/indian-express-bangla/media/media_files/2025/04/27/Q8l0qXSB5hM2EwITxMb6.jpg)
Anirban Bhattacharya as Atin in Bhog: 'ভোগ' প্রসঙ্গে কী বললেন অনির্বাণ? Photograph: (ছবিঃ অনির্বাণ / ইনস্টাগ্রাম - ক্রেডিটঃ সজল দাস )
Anirban Bhattacharya as Atin in Bhog: কথায় বলে, অভিনেতা যদি চরিত্রের সঙ্গে ট্রানজিট না করেন, তাহলে কিসের অভিনয়? নিজের ব্যক্তিস্বত্বাকে দূরে সরিয়ে, একদম অচেনা অজানা একটা মানুষ হয়ে, যখন তিনি সিলভার স্ক্রিনে পারফর্ম করেন, ক্রিটিকরা বোধহয় এটাই খোঁজেন, যে তিনি কতটা নিজের থেকে আলাদা। ভোগ সিরিজের ট্রেলারে অনির্বাণ ভট্টাচার্য যেন অক্ষরে অক্ষরে এটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কেন এত ভার্সেটাইল। আর অভিনেতার সঙ্গে এই প্রসঙ্গেই যখন আঁধার ঘনাতেই ফোন করল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা, তিনি বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
অনির্বাণ এর আগেও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় কাজ করেছেন। এই সিরিজে আবারও। পরম যখন পরিচালক, এবং অভীক সরকারের ভোগের মত গল্প, তখন যে নির্দ্ধিধায় ভাল কিছু হতে চলেছে একথা বলাই যায়।
১. ভোগে ভীষণ ইন্টেন্স চরিত্র আপনার, কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে হল?
আমি আমার জীবনে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এবং তাঁর বেশ কিছু আমি মাল্টি লেয়ার আছে এমন চরিত্রে আমি আগে অভিনয় করেছি। কিন্তু ভোগের অতীন সেই জায়গায় আসে না। সেটা একটা নতুন সংযোজন। এমন একটা ভয়ঙ্কর অবসেশন তাঁর গড়ে ওঠে, যে সম্পূর্ন অন্যরকমের মানুষে সে পরিণত হয়। এবং প্রায় উন্মাদনার শেষ পর্যায়ে সে পৌঁছে গিয়েছে - এই ধরনের চরিত্র আমার কাছে নতুন। কিন্তু, সারাজীবন ধরে একটা ধ্বংসলীলা চলছে, বা ভীষণ অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছে - এমন চরিত্র আগে করেছি। অনেকদিন বাদে এতবড় পরিসরে আবার এটা বড় সুযোগ। আর এটাই তো পেশা।
২. এই যে বললেন উন্মাদনার শেষ পর্যায়ে একটা মানুষের ভূমিকায়, মানসিকভাবে খুব সহজে এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন?
আসলে এই সবটাই একজন অভিনেতার ইন্টারনাল প্রোসেস। খুব বুঝিয়ে বলা শক্ত। সাদা কালো বলার মত খুব একটা সহজ ভাষা নয়। আসলে, শরীর মন মিলিয়ে এত কিছু চলে, যে আমি সহজে বিষয়টাকে ব্যক্ত করতে পারব না।
৩. অভিনয়ের এই প্রসেস, এটা কি থিয়েটারের জন্যই গ্রো করল?
অভিনেতা হিসেবে তো আমায় গড়ে তুলল নাটক - ই। সেখান থেকে যখন সিনেমা করতে এলাম তখন টেকনিক্যাল দিকটা বুঝলাম, কারিগরি বিদ্যাটা বুঝলাম। কিন্তু, অভিনেতা কারিগরি দিয়ে হয় না, মন দিয়ে তৈরি হয়। মাথা দিয়ে তৈরি হয়। আমার ক্ষেত্রে সেটা থিয়েটারের মাধ্যমেই এসেছে।
Bengali Actress: ফিরতে ইচ্ছে করত না শশুরবাড়িতে, প্রেগন্যান্সির ৪ মাসেই…
৪. মন না হলে, অভিনয় করতে ইচ্ছে করে? মনে হতেই পারে আজ শুটিং করব না...
হতেই পারে। কিন্তু আমি তো পেশাদার। প্রফেশনালদের এটা বলতে নেই যে আজ মুড নেই, বা আজকে বৃষ্টি হচ্ছে।
৫. পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই সিরিজ - আপনার চোখে উনি পরিচালক বেশি ভাল না অভিনেতা?
দুটোই চমৎকার। পরম দা, যে দীর্ঘ সময় ধরে এই ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা, প্রায় ২৫ বছর। সেই সময়টা তাঁকে আরও শক্তিশালী পরিচালক হিসেবে গড়ে তুলেছে। যে সমস্ত পরিচালকরা অভিনেতা, তাঁদের ক্ষেত্রে দারুণ একটা সুবিধা কাজ করে। এবং তাঁরা ফ্লোরের বাকিদের খুব আগলেও রাখেন।
৬. পরিচালক অনির্বাণকে যদি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে কোনও উপদেশ দিতে হয় ফ্লোরে?
আমি চিন্তাই করতে পারি না। তাঁর একটাই কারণ, পরমদা পরিচালক হিসেবে অনেক কাজ করেছি, আর আমি করেছি মাত্র দুটো। কিন্তু, পরমদার থেকে আমি যেটা শিখেছি কারিগরি শিক্ষা ছাড়াও, সেটা হল ফ্লোরকে কী করে ডিসিপ্লিন রাখতে হয়। শান্ত সুস্থ পরিবেশ কী করে মেনটেন করতে হয়, সেটা আমি শিখেছি।
৭. সিরিজে একটি ডায়লগ আছে, 'বিষয়টা মায়ে-পোয়ে, এর মধ্যে ঢুকবেন না..', আপনার সঙ্গে আপনার মায়ের ইকুয়েশন কেমন?
খুবই গভীর! আমাদের মধ্যেও কেউ আসতে পারে না। আমি সহজ সোজা ভাষায় মা ন্যাওটা। মায়ের সঙ্গে বিরোধিতাও হয়, কিন্তু মাকে ছাড়া আমার চলে না।
৮. ভোগের অতীনের মতো আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাসী?
একেবারেই না! আমি সহজ বাংলায় নাস্তিক।
৯. তারপরও এমন চরিত্রে অভিনয় করলেন যে...
আসলে, আমি কী বিশ্বাস করি, না করি এটা আমি কেমন চরিত্রে অভিনয় করছি, সেটার সঙ্গে ম্যাটার করে না। আমি যে গুণ্ডা হিসেবে অভিনয় করেছি, বাস্তবে তো আমি গুণ্ডা নয়। আমি নাস্তিক বলে একজন দেবীকে নিয়ে অবসেসড হয়ে যাওয়া মানুষের ভূমিকায় যদি অভিনয় না করতে পারি, তাহলে কিসের অভিনেতা? তাহলে তো আমি এক্টিভিস্ট! রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে গেলাম আমি। অভিনেতা তো একটা শরীর। রক্ত-মাংসের একটা আধার মাত্র।
১০. ঈশ্বর তুষ্টির ক্ষেত্রে, অনেকেই পঞ্চ ব্যঞ্জন রান্না থেকে নানা রকমের আহুতি দিয়ে থাকেন, সাধনার নামে অতিরিক্ত বিষয়টা মেনে নিতে পারে?
মেনে নিতে হয়। কারণ, ঈশ্বরের উপাসনা এবং ধর্মাচরনা আমাদের সমাজে বহু বহু প্রাচীন একটি বিশ্বাস। এটা সমাজে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছে, এত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, ফলে সমাজের গঠন থেকে চলনে, উপাসনা বিষয়টা একদম জুড়ে আছে। আমাদের মজ্জায় মিশে আছে সেটা। এগুলোকে অস্বীকার করা বোকামি। যদিও বা সাদা চোখে দেখাও যায় এই বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি হলে। কারা ধর্মকে নানা ভাবে ব্যবহার করছে, সেগুলো মানুষ বুঝতেও পারেন। আদতে ধর্ম জিনিসটা ভারতীয় সমাজে, বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে যে এই বিষয়টা, এটা তো আমাদের ওপরে আছেই।
১১. মাটির মূর্তির পুজো হচ্ছে, রক্ত মাংসের মেয়েরা নানা সমস্যার শিকার - সমাজের দিকে তাকালে কী মনে হয়?
আমি কিন্তু পয়গম্বর না, যে চেষ্টা করলেই সব হয়ে যাবে। আমি একজন সাধারণ মানুষ, আমি নিজের কাজের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি। আমার সিনেমা থেকে কাজ করার পদ্ধতি সর্বত্রই খেয়াল করলে দেখা যাবে আমি চেষ্টা করেছি কি না। এটা সামাজিক একটা সমস্যা। কিন্তু, একজন অভিনেতা সমাজ মাধ্যমে কী লিখল বা লিখল না, এটা দিয়ে হওয়ার না। এটা সমাজের অসুখ, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু যাদের চেনা যায়, তাঁদের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই।
১২. দশম অবতার ছবির আপনি অংশ ছিলেন, সেখানে কল্কি অবতারের উল্লেখ আছে, সমাজে মেয়েদের সুরক্ষায় কোনও দেবীর আবির্ভাবের কথা ভাবায় আপনাকে?
না! কখনও মনে হয়নি। আমার মনে হয়, যা করার মানুষ নিজেই করতে পারে।
১৩. ভালবাসা যে আসল তন্ত্র - এটা বিশ্বাস করেন?
আমি কিন্তু তন্ত্র বিষয়টা খুব একটা ভাল জানি না। যেটা জানি না, সেটা নিয়ে আমার ধারণা নেই। এর অস্তিত্ব আমি মানি। তবে, ভালবাসা দারুণ পাওয়ারফুল, সেটা আমি বিশ্বাস করি।
১৪. কোথাও গিয়ে মনে হয়, আজকাল মানুষের ভোগ - লালসা একটু বেশি?
এটা তো ব্যবস্থা। এটা তো বিশ্বব্যবস্থা বলে। যারা পৃথিবী চালায়, যারা সিস্টেমের কান্ডারী, বা যেকটি মাথা, তাঁরা যেভাবে মানুষকে চালায়, সে সেভাবেই চলে। মানুষের এখানে নির্বাচনের কোনও জায়গা নেই।