Trinayni heroine Shruti Das interview: কাটোয়া থেকে কলকাতায় এসেছিলেন পড়াশোনা করতে। পাশাপাশি মডেলিং ও নাচ নিয়ে এগোনোর ইচ্ছে ছিল। জীবনের প্রথম অডিশনেই পেয়ে গেলেন নায়িকার চরিত্র। এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিকের অন্যতম, 'ত্রিনয়নী'-র মুখ্য চরিত্রের অভিনেত্রী শ্রুতি দাসের একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এল তাঁর ছোট শহরের কথা, পরিবারের কথা।
তোমার অভিনয়ের ভাবনাটা কবে থেকে?
নাচ শিখি পাঁচ বছর বয়স থেকে। যখন সবাই আমার এক্সপ্রেশনের খুব প্রশংসা করতে শুরু করল, তখন থেকেই মনে হল আমি থিয়েটারটা করি। আমি যখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি, তখন থেকেই মডেলিং ও থিয়েটার করা শুরু। সেটা ২০১৪। আমার বাড়ি কাটোয়াতে। ওখানেই প্রথম থিয়েটারে কাজ। আর নাচটা ছিল পাশাপাশি, আমার নিজের নাচের স্কুলও রয়েছে। এর পরে ২০১৫ তে কলকাতার কলেজে ভর্তি হলাম। পিজি-তে থাকতাম আর পাশাপাশি মডেলিংও করতাম।
আরও পড়ুন: আগামী বছর বিয়ে! সুদীপ্তা জানালেন কে হবেন তাঁর জীবনসঙ্গী
অডিশন দিতে শুরু করলে কবে থেকে?
আমার প্রথম অডিশনই 'ত্রিনয়নী'-র জন্য। তার আগে কখনও অডিশন দিইনি। আর যোগাযোগটা হয়েছিল অভিনেতা কৌশিক করের মাধ্যমে। সিরিয়ালের জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীর খোঁজ চলছিল, সেই পোস্টে আমাকে মেনশন করেন কৌশিকদা। আমি তখন কিছুই জানি না পর্দায় কীভাবে অভিনয় করতে হয়। কারণ বরাবর স্টেজ পারফরম্যান্সই করে এসেছি। তাও ভাবলাম একটা চেষ্টা করে দেখি। কীভাবে অডিশন দিতে হয় তাও জানতাম না। সাহানাদির প্রথম দিন আমাকে দেখে ভাল লাগেনি। আমাকে চলে যেতে বলেন। পরের দিন আমাকে ঘুম থেকে তুলে বলেন শাড়ি পরে, চুলটা খুলে মোবাইলে ভিডিও করে পাঠাতে। সেই ভিডিওটা দেখেই আমাকে বলেন চলে এসো। তার পরে আমার লুক টেস্ট হয় আর আমি সিলেক্ট হয়ে যাই।
তোমার এই সাফল্যে বাড়ির সবাই খুব খুশি তো?
ভীষণ খুশি। প্রচণ্ড স্ট্রাগলিং ফ্যামিলি তো। আর আমাদের কাটোয়া থেকে এই প্রথম কেউ সিরিয়ালের মেন লিড চরিত্র করল। ওখানকার সিনিয়র সিটিজেনরাই আমাকে বলেছেন যে আগে কেউ নায়িকার চরিত্রে আসেনি টিভিতে। মডেলিং নিয়েও আমিই প্রথম বেরিয়েছিলাম। আমার পরিবার একেবারেই নিম্ন মধ্যবিত্ত। বাবা একটা দোকানে কাজ করেন। ওরকম একটা ফ্যামিলি থেকে বেরিয়ে মডেলিং করতে আসা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমি লাকি যে আমার বাবা-মা সেই অনুমতিটা দিয়েছেন। ২০১৪ সালে যখন মডেলিং শুরু করি, বাবা-মাকে নিয়ে যেতাম প্রথম প্রথম। সারাদিন বসে থাকত। তার পরে যখন দেখল যে ব্যাপারটা ভরসাযোগ্য, আমি কাজ শেষ করে ঠিক বাড়ি চলে আসছি, তখন আর সঙ্গে যেত না।
আর যখন বুঝতে পারল যে আমার নিজের ওপর কনফিডেন্স রয়েছে তখন কলকাতার কলেজে ভর্তি করে দিল। আমি কলকাতায় এসে আরও ভাল করে নাচ শিখলাম। কাটোয়াতে থাকতে প্রথম শুরু করেছিলাম রাবীন্দ্রিক-মণিপুরী দিয়ে। আমার প্রথম নৃত্যগুরু সুলক্ষণা চট্টোপাধ্যায়। ওঁর ইন্সটিটিউট 'তালিম'-এই প্রথম নাচ শেখা। কলকাতায় এসে ব্রহ্মকমল ইনস্টিটিউটে সাবর্ণিক দে-র কাছে ওড়িশি আর ক্রিয়েটিভ ডান্স শিখতে শুরু করি। আর কাটোয়ায় আমার বাড়িতে নাচ শেখাতাম, বেসিক মণিপুরী ও রাবীন্দ্রিক। পরে আমার ছাত্রীদের নিয়েই স্বস্তিক ডান্স গ্রুপ তৈরি করি। এখন শেখানোটা বন্ধ আছে। এছাড়া আমার একটা এনজিও ছিল, তার কাজও বন্ধ রয়েছে।
কীসের এনজিও সেটা?
একটা অনাথ আশ্রম ও প্রতিবন্ধীদের স্কুল রয়েছে কাটোয়াতে যার সঙ্গে আমি যুক্ত। কিন্তু আমি নিজে এখন আর কাজটা করতে পারছি না এখানে কাজের চাপের জন্য। যদিও আমি মেম্বার এখনও।
আরও পড়ুন: ভূতের সিরিজে অভিনয় করে ভয় বেড়ে গেল প্রিয়মের
তুমি যত বেশি সাফল্য পাবে, তত বেশি করে সাহায্য করতে পারবে
অবশ্যই। আমার নাচের নাচের স্কুলের ফিজ থেকে যে খুব বেশি কিছু আয় হতো তা নয়। ওখানে খুব বেশি ফিজ দিয়ে নাচ শেখানোর পরিস্থিতি নেই। আমরা তাই একটা গ্রুপ তৈরি করে শো করতাম মাঝেমধ্যে। কিন্তু তখন যা পরিস্থিতি ছিল, সঞ্চয় হতো না। তাই টাকা-পয়সা সেভাবে কোনওদিনই দিতে পারিনি ওই এনজিওতে, বাধ্য হয়ে আমার নিজের পুরনো জামা-কাপড়, জিনিসপত্র দিয়েছি। সেটা আমার খুব খারাপ লাগত কিন্তু উপায় ছিল না।
এই প্রথম টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছ, কেমন লাগছে?
মার্চ মাসে একটা মেজর বাইক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। আমার বাঁ পা খুব বড়সড়ভাবে ইনজিওরড হয়ে যায়। তার জন্য আমার নাচ বন্ধ অনেকদিন। আমার চোখে প্রবলেম রয়েছে। আমার দৌড়নো বারণ। কিন্তু প্রোমো থেকেই সবাই দেখেছেন দৌড়নো ছিল। দ্বিতীয় প্রোমোর সময়ে ভোর পাঁচটায় উঠে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছিল। আসলে ক্যামেরার সামনে এক ধরনের জেদ কাজ করে। মনে হয় আমার জন্য যেন আর পাঁচটা মানুষের কাজ নষ্ট না হয়। তখন আর শারীরিক কষ্টটা মনে থাকে না। আর এই টিমটা খুব ভাল। সাহানাদি তো রয়েছেন মাথার উপরে, আর ভীষণ সাপোর্ট করেন আমাদের ডিরেক্টর স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার। নিজের সন্তানের মতোই দেখেন সবাই। কেউ বকলেও সেটা গায়ে লাগে না।