Actress Tragic Life: মানসিক আঘাত, একাধিকবার গর্ভপাত, মারধোর করতেন স্বামী! মাত্র ৫৩-এ চিরঘুমে নায়িকা, শেষজীবনে..

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি যেভাবে আঘাত সহ্য করেছেন, তারপরেও যে তাঁর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ মানুষ দেখতে পেতেন না, সেকথা বলা অসম্ভব। যাদের ভালবাসতে চেয়েছেন তাঁরাই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি যেভাবে আঘাত সহ্য করেছেন, তারপরেও যে তাঁর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ মানুষ দেখতে পেতেন না, সেকথা বলা অসম্ভব। যাদের ভালবাসতে চেয়েছেন তাঁরাই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
srividya-life-and-career

যা হয়েছিল এই অভিনেত্রীর সঙ্গে...

ইন্ডাস্ট্রিতে এমন বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন- গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের বাইরে তাঁরা সহজ ভাষায় অন্যায়েরশিকার। শ্রীবিদ্যা তাঁদেরই একজন। তার সূক্ষ্ম এবং শক্তিশালী চিত্রায়নের জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি, কিন্তু শ্রীবিদ্যার জীবনের একমাত্র অনুসন্ধান ছিল সত্যিকারের প্রেম। তিনি গভীরভাবে, আন্তরিকভাবে ভালবাসতে চেয়েছিলেন। আর সেই মানুষগুলোই, যাদের তিনি হৃদয়ের সব ভালোবাসা দিয়েছিলেন, তারাই তাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে।

Advertisment

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি যেভাবে আঘাত সহ্য করেছেন, তারপরেও যে তাঁর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ মানুষ দেখতে পেতেন না, সেকথা বলা অসম্ভব। যাদের ভালবাসতে চেয়েছেন তাঁরাই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবু যখনই কোনও মালয়ালম সিনেমাপ্রেমী শ্রীবিদ্যার কথা ভাবেন, তখনই তাঁর হাসিমাখা মুখের ছবি ভেসে ওঠে। তিনি যেমন সুন্দরী, চমত্কার এবং খাঁটি ছিলেন, তেমনি দুর্ভাগ্যের অধিকারিণী ছিলেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৫৩ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন যুদ্ধ চালিয়ে যান। তাই তার জীবন কাহিনীর নাম 'দ্য ট্র্যাজেডি অব দ্য ওম্যান হু লাভড' বললে ভুল হবে না।

srividya life and career

Advertisment

১৯৫৩ সালের ২৪ জুলাই, কর্ণাটকী সঙ্গীতশিল্পী এমএল বসন্তকুমারী ও তামিল অভিনেতা ‘বিকাটাম’ কৃষ্ণমূর্তির ঘরে জন্ম নেন শ্রীবিদ্যা। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি শিবাজি গণেশন, সাবিত্রী এবং জেমিনি গণেশনের সঙ্গে তামিল ছবি তিরুভারুচেলভার (১৯৬৭)-এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। তবে মায়ের মতো গানে নয়, ছোটবেলা থেকেই শ্রীবিদ্যার আগ্রহ ছিল নাচে। তাঁর পরিশীলিত মুখাবয়ব, নিখুঁত নৃত্যভঙ্গি ও শরীরী অভিব্যক্তি তাঁকে ধীরে ধীরে একজন শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি দেয়।

Actor Death News: থামল পথচলা, চিরঘুমে জনপ্রিয় অভিনেতা, কী হয়েছিল?

মালয়ালম চলচ্চিত্রে অভিষেক ও তার উত্থান

১৯৬৯ সালে তিনি মালয়ালম চলচ্চিত্র চট্টম্বিক্কাভালার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন, যেখানে মাত্র ১৬ বছর বয়সে কিংবদন্তি অভিনেতা সাথিয়ানের বিপরীতে অভিনয় করেন। পরের বছর পৌরাণিক সিনেমা 'কুমার সম্ভবম'-এ অপ্সরা মেনকার ভূমিকায় তাঁর নৃত্য ‘মায়া নাদানা বিহারিনী’ দর্শকদের মুগ্ধ করে। এরপর মালয়ালম, তামিল ও তেলুগু ভাষার ছবিতে একের পর এক সুযোগ আসতে থাকে এবং শ্রীবিদ্যা অল্প সময়েই তারকাখ্যাতি অর্জন করেন। শ্রীবিদ্যার অভিনয় দক্ষতা পুরো মাত্রায় উন্মোচন করেন পরিচালক কেজি জর্জ। আদামিন্তে ভারিয়েলু, পঞ্চভাদি পালাম এবং ইরাকাল- এই তিন ছবিতে তিনি জটিল ও গভীর চরিত্রে অভিনয় করে সকলকে চমকে দেন। প্রতিটি চরিত্রই ছিল আলাদা রকম, এবং তিনি তার দক্ষতায় সহ-অভিনেতাদেরও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন।

srividya life and career

ভগ্ন হৃদয়ের গল্প: কমল হাসান থেকে ভরথন, শেষে জর্জ থমাস

অভিনয় জীবনের শীর্ষে থাকলেও, ব্যক্তিগত জীবনে দুর্ভাগ্য ছিল শ্রীবিদ্যার চিরসঙ্গী। তাঁর প্রথম ভালোবাসা ছিলেন কমল হাসান। তাঁরা এতটাই কাছাকাছি এসেছিলেন যে বিয়ের সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। কিন্তু কমল তখন ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ করতে চাইছিলেন, আর শ্রীবিদ্যা ছিলেন সিদ্ধান্তে অনড়। তাঁর মায়ের উপদেশ অনুযায়ী কমল ক্ষুব্ধ হয়ে সম্পর্ক থেকে সরে যান এবং পরে নৃত্যশিল্পী বাণী গণপতিকে বিয়ে করেন।

এই সম্পর্কের ভাঙন শ্রীবিদ্যাকে ভেঙে দেয়। তিনি পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র পরিচালক ভরথনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই সম্পর্ক ছিল আত্মিক, কিন্তু শেষমেশ এটি টিকল না। ভরথন পরে বিয়ে করেন কেপিএসি ললিতাকে। যদিও সেই সম্পর্কের শেষ পরিণতিটাও খুব যন্ত্রণাদায়ক ছিল।

Singer Passed Away: GYM কেড়ে নিল প্রাণ! অকাল মৃত্যু জনপ্রিয় সংগীতশিল্প…

এরপর শ্রীবিদ্যা জর্জ থমাস নামের এক চলচ্চিত্র প্রযোজকের প্রেমে পড়েন এবং তাঁকে বিয়ে করেন। শ্রীবিদ্যার অনেক কাছের মানুষ, যেমন মধু, মনোরমা ও তাঁর মা, তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে না করেছিলেন। কিন্তু ভালবাসা ও প্রতারিত হওয়ার ক্ষত তাঁকে অন্ধ করে দেয়। শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন, জর্জ তাঁকে শুধুই অর্থের উৎস হিসেবে দেখছিলেন। জর্জ তাঁর চেক জাল করে টাকা তুলে নিতেন, এবং শারীরিকভাবে নির্যাতনও করতেন।

srividya life and career

বেদনাময় মাতৃত্বের স্বপ্ন ও শেষ বিচ্ছেদ

শ্রীবিদ্যা জানান, জর্জ তাঁকে একাধিকবার গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেছিলেন। কেবল তার সম্পত্তির অন্য উত্তরাধিকারী যেন না হয়, সেই উদ্দেশ্যে। অবশেষে, মা'র কাছে ফিরে গিয়ে তিনি বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। তবে খ্রিস্টান বিবাহ আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদ কঠিন ছিল। এবং আইনি লড়াই চলে দীর্ঘ ১৪ বছর। শেষমেশ সুপ্রিম কোর্ট তাঁর পক্ষে রায় দিলেও ততদিনে তাঁর জীবনের অনেক কিছু হারিয়ে গেছে।

শেষ মুহূর্তে কামাল হাসানের কাছে ফিরে চাওয়া

শ্রীবিদ্যার জীবনের একান্ত ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর আগে একবার কমল হাসানের সঙ্গে দেখা করা। কমল তাঁর খবর শুনে ছুটে আসেন। তাঁদের শেষ সাক্ষাৎ ছিল একান্তে। কী কথা হয়েছিল, কেউ জানে না। তবে অনেকের মতে, কমলই ছিলেন শ্রীবিদ্যার জীবনের প্রকৃত প্রেম।

উত্তরাধিকার বিতর্ক ও অপূর্ণ স্বপ্ন

মৃত্যুর আগে শ্রীবিদ্যা তাঁর সমস্ত সম্পত্তি অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ কেবি গণেশ কুমারকে উইলের মাধ্যমে অর্পণ করেন। যার মধ্যে দরিদ্র শিশুদের জন্য একটি নৃত্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু মৃত্যুর পর তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, তাঁর আত্মীয়রা দাবি করেন, তারা এ বিষয়ে কিছু জানতেন না। আজও সেই মামলা আদালতে ঝুলে আছে।

 

Entertainment News Entertainment News Today বিনোদনের খবর