Kaalidhar Laapata Movie: মধুমিতা পরিচালিত এবং অভিষেক বচ্চন অভিনীত 'কালিধর লাপাতা' হল তামিল ছবি 'কেডি এ কারুপ্পু দুরাই'-এর হিন্দি রিমেক। মূল কাহিনী অক্ষুণ্ণ থাকলেও, হিন্দি সংস্করণের নিজস্বতা রয়েছে। একজন মানুষ যিনি সব কিছু ভুলে যান তাঁর সঙ্গে এক নিষ্পাপ প্রাণবন্ত শিশুর সম্পর্কের হৃদয়গ্রাহী মর্মস্পর্ষী মুহূর্তই চিত্রায়িত হয়েছে 'কালীধর লাপাতা'-এ। কিছু জায়গায় চিত্রনাট্য দুর্বল, দৃশ্যে আবেগের গভীরতার অভাব রয়েছে যা দর্শকের মনোনিবশ ভঙ্গ করতে পারে। তবে এই ত্রুটিগুলি থাকা সত্ত্বেও, 'কালীধর লাপাতা' তার সৎ এবং প্রভাবশালী অভিনয়ের জন্য দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারবে।
গল্পটি শুরু হয় কালিধর (অভিষেক বচ্চন অভিনীত) দিয়ে। একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি যিনি স্মৃতিশক্তি হারানোর সঙ্গে লড়াই করছেন। চিকিৎসার খরচ আকাশছোঁয়া সেটা বুঝেই ভাই-বোনেরা তাকে ত্যাগ করার পরিকল্পনা করে। কুম্ভমেলায় তাকে ছেড়ে চলে আসার ছক বানায় কালীধরের ভাই-বোনেরা। টের পেতেই কালিধর ওদের থেকে পালিয়ে যায়। পরিবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় নিজের জন্য প্রথম একটি আশ্রয়ের সন্ধান পান কালিধর।
কালিধর রাত্রিযাপন করে গ্রামের একটি মন্দিরে। যেখানে তার দেখা হয় আট বছর বয়সী অনাথ বাল্লুর সঙ্গে। বয়সের বিস্তর ফারাক সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বল্লু প্রতিটি মুহূর্তে কালিধরকে বিরক্ত করার চেষ্টা করে। দুজনের জীবনই একই জায়গায় এনে তাদের দাঁড় করিয়েছে। দুজনেরই পরিবার বলতে কেউ নেই। তাই একে অপরের কাছ থেকে সান্ত্বনা পায়। বল্লু কালিধরকে 'কেডি' নামে সম্বোধন করে। ছোট্ট ছেলেটির কাছে কালিধর কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা সত্যিই এই ছবিতে অনুভব করা যায়।
এমন এক মর্মস্পর্শী মুহূর্ত যেখানে কেডির চিকিৎসারত ডাক্তার বল্লুকে জিজ্ঞাসা করেন, "ও তোমার কাছে কী?" আর বল্লু কেবল উত্তর দেয় সবকিছু!! মধ্যপ্রদেশে শ্যুট করা হয়েছে এই ছবিটি। সেট এবং লোকেশনগুলি যতটা সম্ভব বাস্তব, কারণ এগুলি গল্পে সত্যতা এবং গ্রাম্য আকর্ষণ যোগ করেছে। প্রথমদিকে, ছবির গতি কিছুটা ধীর মনে হয় ঠিকই কিন্তু কেডি এবং বল্লু একজোট হতেই গল্পে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়। কেডি এবং বল্লু সম্পর্কের রসায়ন এই সিনেমার ইউএসপি। কারও অভিনয়ে কোনও অতিরঞ্জন নেই যা চরিত্রগুলোকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে।
আরও পড়ুন সমপ্রেমের গল্প 'কলঙ্কিনী রাধা' শুভশ্রী! ঋতুস্মরণে ইন্দ্রদীপের অনন্য সৃষ্টি 'গৃহপ্রবেশ'
তবে, ছবিটিরও কিছু ত্রুটি আছে। জিশান আইয়ুবের প্রতিভা নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। আবার এমন কিছু দৃশ্য আছে সেগুলো হৃদয়বিদারক কিন্তু, চোখে জল আসার আগেই যেন তাল কেটেছে। রেলস্টেশনে কেডি আর বল্লুর মধ্যে একটি হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যে অনায়াসেই দেখানো যেত কিন্তু, পর্দায় তা দেখা গেল না। ছবিটিতে কিছু অসঙ্গতিও রয়েছে।
কালিধরকে স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং হ্যালুসিনেশনের মচো গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন এমন এক চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় করানো হল। কিন্তু, সুস্থ হয়ে বল্লুর জন্য জীবিকা নির্বাহ শুরু করার আগের মুহূর্তটা খুব বেশি বিশ্লেষণ করল না। তবুও, 'কালিধর লাপাতা' আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনে সবসময় আনন্দ থাকা প্রয়োজন, এমনকি মারাত্মক কঠিন সময়েও। বন্ধুত্ব কীভাবে বয়সের বাধা অতিক্রম করে বেদনার্ত হৃদয়কে নিরাময় করতে পারে সেই গল্পই দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।
আরও পড়ুন অতীতের মায়াজালে জড়ানো এক জীবনের গল্প, মা-মেয়ের চিরন্তন সম্পর্কের দলিল পুরাতন