Bengali Movie Grihapravesh: সমপ্রেমের গল্প 'কলঙ্কিনী রাধা' শুভশ্রী! ঋতুস্মরণে ইন্দ্রদীপের অনন্য সৃষ্টি 'গৃহপ্রবেশ'

Subhashree Ganguly Jeetu Kamal: কিংবদন্তী শিল্পী ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ভাবনায় মুক্তি পেয়েছে গৃহপ্রবেশ। প্রেমের গল্পে বিরহ ঠিক কতখানি প্রয়োজন সেই পাল্লাটাকে সুক্ষ দৃষ্টিতে মেপেছেন পরিচালক।

Subhashree Ganguly Jeetu Kamal: কিংবদন্তী শিল্পী ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ভাবনায় মুক্তি পেয়েছে গৃহপ্রবেশ। প্রেমের গল্পে বিরহ ঠিক কতখানি প্রয়োজন সেই পাল্লাটাকে সুক্ষ দৃষ্টিতে মেপেছেন পরিচালক।

author-image
Kasturi Kundu
New Update
ইন্দ্রদীপের অনন্য সৃষ্টি 'গৃহপ্রবেশ'

ইন্দ্রদীপের অনন্য সৃষ্টি 'গৃহপ্রবেশ'

Grihapravesh Review: এলোমেলো দমকা হাওয়া আর মুশলধারায় বৃষ্টি। বেশ কয়েকদিন ধরেই তিলোত্তমা এই রূপ কারও বিরক্তির কারণ তো কারও মন চাইছে প্রেমের একটু উষ্ণ ছোঁয়া পেতে। বিদেশ বিভুঁই থেকে কলকাতায় আসা ক্ষণিকের অতিথিদের মনে হয় এই শহরটা খুব সুন্দর। মা দুর্গার আগমনে মহানগরীর সাজসাজ রবের বাইরেও কলকাতাকে ঘুরে দেখার বাসনা জাগে ভিনদেশের মানুষদের। কিন্তু, খুব অদ্ভুতভাবেই কলকাতার সঙ্গে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে থাকা মানুষটার যন্ত্রণার কারণ এই কলকাতা! তবুও সম্পর্কের বেড়াজালে আটকা পড়ে জীবন যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেই হয় দিন গুজরান। ঠিক এমন সময়ই যদি মনের ভিতর খেলে যায় ভালবাসার হিমেল হাওয়া...!! মেঘ যদি বৃষ্টি হয়ে বেরঙিন জীবনটাকে তুলির টানে রঙিন করে দেয় তাহলে যেন মনে হয় স্বপ্নের মায়াজালে কোনও এক রূপকথার গল্প বোনা হল। ঠিক যেমনভাবে ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করে 'গৃহপ্রবেশ' নামকরণের মাধ্যমে এক অন্য প্রেমের উপাখ্যান বুনেছেন পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। যেখানে রয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন, চোখে দেখা স্বপ্ন বিজয়া দশমীতে মা দুর্গার সঙ্গেই বিসর্জন হয়ে যাওয়ার গল্প। 

Advertisment

কথায় বলে মানুষ নাকি এক জীবনে সবটা পায় না। কিন্তু, ভগবান নাকি এই দুনিয়ায় কাউকেই সুখ থেকে বঞ্চিত করেন না। গৃহপ্রবেশের শেষ দৃশ্য কিন্তু, সেই কথাই বলে। জীবনের প্রতিটি বাঁকে লড়াইয়ের পর এক ক্লান্ত পথিক যখন তার হারিয়ে যাওয়া প্রেম ফিরে পায় সেটাই বোধহয় নিয়তির পরিহাস! শেষ থেকেই তো নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখা শুরু! গৃহপ্রবেশের হৃদয়স্পর্শী শেষ দৃশ্যটা ঠিক সেই রকমই। তাই তো ছবিটা কেমন হয়েছে বলার জন্য শেষ থেকেই শুরুটা করতে হবে। তিতলি (শুভশ্রী) গৃহপ্রবেশের 'প্রাণ' শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। জন্ম 'নিষ্ফলা' রবিবারে। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে হোস্টেলেই তার বেড়ে ওঠা। জীবনে ভালবাসা এলেও সেই প্রেম টেকেনি। তবুও প্রেম খুঁজেছিল তিতলি। লাল বেনারসি, চন্দনের সাজে এক বনেদি বাড়ির নববধূ হিসাবে হল তিতলির গৃহপ্রবেশ। কিন্তু, নবমীর নিশিতে যখন স্বামীর (চরিত্রের নাম সাওন) উষ্ণতা পেতে চায় তখন সাওনের মন পড়ে আছে 'পার্টনার'-এর কাছে। আর সেই পার্টনার মেঘদূতের ভূমিকায় জীতু কমল। 

হ্যাঁ, ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের বোনা 'সমপ্রেম' গল্পের হিরো সাওন আর মেঘদূত। আর সেই সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি তিতলি। সমপ্রেমের টানে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে ফেলে মেঘদূতের কাছে ছুটে যায় সাওন। আর স্বামীর অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকা তিতলির জীবনের রং ক্রমশ ফিকে হতে থাকে। তবুও শ্বশুর-শাশুড়ির আদরের বৌমা তাদের পরম যত্নে আগলে রেখেছে। এইভাবে যখন রাত যায় দিন আসে ঠিক তখনই আকাশ জুড়ে কালো মেঘ আর সেই সঙ্গে শুরু হল তিতলির জীবনের না পাওয়ার গল্পের আরও এক নতুন অধ্যায়। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের আগেই তিতলিদের বাড়ির গেস্টহাউজে অতিথি হিসেবে আসে মেঘদূত। তার প্রথম চাহনি, প্রথম স্পর্শে তিতলির সারা শরীরে শিহরণ খেলে যায়। কিন্তু, সে তো জানত না, ছাদের উপর ঘুড়ি ওড়ানো শেখানোর সময় মেঘের সেই ছোঁয়া এক মুহূর্তে ঘুড়ির মতোই 'ভোকাট্টা' হয়ে যাবে। 

আরও পড়ুন সত্যজিৎ রায়ের স্বপ্ন ছিল বাংলার আকাশেও UFO উড়ুক, সেটাই পূরণ করার চেষ্টা করেছি: সৌকর্য ঘোষাল

Advertisment

তিতলির মনে যখন প্রেমের নতুন বসন্ত তখন তাকে পরিবারের কেউ সঙ্গ দেয়নি। বরং শ্বশুরমশাই (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) বলেছে দুজনের ঘুড়ি ওড়ানোটা দৃষ্টিকটূ। তিতলি মনের যন্ত্রণা চেপে রাখতে পারে কিন্তু, কারও অন্যাহ্য কথা শুনতে নারাজ। মিষ্টি ভাষায় তিতলির ক্ষুরধার জবাব, বিয়ের সাতদিনের মধ্যে যখন তার স্বামী একা রখে চলে যায় সেটা নিয়ে তো কেউ কথা বলে না। শান্ত-স্নিগ্ধ স্বভাবের মাঝেও মুখচোরা তিতলি ভীষণই মার্জিত। সেই সময় মেঘদূতের প্রেমে তিতলির মনে একটাই সুর, 'আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী'। প্রেমের পদাবলিতে ভালবাসার অপেক্ষায় প্রহর গোনা শুভশ্রী যেন যোগিনী রাধা! 

কিন্তু, প্রেমে বিরহ নিয়ে তিতলিকে দেখতে মোটেই ভাল লাগে না তার বান্ধবীর। যে চরিত্রে ফাটাফাটি অভিনয় করেছেন স্নেহা সেনগুপ্ত। এইরকম একটা বন্ধু জীবনে থাকা যে সত্যিই জরুরি, প্রেমের পদাবলিতে বন্ধুত্বকেও প্রাধান্য দিয়েছেন পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। বান্ধবীর ইশারায় মেঘকে মনের কথা বলতে তিতলি রাতের অন্ধকারে নিজের ঘরে ডাকে। যে মুহূর্তে দর্শকের মনে হবে এবার সিনেমার পর্দা জুড়ে ভালবাসার ঢেউ উঠবে, ঠিক তখনই সেখানে কান্নার রোল! সিনেমা শেষ...!! কিন্তু, শেষ হয়েও যে হইল না শেষ, কারণ যোগিনী রাধার জীবনের অন্ধকার দূর করে নতুন ভোরের সন্ধান দিতে ফিরে এল হারিয়ে যাওয়া প্রথম প্রেম। কয়েক সেকণ্ডের সেই দৃশ্যে আবির চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতি গৃহপ্রবেশের সুন্দর সমাপতন। লাস্ট বাট নট ইন লিস্ট, সমপ্রেমের গল্পে 'খলনায়ক' বিল্লু (রুদ্রনীল) না থাকলে হয়তো সমপ্রেমের গল্পের পাশাপাশি একটা পরিবারের গল্প অসমাপ্ত রয়ে যেত। 

আরও পড়ুন 'শিক্ষা-রুচিবোধ আমাকে আটকেছে', তথাগতকে অশিক্ষিত অপবাদ প্রেমেন্দুর, 'রাস' বিতর্কে চাঁছাছোলা পরিচালক

Grihapravesh Bengali Cinema