীয় কাজ স্থগিত হবে। ওদিকে, ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর নোটিসের ভিত্তিতেই আড্ডাটাইমস ব্যোমকেশ সিরিজের কাজ স্থগিত করে দেয়, স্বপন ঘোষালের কথামতো স্টে-অর্ডার ইস্যু হওয়ার আগেই।

তবে শুধুমাত্র ব্যোমকেশের টিভি ও ডিজিটাল মাধ্যমের রাইটস নয়, স্বপন ঘোষালের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁর কাছে ব্যোমকেশের ১৫টি গল্পের ফিল্ম রাইটসও রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪-তে দুটি গল্পের রাইটস তিনি দিয়েছিলেন প্রযোজক নিসপাল সিং রানে-কে-- 'বহ্নিপতঙ্গ' এবং 'রক্তের দাগ'। এর মধ্যে 'বহ্নিপতঙ্গ' গল্পটি নিয়ে নিসপাল সিং রানে-র প্রযোজনা সংস্থা সুরিন্দর ফিল্মস ও ভেঙ্কটেশ ফিল্মস যুগ্মভাবে প্রযোজনা করে 'হর হর ব্যোমকেশ' (২০১৫)। আর 'রক্তের দাগ' গল্প অবলম্বনে শুধুমাত্র ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর ব্যানারে নির্মিত হয় ব্যোমকেশ গোত্র (২০১৮)।

কিন্তু স্বপন ঘোষাল টিভি ও ওয়েবে ব্যোমকেশ-এর কোনও উপস্থাপনার উপর স্টে-অর্ডার পেয়েছেন এ দাবি করলেও আদালতের এই স্টে-অর্ডার এবং ব্যোমকেশের ডিজিটাল কপিরাইট সংক্রান্ত বিতর্ক বিষয়ে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য নেই। এমনটাই জানানো হয়েছে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর পক্ষ থেকে।

web series
Advertisment