Pokkhirajer Dim: সত্যজিৎ রায়ের স্বপ্ন ছিল বাংলার আকাশেও UFO উড়ুক, সেটাই পূরণ করার চেষ্টা করেছি: সৌকর্য ঘোষাল

Pokkhirajer Dim: ১৩ জুন মুক্তি পেল পক্ষীরাজের ডিম। রেনবো জেলির সিক্যোয়েল জন্য কেন সাত বছরের অপেক্ষা থেকে শুরু করে ছবি তৈরির নেপথ্য কাহিনি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল।

Pokkhirajer Dim: ১৩ জুন মুক্তি পেল পক্ষীরাজের ডিম। রেনবো জেলির সিক্যোয়েল জন্য কেন সাত বছরের অপেক্ষা থেকে শুরু করে ছবি তৈরির নেপথ্য কাহিনি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল।

author-image
Kasturi Kundu
আপডেট করা হয়েছে
New Update
সঠিক শো টাইমের মাধ্যমে দর্শককে সিনেমা দেখার সুযোগ করে দিতে হবে।

সঠিক শো টাইমের মাধ্যমে দর্শককে সিনেমা দেখার সুযোগ করে দিতে হবে: সৌকর্য

রেনবো জেলির সিক্যুয়েল তৈরির জন্য সাত বছরের ব্যবধান কেন?

Advertisment

যখন কোনও সিনেমার সিক্যোয়েল বা দ্বিতীয় ভাগ তৈরি হয় তখন সেটার জন্য একটু সময় লাগে। পরের গল্পের জন্য যদি একটু সময় না দিই তাহলে মাঝখানের ঘটে যাওয়া পরিস্থিতিগুলোকে আমি পরিবেশন করব কী করে? রেনবো জেলি করার পর আমার স্ত্রী ও কিছু খুদে দর্শক সিক্যোয়েলের বিষয়টা বলেছিল। কিন্তু, সেই সময় আমি বিষয়টা নিয়ে ভাবিনি। ২০২১ সালে সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষ উপলক্ষে ওঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়ে কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু, সেটা বাস্তবায়িত করতে পারিনি। পরে যখন ভাবলাম কী ভাবে তাঁর প্রতি আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করব, তখন মনে হল ছয়ের দশকে সত্যজিৎ রায়ের এলিয়ান নিয়ে হলিউডের ছবি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। সেই জন্য ওঁর প্রচণ্ড কষ্ট, ক্ষোভ মনের ভিতর জমা ছিল। সত্যাজিৎ রায়ের ভক্ত হিসেবে আমার মনেও সেই ঘা এখনও দগদগে। সত্যজিৎ রায় স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলার আকাশেও ইউএফও (UFO) উড়ে আসুক। তখন আমি ভাবলাম এই ধরনেরই কোনও ছবি বানাব। সিনেমা তৈরি করার সময় ভাবলাম এই ছবিতে আমি আর কী যোগ করতে পারি। আমার ভাবনায় এল হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের দুটি চরিত্র ঘোতন এবং পপিনস। এরপর ধীরে ধীরে পক্ষীরাজের ডিম গল্পটা তৈরি হয়। 

সত্যজিৎ রায় মৃণাল সেনের মতো কিংবদন্তীদের ভাবনার আদলই ছবি তৈরির অনুপ্রেরণা?

Advertisment

কিংবদন্তীরা অবশ্যই ছবি তৈরির অনুপ্রেরণা। তবে ওঁদের ধাঁচে তো ছবি তৈরি করা যায় না। আমার কাছে সত্যজিৎ রায় সকলের থেকে একদম আলাদা। পরিণত বয়সে ফিল্ম মেকার হিসেবে সত্যজিফ রায়কে আমি চিনেছি। ছোটবেলায় তো ওঁর ছবি বাকি সকলের মতো আমিও দেখেছি। কিন্তু, পরিচালক হিসেবে ওঁর দক্ষতা বোঝার ক্ষমতা হয়েছে অনেকটা বড় বয়েসে। আমি যখন প্রাইমারিতে পড়ি তখন সত্যজিৎ রায় আমার রক্তে মিশে যায়। আর সেটা ওঁর গল্প দিয়ে। তাই আমার কাছে আগে উনি লেখক সত্যজিৎ রায় তারপর ফিল্ম মেকার সত্যজিৎ। আমার কাছে সত্যজিৎ রায় একজন সর্বাঙ্গিন অনুপ্রেরণার হিমবাহ-এর মতো। সায়েন্স ফ্যান্টাসি বা সায়েন্স ফিকশনের অনুপ্রেরণা আমি সত্যজিৎ রায়ের থেকেই পেয়েছি। 

বাংলায় আজকাল রিয়েল লাইফ, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, মাল্টি স্টারকাস্ট ভিত্তিক ছবি বেশি হচ্ছে। রূপকথার গল্প কমে যাচ্ছে বলেই চেনা ছকের বিপরীতে হাঁটলেন?

না, বিষয়টা ঠিক তা নয়। আসলে দর্শক হলে এসে ছবি দেখুক সেই ছবিকে ভালবাসুক তার প্রথম শর্ত হবে নিজের কাছে সেই গল্প কতখানি ইউনিক, অথেনটিক, আনকোড়া নতুন গল্প বলে মনে হচ্ছে। আমার কাছে রূপকথা, সায়েন্স ফ্যান্টাসি এগুলো আমাকে বেশি নাড়া দেয়। তাই আমি এই ধরনের গল্পের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। তবে আমিও তো থ্রিলার, প্রেমের ছবি বানিয়েছি। 

পক্ষীরাজের ডিমটা বানালেন কী করে?

পক্ষীরাজের ডিম বিষয়টা আমার কাছে আঁকা ছিল। সেটা দেখে বানিয়েছি। খালি চোখে তো আমরা ফিজিক্যাল অববয় দেখতে পাই। পক্ষীরাজের ডিম এমন একটা এলিয়ান বস্তু যার মধ্যে চোখ রাখলে একটা ইমোশনাল অবয়ব দেখা যায়। অর্থাৎ শুধু মানুষের মনই পড়া যাবে তা নয়, মন দেখাও যাবে।   

পক্ষীরাজের ডিম শুধুই রূপকথার গল্প নাকি কিছুটা রাজনীতির ছোঁয়াও আছে?

এখানে রাজনীতিটা একদম অন্যরকম। ছোটদের গল্পে যে দুষ্টু লোকেরা থাকে, লীলা মজুমদার শিখিয়েছেন ছোটদের গল্পে যারা খল চরিত্র হয় তারা যতই খল হোক না কেন চরিত্রগুলো দেখে যেন মনে হিংস্রতা না জাগে। আমি সেই সেই শিক্ষা গ্রহণ করেছি। এই গল্পেও সেইরকমই কিছু দুষ্টু লোক আছে যারা পক্ষীরাজের ডিমটা ছিনিয়ে নিতে চাইছে। 

অবির্বাণ ভট্টাচার্যকেও আগে কখনও এইরকম লুকে দেখা যায়নি...

এই ছবির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর পূজা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসে এই চরিত্রটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করি। অনেকরকমের আইডিয়ার পর আমি একটা স্কেচ বানাই। সেই স্কেচের ভিত্তিতেই আমরা অনির্বাণের লুকটা তৈরি করি। 

ছোটদের সঙ্গে কাজ করার মধ্যে আলাদা আনন্দ বা মানসিক শান্তি খুঁজে পান?

ছোটদের সঙ্গে কাজ করে অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়। পরিচালকের প্রতি ওদের অগাধ বিশ্বাস। সেই মানুষটাকে বিশ্বাস করেই কাজটা ওরা করে। তাই সিনেমা বানানোর সময় পরিচালকের মাথায় যে ভাবনাটা আছে সেটা অবিকল ওদের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা যায়। 

১৩ জুন আরও একটি বাংলা সিনেমা মুক্তি পেল, বক্স অফিস লড়াই নিয়ে ভাবিত?

না, কারণ দর্শকের কিছু জিনিসের উপর সিনেমা দেখাটা নির্ভর করে। একটা হল সঠিক শো টাইম আর কোন হলে সিনেমাটা চলছে। সময় না পেলে দর্শক সিনেমা দেখবে কী করে? দ্বিতীয়ত ছবি যদি ভাল হয় তাহলে দর্শক হলমুখী হবেই। 

বাংলা ছবিকে বাঁচিয়ে রাখতে বাঙালিরাই বলছে হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখুন, পরিচালক হিসেবে খারাপ লাগে?

আমার মতে, দর্শকের কথাও ভাবতে হবে। যখন টিকিট কেটে দর্শক হলে যাচ্ছে তখন তো তাঁরা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী ছবি দেখবে। অনেক বাংলা ছবি আছে যা ভাল ব্যবসা করে। সেগুলো দর্শকের ভাল লাগে বলেই তো ব্যবসা করে। শুধু অনুরোধ করে যদি দর্শককে হলমুখী করতে হত তাহলে তো বাংলায় ব্লকবাস্টার ছবিই হত না। মূল কথা, সঠিক শো টাইমের মাধ্যমে দর্শককে সিনেমা দেখার সুযোগ করে দিতে হবে।

পক্ষীরাজের ডিম মুক্তি পেল, সিনেমা থেকে কেমন ব্যবসার আশা রাখছেন?

এটা বলা খুব দুষ্কর। আমি আমার সেরাটুকু দিয়ে ছবিটা বানিয়েছি। এবার দর্শক বিচার করবে। তারপর ফলাফল নির্ভর করছে। 

পরবর্তী ছবিতে দর্শক আরও একবার রূপকথার গল্প বা সায়েন্স ফিকশন দেখবে?

আমি দুটো বিষয় নিয়ে ভাবছি। তবে সেটা এখনই খোলসা করতে চাইছি না। 

আরও পড়ুন দেবী চৌধুরানীর শুটিং শেষে বুম্বাদা তিনবার সিনেমাটা দেখার পর বলেছে এটা 'কর্মাশিয়াল ক্লাসিক': শুভ্রজিৎ মিত্র

Bengali Cinema Pokkhirajer Dim