সারা দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়াতে লকডাউন বেড়েই চলেছে। এরাজ্যেও বাড়ছে লকডাউনের সময়সীমা কারণ কলকাতা ও তার আশেপাশের বেশ কিছু উপকণ্ঠ এলাকা এখন রয়েছে রেড জোনে। কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা কাজ শুরু করেছে ইতিমধ্যে। ৩ মে-র পরে আরও কিছু সংস্থাকে হয়তো ছাড়পত্র দেওয়া হবে কিন্তু বাংলা বিনোদন জগত সচল হওয়া নিয়ে ক্রমশই বেড়ে চলেছে অনিশ্চয়তা।
যেহেতু শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের মধ্যে একটা বড় অংশ দৈনিক পারিশ্রমিক নিয়ে কাজ করেন, তাই বিগত দেড়মাসে তাঁরা কোনও কিছুই আয় করেননি। শুটিং বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁরা যা কাজ করেছেন, সেই অনুযায়ীই পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কিন্তু যাঁদের আয় দৈনিক ৪০০ বা ৫০০ টাকারও কম, তাঁরা যতদিনই কাজ করুন না কেন, অনেক বেশি টাকা সঞ্চয় করে রাখা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। শিল্পী হোক বা টেকনিসিয়ান, তাঁরা ঘোর দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু তার পরেও খুব তাড়াতাড়ি শুটিং শুরু করা যাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আশির দশকে ঝড় তুলেছিলেন বাংলা ছবিতে! অভিনয়ে ফিরতে পারেন আলপনা
একই জায়গায় অনেক মানুষের সমাগম এড়াতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সিনেমা, সিরিয়াল ও যে কোনও ধরনের শুটিং, লকডাউন ঘোষণারও এক সপ্তাহ আগে। কিন্তু রাজ্যজুড়ে লকডাউনে বার বার দেখা গিয়েছে যে বাজার-দোকান করতে গিয়ে সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে চলছেন না নাগরিকরা। অনেক জায়গাতেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে হস্তক্ষেপও করতে হয়েছে।
''মানুষ যেভাবে বিভিন্ন বাজারে ভিড় করছেন, সেখানে তো লকডাউনের কোনও নিয়মই মানছেন না কেউ। এমন অনেক ছবি আমরা সম্প্রতি দেখেছি। সেখানে পুরোপুরি একটা ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ। এত মানুষের আয়ের পথ বন্ধ, তাহলে আর ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে লাভটা কি হল'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। যদি বাজার ও বিভিন্ন দোকানপাট খুলে দেওয়া হয় আর সেখানে প্রচুর মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন প্রতিদিনই, তাহলে আর শুধু ইন্ডাস্ট্রির মানুষজনই বা কেন আয়ের অনিশ্চয়তায় দিন কাটাবেন, এই প্রশ্ন তুলছেন ভাস্বর।
স্কেলিটন ইউনিট নিয়ে, টেকনিশিয়ানদের রস্টার তৈরি করে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ইউনিটের সবাইকে নিয়েই কাজ করার আর্জি জানিয়েছেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, যদি অন্যান্য বেসরকারি ক্ষেত্রগুলিতে একটু একটু করে কাজ শুরু করার অনুমতি দেয় সরকার, তাহলে বিনোদন জগতের কথাও একটু মাথায় রাখা উচিত। ''আমরা প্রায় দেড়মাস হল বসে আছি। আমরা সবাই লকডাউনের সব নিয়ম মেনেই বাড়িতে আছি। ওদিকে প্রতিদিন বহু মানুষ বাজারে ভিড় করছেন। সেখানে কি সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই'', বলেন জয়জিৎ।
কিন্তু স্কেলিটন ইউনিট নিয়েও কাজ শুরু করা হলে যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তার পরের দায়িত্বটা কে নেবে, এই প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেতা ঋষি কৌশিক এবং আর্টিস্টস ফোরামের জয়েন্ট সেক্রেটারি সপ্তর্ষি রায়।
আরও পড়ুন: মানুষের জন্য কাজ করছি, সেটা আবার প্রচার করব, আমার এসব পছন্দ নয়: পার্নো
''বাজার খুলছে, কিছু দোকানপাট খুলছে কারণ খুলতে বাধ্য হচ্ছে। এটা ঠিকই যে সেখানে প্রচুর মানুষ ভিড় করছেন এবং সেখানেও সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার থেকে কোনও সংক্রমণ হলে নির্দিষ্ট কাউকে দায়বদ্ধ করা যায় না কিন্তু শুটিং থেকে কোনও সংক্রমণ ছড়ালে কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু মানুষ বা সংস্থার দিকে আঙুল উঠবে। সেই ঝুঁকি কে নেবে'', বলেন ঋষি কৌশিক, ''আর শুটিং করলেই যে টাকাটা তৎক্ষণাৎ পাওয়া যাবে তা নয়। টাকা আসতে সময় লাগবে। আর শুটিং মানেই লজিস্টিক্স, খাওয়াদাওয়া এইগুলো রয়েছে। আর শুটিং চাইলেই শুরু করা যাবে না। অনুমতি নেওয়ার ব্যাপার আছে যেটা কেন্দ্রীয় সম্প্রচার মন্ত্রক পর্যন্ত গড়াবে। তাই ভাবতে যতটা সহজ লাগছে, অতটা সহজ নয় বিষয়টা।''
প্রায় একই অভিমত সপ্তর্ষি রায়ের। তিনি বলেন, ''কাজ বন্ধ, আয় বন্ধ সেটা ঠিক কথা। এই অবস্থায় আমি অনাহারে মরে গেলে আমার পরিবারের ক্ষতি হবে। কিন্তু আমি কাজ করতে বেরিয়ে যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হই, তাহলে আমি আরও একশোজনকে নিয়েই মরব। শুধু রোজগারের পথ খুলে দেওয়াটা সমাধান নয়। যেখানে সরকার এই অতিমারীর প্রকোপ অনুযায়ী আমাদের গোটা রাজ্যকে তিনটে জোনে ভাগ করে দিয়েছেন সেখানে এই মুহূর্তে শুটিং শুরু করলে সেই গাইডলাইনটাকেই অমান্য করা হয় না কি? বিশেষত শুটিং বিষয়টা যেখানে কোনোভাবেই শুধুমাত্র গ্রিন জোনে সীমাবন্ধ রাখা সম্ভব নয় যেহেতু ৫০টা মানুষ ৫০টা জায়গা থেকে এসে কাজটা করবেন! তাই শুটিং শুরু করার বিষয়ে সরকার বা স্বাস্থ্য দফতর যা বলবে তার উপর নির্ভর করতে হবে। তবে লকডাউন যদি আরও অনেকদিন চলে, সেক্ষেত্রে গোটা বিনোদন জগৎ যে আর্থিক অনটনের সম্মুখীন হবে তার মোকাবিলায় অন্তত দুঃস্থ শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য সরকার যদি কোনও আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন তাহলে বোধহয় এই দুঃসময়ে কিছুটা সুরাহা হয়।''
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন