/indian-express-bangla/media/media_files/2025/06/26/satakshi-nandy-2025-06-26-20-01-33.jpg)
কাল্পনিকের মৈথিলি স্টিরিওটাইপকে ভাঙতে পারবে: শতাক্ষী
সিনেমার নাম কাল্পনিক, কল্পনার জগৎ পছন্দ? কোনও কাল্পনিক চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে রয়েছে?
ফিকশনল গল্পে যে চরিত্রগুলো তৈরি করা হয় সেগুলো যিনি লিখছেন সেটা তো তাঁর কল্পনা থেকেই। ফিকশনল গল্প যদি সত্যি ঘটনার আঁধারেও তৈরি হয় তাহলেও তো সেখানে ফিল্মি কায়দায় কিছু যোগ-বিয়োগ হয়। আমার পেশার সঙ্গে কল্পনা ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে। কারও কল্পনার চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলাই তো একজন পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে আমার কাজ। বরং এর উলটোটা যদি হয়, যেমন যে চরিত্রগুলো বাস্তবে রয়েছে তাঁকে সিনেমার পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হবে সেটা মনে হয় আমার কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।
একজন সাংবাদিকের চরিত্রে দেখা যাবে, ব্যক্তিগতভাবে এই পেশাটা পছন্দ?
আমি অভিনেত্রী হব সেটা আমি বড় হওয়ার পর বুঝেছি। কিন্তু, ছোটবেলায় আমার সাংবাদিকতার উপর একটা আগ্রহ ছিল। কম-বেশি প্রত্যেকেই ছোটবেলায় তাদের পছন্দ মতো সেজেগুজে কখনও ডাক্তার হয়ে যায়, কখনও সিনেমার নায়িকা হয়ে যায়। আমার মনে আছে মায়ের গয়নার বাক্সে একটা রড-এর মতো জিনিস ছিল সেটা দিয়ে আমি মাইক বানাতাম। বাবা-মা, জ্যেঠুদের মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে সাংবাদিকের মতো প্রশ্ন করতাম। টিভিতে যেমন দেখতাম সেটাই করতাম। আমার মনে হয় এই পেশার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁরা খুবই প্রতিভাবান, কর্মচঞ্চল এবং দায়িত্বপরায়ন, অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।
থিয়েটার, সিনেমার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, সাংবাদিকদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ কাউকে ফলো করেছেন?
আমি নিজের তাগিদে অনেক সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। বুঝতে চেষ্টা করেছি তাঁদের কথা বলা, কজের ধরনটা ঠিক কী রকম। কাল্পনিক যেহেতু পলিটিক্যাল থ্রিলার তাই আমি এমন কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছি যাঁরা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের উপর কাজ করেন বিশেষত একদম গ্রাউন্ড লেবেলে সমাজের বর্তমান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে লেখালেখি করেন। আমি যেহেতু বিনোদন জগৎ-এর সঙ্গে যুক্ত তাই সেই জগৎ-এর সাংবাদিকের ভাবনাচিন্তা আমি কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারি। কারণ আমার ভাবনার সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য থাকে। কিন্তু, পলিটিক্যাল জার্নালিস্টদের ভাবনাটা একেবারে অন্যরকম। আমি সেই ভাবনা, কাজের ধরনটা রপ্ত করতে চেয়েছি।
সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নতুন কী অভিজ্ঞতা হল?
কোনটা আসল, কোনটাকে ভরসা করা যায়, কোনটা কাল্পনিক, কোন জিনিসটাকে একেবারেই ভরসা করা যায় না সেই বিষয়গুলো সাংবাদিকদের চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে আমি শিখেছি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি যে কোনও বিষয়ে একটার পর একটা ঘটনা পেঁয়াজের খোসার মতো খোলসা করে। আর সেই কহিনি খোলসা করার সময় কোনটা সত্যি আর কোনটা সত্যি নয় সেই বিষয়ে সাংবাদিকরা ভীষণ তুখর। কাল্পনিকের গল্পটাও সেইরকম। যেটা বলা হচ্ছে সেটা সত্যি, যা দেখানো হচ্ছে সেটা আদতে ঘটেছে? অভিনয় করার সময় বাস্তবে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলা, কাজের ধরণ শেখা শুটিং ফ্লোরে প্রয়োগ করতে পেরেছি।
শুটিং করতে গিয়ে নতুন কিছু শিখলেন?
আমাদের একটা দারুণ টিম ছিল। আমরা পুরুলিয়া, কলকাতা, বাটানগরে শুটিং করেছি। প্রচণ্ড গরমেও খুব মজা করে শুট করেছি। সিনেমার শুটিং থেকে প্রতি মুহূর্তেই কিছু না কিছু শেখার বিষয় আছে। তবে নতুন যে জিনিসটা শিখেছি সেটা হল বুলেট চালানো। অনেক পরিশ্রম হয়েছে তবে তার থেকেও বেশি এনজয় করেছি। প্রথমে স্কুটি, তারপর বাইক চালানো শিখলাম। সবশেষে বুলেটের মতো ভারি জিনিসটা চালিয়ে পুরুলিয়ার রাস্তায় চালানোর সময় একটু ভয় লাগছিল তবে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
সাংবাদিক হিসেবে কী ধরনের ব্রেকিং নিউজ দিতে চান?
সেটা নিয়ে সত্যিই সেভাবে কখনও ভাবিনি। তবে আমি যদি আমার পছন্দের কোনও এক ফেমাস পার্সোনালিটির সাক্ষাৎকার নিতে পারি, যা আগে কোনওদিন কেউ নেয়নি সেটা সাংবাদিক হিসেবে ভাল লাগবে।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কোনও পছন্দের পার্সোনালিটি আছে যাঁর সঙ্গে ভবিষ্যৎ-এ কাজ করার ইচ্ছে আছে?
অনেকেই আছেন। লিস্ট অনেক লম্বা। শুধু বাংলায় নয়, বাংলার বাইরে, দক্ষিণ ভারতও আমার অনেক পছন্দের পার্সোনালিটি আছেন যাঁদের সঙ্গে আমি কাজ করতে চাই। ভারতজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ধারার ছবি তৈরি হচ্ছে। আমার কাছে যদি এমন সুযোগ আসে যেখানে আগে কখনও যে চরিত্রে দর্শক দেখেনি, যে চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে হবে সেটার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। যদি কোনও পরিচালক এইরকম প্রস্তাব আমার কাছে নিয়ে আসেন তাহলে অবশ্যই সেই কাজটা আমি করব।
বিরোহীর রাধা থেকে কাল্পনিকের মৈথিলি কতটা পরিণত?
প্রথম কাজ 'আমার কথা' ২০১৪-তে জাতীয় পুরস্কার পায়। বিনোদিনীর ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এরপর আমি থিয়েটার আর নাচের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে যাই। তারপর কিছু ইন্ডিপেনডেন্ট কাজ ও কিছু সিরিজে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করি। এরপর আসে বিরোহীর রাধা, ফেলু মিত্তির লেনের চাঁপা। অনেকেই ভাবে আমি গ্রাম্য মেয়ের চরিত্রের জন্য পারফেক্ট। কিন্তু, কাল্পনিকের মৈথিলি, অনেক পরিণত। এইরকম চরিত্রে আমাকে দর্শক সত্যিই আগে কখনও দেখেনি। কাল্পনিকের মৈথিলি স্টিরিওটাইপকে ভাঙতে পারবে।
অন্য ধারার চরিত্রে কাজ কম পাওয়ার নেপথ্য কারণ টাইম কস্টের শিকার?
কেরিয়ারের শুরুতে সেটা আমার মনে হত। আমি যখন কোনও চরিত্রে কাজ করি সেটার জন্য একশো শতাংশ সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। গ্রাম ও মফঃস্ফল ঘুরে নাটক করতে গিয়ে আমি জেনেছি সেখানের মানুষের জীবনযাত্রাটা কী রকম। তাই সেই ধরনের চরিত্রে কাজ করা আমার কাছে একটু সহজ। একইসঙ্গে আবার কলকাতাকে বেড়ে ওটা একটা মেয়ে। শহুরে আবদকায়দাও আমার জানা। তাই একটা সময় মনে হয়েছিল নিজেকে ভাঙতে হবে। অন্য ধারার চরিত্রে কাজ করতে হবে। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই চাওয়াটা আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়েছে। ২০২৪-২০২৫ আমার জীবনের নতুন শুরু।
নায়িকা হতে গেলে সুন্দরের কোনও বিশেষ সংজ্ঞা প্রয়োজন?
না, আমি সেটা মনে করি না। কাজই একমাত্র পরিচয় হওয়া উচিত। এখন ভারত ও বিদেশেও অনেক সিনেমা তৈরি হচ্ছে যেখানে সৌন্দর্য, গ্ল্যামারকে একদম অন্যভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আমার মনে হয় নায়িকা হওয়ার জন্য তথাকথিত গ্ল্যামারের প্রয়োজন নেই।
মুম্বইয়ে সেটল হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে?
এখুনি সেটা সম্ভব নয়। আমার মা একা। তাই কলকাতা ছেড়ে মুম্বইয়ে পুরোপুরি থাকা সম্ভব নয়। তবে কোনও পছন্দের স্ক্রিপ্ট পেলে নিশ্চয়ই কাজ করতে চাইব। অনেক কিছু শিখতে পারব।
আইকন হিসেবে কাকে মান্যতা দেন?
আমি স্মিতা পাটিলের ভীষণ বড় ভক্ত। একেবারে প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো। এমন কোনও সিনেমা নেই যা আমি দেখিনি। উনি নেই, তবে ওঁর কাজ রয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন বড় পর্দায় মজা উপভোগ করার সব উপাদান সিনেমায় থাকলেই দর্শক হলমুখী হবে: অনির্বাণ চক্রবর্তী