সপ্তাহের শুরুতেই বাংলা টেলিজগতে ছড়িয়ে পড়ে একটি খবর-- একটি বিশেষ বাংলা বিনোদন চ্যানেল তাদের চারটি চলতি ধারাবাহিক বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লকডাউন-জনিত আর্থিক ক্ষতির কথা মাথায় রেখে। বিগত দুদিন ধরেই সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিকগুলির অভিনেতা-অভিনেত্রী ও ইউনিট সদস্যরা ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। যেহেতু শোনা গিয়েছে যে ওই চ্যানেলটি এবার থেকে ডাবিং করা হিন্দি ধারাবাহিক সম্প্রচার করবে, তার বিরুদ্ধে বাংলা টেলিজগতের অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন #saynotodubbedserial হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে।
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে অনেকেরই সন্দেহ ছিল যে খবরটি সত্যি কি না। যত সময় এগোয়, ততই জানা যায় যে বিশেষ বিনোদন চ্যানেলের চলতি ৪টি বাংলা ধারাবাহিক বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি কোনও ভুয়ো খবর নয়। বুধবার রাত থেকেই বহু শিল্পী সোশাল মিডিয়ায় এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন: সিনেমা-সিরিয়ালের এডিটিং-ডাবিংয়ের কাজ শুরুর অনুমতি বাংলায়
চলতি ধারাবাহিকগুলি যে বন্ধ করে দেওয়া হবে, লকডাউন শুরু হওয়ার সময় এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি ওই বিশেষ চ্যানেলের পক্ষ থেকে। ওই চারটি ধারাবাহিকের ইউনিটেই শুটিং বন্ধ হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কাজ হয়েছে। চারটি ধারাবাহিকের গল্পই অসমাপ্ত। কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, আর ওই চারটি ধারাবাহিকের একটিও চালিয়ে নিয়ে যাবে না ওই চ্যানেল, এমনটাই জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রযোজকদের।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে ওই চ্যানেলটি পুরোপুরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেবে। শোনা গিয়েছে যে ওই চ্যানেলে শুধুই ডাবিং করা সিরিয়াল দেখা যাবে। এই কথাটি টেলিজগতে ছড়িয়ে পড়তেই গভীর অসন্তোষ তৈরি হয়েছে অভিনেতা-অভিনেত্রী ও টেকনিসিয়ানদের মধ্যে। তৈরি হয়েছে #saynotodubbedserial হ্যাশট্যাগ যা ব্যবহার করে বহু শিল্পীরা তাঁদের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বক্তব্য, এর পরে যদি সত্যিই ওই চ্যানেলে ডাবিং করা সিরিয়াল দেখা যায়, তবে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি পদক্ষেপ হবে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে ওই চ্যানেল কেন ওই ৪টি ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৬০০ জন মানুষ ও তাদের পরিবারের কথা ভাবল না, সেই প্রশ্ন তুলছেন বাংলা টেলিজগতের সদস্যরা। অনেকে পরিস্থিতির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে লাইভেও এসেছেন।
বাংলা বিনোদন চ্যানেলে ডাবিং করা ধারাবাহিকের সম্প্রচার নিয়ে অসন্তোষ বহুদিনের। ২০১১ সালে এর প্রতিবাদে বাংলা বিনোদন জগতের সদস্যরা পথেও নেমেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী একটি বিনোদন চ্যানেল ডাবিং করা সিরিয়াল সম্প্রচার করতে পারে। এমনকী একটি বাংলা বিনোদন চ্যানেল বিগত কয়েক বছর ধরে শুধুই ডাবিং করা ধারাবাহিকই সম্প্রচার করে, এমনটাই জানালেন অভিনেতা-পরিচালক অনিন্দ্য সরকার। ''আগে বাংলা ছবিতে দেখবেন লেখা থাকত ডান্স ডিরেক্টরের নাম, ব্র্যাকেটে বম্বে। এই নিয়ে হাসাহাসিও হতো'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন অনিন্দ্য, ''কোনও বাংলা বিনোদন চ্যানেল যদি চলতি বাংলা ধারাবাহিক বন্ধ করে ডাবিং করা সিরিয়াল দেখায়, তাহলে কি আর সেটাকে বাংলা চ্যানেল বলা যায়? সমস্যা হল কোনও একটি চ্যানেল যদি এটা করে এবং দেখা যায় যে এভাবে তারা আয় করতে পারছে, তাহলে অন্যান্য চ্যানেলগুলিও একই পথ অনুসরণ করতে পারে। সেটাই আমাদের আশঙ্কা।''
আরও পড়ুন: লকডাউনেই মুক্তি পাচ্ছে অমিতাভ-আয়ুষ্মানের ‘গুলাবো সিতাবো’
প্রকৃতপক্ষে যদি তা ঘটে তবে আরও বেশ কয়েকটি চলতি ধারাবাহিক বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তাই ঘটনাটি সামনে আসার পর থেকেই টেলিজগতে আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তা আরও দৃঢ় হয়ে চেপে বসছে। বিনোদন জগতের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ ও তাদের পরিবারের কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সোাশাল মিডিয়া পোস্টে, কমেন্টে। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, এই সময়ে দাঁড়িয়ে চ্যানেলের এই সিদ্ধান্ত অমানবিক।
প্রায় ৭ বছর ওই বিশেষ চ্যানেলটির বিভিন্ন ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী। চলতি ৪টি ধারাবাহিকের একটিতে অভিনয়ও করছিলেন। তিনি এই প্রসঙ্গে লেখেন, ''এমনও হয়েছে যে অন্য চ্যানেলের কাজ ছেড়ে আমি এদের কাজ করেছি সম্পর্কের খাতিরে, ভালবাসার খাতিরে। সত্যি এতটাই ভালবাসা ছিল এই চ্যানেলটার প্রতি। আমার মতো এরকম আরও অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা এভাবেই এই চ্যানেলের সাথে জড়িত ছিল... আমার অ্যাট লিস্ট মনে হয়েছে যে আমার নিজের কেউ খুব সাবধানে পিঠে ছুরি মারল।''
শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিকের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই যে প্রতিবাদ করছেন তা নয়, বন্ধ হওয়া ওই চারটি ধারাবাহিকে নেই এমন শিল্পীরাও সরব হয়েছেন ডাবিং করা সিরিয়ালের বিরুদ্ধে। সামগ্রিকভাবে বাংলা বিনোদন জগৎ, বিশেষ করে বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি যে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে, তা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা সোশাল মিডিয়াতে এসে। এই জগতের সঙ্গেও যে অসংখ্য মানুষের বাঁচা-মরা জড়িয়ে রয়েছে, সেই কথা মনে রেখে, সরকার যাতে কোনও বিশেষ পদক্ষেপ নেন, সেই আবেদনই উঠে আসছে সোশাল মিডিয়ার সাম্প্রতিক পোস্টগুলি থেকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন