Sesher Kobita fan fictions: রবীন্দ্র-অনুরাগী পাঠকদের বহুজনেরই মাথায় প্রশ্নটা এসেছে। 'শেষের কবিতা'-র পরে ঠিক কী ঘটল লাবণ্য় ও অমিতের? আর কখনওই কি দুজনের দেখা হয়েছিল? যদি দেখা হতো তবে ঠিক কী কথা হতো দুজনের? কলকাতার তরুণ পরিচালক জিৎ চক্রবর্তী সেই ভাবনা থেকেই গত বছরের শেষের দিকে শুরু করেন 'শেষের গল্প'-র কাজ। এই পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে লাবণ্য ও অমিতের ভূমিকায় রয়েছেন মমতা শঙ্কর ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়। ওদিকে 'শেষের কবিতা'-র পরের গল্প, এই মূল বিষয়ভাবনাকে কেন্দ্র করেই একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি নির্মিত হয়েছে অনঞ্জন মজুমদারের পরিচালনায়, ছবির নাম 'অবশেষের গল্প'।
দু'টি ছবির নামকরণেও অসম্ভব মিল। এই সমাপতন কি সম্পূর্ণ কাকতালীয়? মজার ব্য়াপার হল, দুই পরিচালকের দেওয়া তথ্য় অনুযায়ী, দু'জনেই প্রায় একই সময়ে ছবির কাজ শুরু করেছেন। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা যেখানে শেষ হয়, তার কয়েক দশক পরে অমিত ও লাবণ্য মুখোমুখি হলে ঠিক কী ভাবতেন, সেই নিয়েই জিতের ছবির গল্প। অনঞ্জনের স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির মূল গল্প আবার 'শেষের কবিতা'-র ২৫ বছর পরে, কেতকী, লাবণ্য় ও শোভনলালকে নিয়ে। অমিতের উপস্থিতি রয়েছে অবশ্যই তবে কেতকী ও লাবণ্যর মধ্যে শীতলতাই এই ছবির মূল উপজীব্য, এমনটাই জানালেন অনঞ্জন। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটিতে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন অঞ্জনা বসু, বিদীপ্তা চক্রবর্তী ও বাদশা মৈত্র।
আরও পড়ুন: সত্যজিতের জন্মদিনে ব্য়ঙ্গাত্মক মিম! জবাব দিলেন কমলেশ্বর
কিন্তু এর পরেও একটা খটকা থেকেই যাচ্ছে ভাবনা চুরি নিয়ে। বাংলা ছবিতে এই বিষয়টি বার বার এসেছে, আন্তর্জাতিক স্তরেও এসেছে। পোস্ট মিলেনিয়াম পৃথিবীতে কনটেন্ট প্লেজিয়ারিজম একটি বড়সড় সমস্য়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে দুই পরিচালকের কেউই পরস্পরের প্রতি ভাবনা চুরির অভিযোগ আনেননি এখনও পর্যন্ত। বরং দু'জনেই দু'জনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
'শেষের গল্প' ছবিতে সৌমিত্র-মমতা। ছবি সৌজন্য়: জিৎ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া তথ্য় অনুযায়ী, ২০১৭ সালে প্রথম এই প্রজেক্টটি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন জিৎ। ওদিকে অনঞ্জন জানিয়েছেন যে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন বছর দুয়েক আগে কিন্তু তখনও চিত্রনাট্য় লেখা শুরু হয়নি। চিত্রনাট্য লেখা শুরু হয় ২০১৮ সালের গোড়ার দিকে এবং শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনঞ্জন ছবিটি ফ্লোরে নিয়ে গিয়েছেন ২০১৮ সালের মে মাসে। আবার জিৎ জানিয়েছেন যে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর চিত্রনাট্যের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়। এপ্রিল-মে মাসে 'শেষের গল্প'-র শিল্পীদের সঙ্গে ছবি সংক্রান্ত কথা পাকা হয় আর শ্য়ুটিং শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে।
শেষের গল্প শ্যুটিংয়ের সময় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জিৎ চক্রবর্তী। ছবি সৌজন্য়: জিৎ
আরও পড়ুন: বলিউডে ডেবিউ করবেন আমির খানের বোন
অর্থাৎ দু'টি ছবির ক্ষেত্রেই সলতে পাকানো থেকে প্রদীপ জ্বালানো, সবই হয়েছে গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্য়ে। অথচ দু'পক্ষের কেউ কিছুই জানতে পারেনি। এমন বিচিত্র সমাপতন সত্যিই বিরল! অথচ দুই পরিচালক কেউ কাউকে চিনতেন না, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা। 'শেষের গল্প' এই মুহূর্তে সেন্সর সার্টিফিকেটের জন্য় অপেক্ষা করছে। ছবির সম্ভাব্য় মুক্তির তারিখ ২১ জুন, জানালেন জিৎ চক্রবর্তী। ২০১৯ ফেব্রুয়ারি মাসে ইমপা-তে ছবির রেজিস্ট্রেশনও করিয়েছেন তিনি। ওদিকে 'অবশেষের গল্প'-র প্রথম স্ক্রিনিং হতে চলেছে আগামী ৩০ মে।
'অবশেষের গল্প' ছবিতে বিদীপ্তা-অঞ্জনা। ছবি সৌজন্য়: অ্যাডভার্ব
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জিৎ চক্রবর্তী জানালেন, '''শেষের কবিতা-র পরের গল্প নিয়ে বহু পাঠকেরই কৌতূহল রয়েছে। এই বিষয়ভাবনা নিয়ে যত বেশি কাজ হয়, ততই ভালো। কিন্তু গত বছর যখন এই বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন ওই শর্ট ফিল্মটি সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি। সম্প্রতি সংবাদমাধ্য়মে যখন 'অবশেষের গল্প' নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আমি সত্য়িই অবাক হয়ে যাই। শর্ট ফিল্মটি দেখার খুবই আগ্রহ আমার। আগামী ৩০ মে-র স্ক্রিনিংয়ে যদি আমন্ত্রণ পাই তবে খুবই আনন্দিত হব।''
'অবশেষের গল্প' শ্যুটিংয়ের ফাঁকে পরিচালক অনঞ্জন মজুমদার। ছবি সৌজন্য: অ্য়াডভার্ব
আরও পড়ুন: আগামী বছরেই শুরু হবে ‘স্ত্রী’ পার্ট টু
অনঞ্জন জানিয়েছেন যে তিনি শেষের গল্প সম্পর্কে জানতে পেরেছেন গত এক দু'দিনের মধ্য়ে। তিনিও খুবই অবাক হয়েছেন গোটা বিষয়টিতে-- ''জিতের সঙ্গে আমার কোনও পরিচয় নেই। আমি একজন আইটি প্রফেশনাল ও স্বাধীন চলচ্চিত্রকার। এর আগে দু'টি জিরো বাজেট শর্ট বানিয়েছিলাম। এই প্রথম একটি নন-জিরো বাজেটের ছবি তৈরি হল। আমি ও আমার স্ত্রী শ্রেয়া রায়চৌধুরী, আমরা দুজনে একসঙ্গেই কাজটা করি ফিল্ম মাধ্য়মের প্রতি ভালবাসা থেকে। আমার মনে হয় দুটো ছবির স্টোরি ট্রিটমেন্ট যেহেতু আলাদা, তাই দু'টির মধ্য়ে কোনও মিল থাকবে না। ৩০ মে-র স্ক্রিনিংয়ে জিতের আমন্ত্রণ রইল আর 'শেষের গল্প' মুক্তি পেলে আমি নিজেও ছবিটি দেখতে খুবই আগ্রহী।''