/indian-express-bangla/media/media_files/2025/06/23/mrigaya-the-hunt-2025-06-23-18-30-41.jpg)
রাগ আছে, শুধু বর্হিপ্রকাশের ধরণটা বদলে ফেলেছি: ঋত্বিক
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: এই তো...আপাতত ভালই আছি।
প্রশ্ন: আপনার আগামী সিনেমা মৃগয়া। এই নামটা শুনলেই মিঠুন চক্রবর্তীর কথা মনে পড়ে। ওঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। মানুষ নাকি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, কাকে এগিয়ে রাখবেন?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে আমি অনেক বছর চিনি। বলা ভাল ছোটবেলা থেকে চিনি। একসঙ্গে কাজ করেছি ঠিকই, তবে মানুষটাকে তো পুরোপুরি চিনে উঠতে পারিনি। তাই অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকেই আমি এগিয়ে রাখব।
প্রশ্ন: পর্দায় কখনও মা-বাবার সঙ্গে রূঢ় আচরণ আবার কখনও পাকা রাঁধুনি। বাস্তবে ঋত্বিক চক্রবর্তী কেমন?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: নিজের কথা নিজে বলা একটু মুশকিল। যাঁদের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতজীবনে মেলামেশা করি তাঁরা আমার সম্পর্কে সার্টিফিকেট দিতে পারবে। তবে আমার অভিনীত চরিত্রগুলোর সঙ্গে অধিকাংশ সময়ই দেখেছি বাস্তবে আমার মিল খুবই কম। কখনও আবার আল্পবিস্তর সাদৃশ্য থেকেও যায়। পর্দায় অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে খুব সামান্য পরিমানেই নিজেকে খুঁজে পাই। নিজের সম্বন্ধে যেটা বলতে পারি, আমি প্রচণ্ড ঘরকুনো একজন মানুষ।
প্রশ্ন: দীর্ঘ অভিনয় কেরিয়ারে এমন কোনও চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে আছে যেটার জন্য বহুদিন অপেক্ষা করছেন?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: হ্যাঁ, আমি এমন কিছু চরিত্রে কাজ করতে চাই যেটার সঙ্গে আমার আগে কখনও পরিচয় হয়নি। সেই বিষয়টা আমার কাছে সম্পূর্ণ অজানা। সেইরকম একটা চরিত্রের খোঁজে আমি থাকি। কিন্তু, সবসময় হয়ত সেটা সম্ভব হয় না। কিছু চেনা জগৎ-এর মানুষের কথাই বেশিরভাগ ক্ষোত্রে বলা হয়। কিন্তু, যে মানুষটা, জগৎটা সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা সেইরকম একটা বিষয় বা চরিত্রে সুযোগের অপেক্ষা আছি।
প্রশ্ন: সিনেমায় একটা সংলাপ আছে, মটকা গরম হলে পুরো এলাকা ঠান্ডা হয়ে যায়, সংলাপটা অবশ্য আপনার নয়, কিন্তু ব্যক্তিগতজীবনে এমন কোনও অভিজ্ঞতা রয়েছে?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: হঠাৎ করে অনেক সময়ই আমি রেগে যাই। রাগের বর্হিপ্রকাশ দিয়ে তো মানুষকে চেনা যায়। রেগে গিয়ে সেই মানুষটা কী কী করল সেই প্রেক্ষিতে বিচার করা হয় মানুষটা কেমন। আগে আমি সত্যিই খবু রেগে যেতাম, তার বর্হিপ্রকাশও হয়েছে বেশ কয়েকবার। কাছের মানুষজনের সঙ্গে বা কর্মক্ষেত্রে অনেকসময় চিৎকার করে ফেলতাম। সেগুলো কমিয়ে ফেলাই শ্রেয়। তাই এখন নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেলেছি। রাগ আছে, শুধু বর্হিপ্রকাশের ধরণটা বদলে ফেলেছি (হাসি)।
প্রশ্ন: একজন পুলিশের অফিসারের ভূমিকায় ঋত্বিক চক্রবর্তীর মুখে 'গালি', ব্যক্তিগত ইমেজকে প্রভাবিত করে? দর্শককে বিনোদন দিতে এই ধরনের ভাষার ব্যবহার অপরিহার্য?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: আমার মনে হয় না দর্শককে বিনোদন দিতে বা হলমুখী করার হাতিয়ার হিসেবে 'গালি' অপরিহার্য। তবে কখনও কখনও একটা চরিত্র, তার সামাজিক অবস্থান বোঝাতে কিছু শব্দের ব্যবহার সত্যিই প্রয়োজন। 'গালি' হিসেবে যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয় সেটাও তো একটা ভাষা, আমাদের সমাজেরই অংশ। সেই ক্ষেত্রে ছবিতে ব্যবহার হতেই পারে। দর্শককে আলাদা করে 'গালি' উপভোগ করতে সিনেমাহলে আসতে হবে না। আর পর্দায় আমি একজন অভিনেতা, চরিত্রের প্রয়োজনে যা করছি সেটার সঙ্গে রিয়েল লাইফের ঋত্বিক চক্রবর্তীর ইমেজকে তুলনা করা অযৌক্তিক।
প্রশ্ন: ট্রেলারে একটা অংশে হালকা কোমর দুলিয়ে নাচার মতো বিরল দৃশ্য, দর্শক এবার অন্য ঋত্বিক চক্রবর্তীকে পর্দায় দেখবে?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: আমরা কম-বেশি প্রত্যেকেই নেচেছি। তবে নাচটা সম্পূর্ণ চরিত্রের প্রয়োজনে, একইসঙ্গে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দৃশ্যও বটে। আমরা প্রচণ্ড চিন্তার মধ্যে একটা কাজ করছি। সেখানে একটা গ্রামীন মেলা চলছে যেখানে সেই চটুল নাচ হচ্ছে। আমরা আমাদের কাজ করছি আর ফাঁক তালে একটু কোমর দোলাচ্ছি।
প্রশ্ন: একটা দৃশ্যে আপনি বলছেন, 'বাংলায় বল'। ছবির মাধ্যমে বাংলা ভাষার গুরুত্বকে প্রাধান্য দেওয়া?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: না, বিষয়টা ঠিক সেটা নয়। পুরো সিনেমাটাই তো বাংলায়। আসলে ওটা সম্পূর্ণ মজার ছলে। আমি যাকে বলছি বাংলায় বল সে বাঙালিদের গালিগালাজ করছে। তখন সেখানে আমরা চারজন বাঙালি রয়েছি। কেন অন্য ভাষায় গালি শুনব (হাসি)? তাই ওখানে ওই সংলাপটা ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রশ্ন: পুলিশ অফিসার হিসেবে পর্দায় আমরা ঋত্বিক চক্রবর্তীকে তদন্ত করতে দেখব। ব্যক্তিগত জীবনে এমন কোনও ঘটনা আছে যেটার বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: বিশ্লেষণটা গোয়োন্দারাই মূলত করে থাকে। কিন্তু, মানুষও অনেক সময় জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা নিয়ে চিন্তিত থাকে, বোঝার চেষ্টা করে কেন হল। আমার তো মনে হয় এই অভিজ্ঞতা কম-বেশি অনেকেরই আছে। আমিও করেছি।
প্রশ্ন: মৃগয়া-র স্ক্রিপ্টে কাজ করার বিশেষ কোনও কারণ...
ঋত্বিক চক্রবর্তী: আমি যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করি বা আমার করা চরিত্রগুলো একটি সিনেমায় যা যা করে এটা সম্পূর্ণ তার থেকে আলাদা। পুলিশের চরিত্র, কখনও সে খুব রাগী, কখনও আবার মজার মানুষ, হাতও চলে। এখানে আমি একজন ডেয়ার ডেভিল পুলিশ অফিসার, একটা টিমও সে লিড করছে। সব মিলিয়ে আমি এই ধরনের চরিত্রে আগে কখনও কাজ করিনি। আমি যে এখানে একটু নেচেছি, সেখানেও দর্শক নতুন ঋত্বিককে দেখবে। গল্পটা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। দেবাশিষ দত্ত, যিনি পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। সিনেমার পর্দায় যে ঘটনার তদন্ত আমরা করব সেটা বাস্তবে তিনি করেছেন। তাই গল্পের একটা সত্যতা আছে। একইসঙ্গে দর্শকের সত্য ঘটনা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত মানুষদের প্রসঙ্গে জানার প্রবল আগ্রহ থাকে। পুলিশের চোখ দিয়ে অপরাধের জগৎটাকে চেনার অভিজ্ঞতাও আমার কাছে নতুন। সবমিলিয়ে মৃগয়া থেকে আমি একটা নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করার সুযোগ পেয়েছি। সেই জন্যই এই ছবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।
প্রশ্ন: পুলিশের বেশ কিছু কাজে রুষ্ঠ হয় নাগরিক সমাজ। এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে এমন কোনও উপলব্ধি হয়েছে?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: আসলে আমরা যখন কোনও একটা চরিত্রে কাজ করি তখন সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করার মতো সুযোগ থাকে না। আজ আমি পুলিশের চরিত্রে, আগামীতে যদি খুনির চরিত্রে অভিনয় করি তাহলে কিন্তু, আমার পক্ষে একজন প্রকৃত খুনির সাইকোলজি বোঝা সম্ভব হবে না। পুলিশের কাজেও সফলতা-অসফলতা থাকে। যার জন্য মানুষ কখনও রেগে যায় আবার অনেক সময় পুলিশের কাজকে স্যালুটও করা হয়। সাধারণ মানুষ তো পুলিশের উপর নির্ভরশীল। সিস্টেমের রদবদল তো সম্ভব নয়। কখনও নিজেদের ভাল লাগা জানাব কখনও আবার খারাপ লাগা।
প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার পোস্টে অনেকেই আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে। ট্রোল নিয়ে কতটা চিন্তিত?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আমি একদমই ভাবি না। ওগুলো আমার কাছে একদম গুরুত্বহীন। ওটার স্থায়িত্ব তিন দিন। এই মহা পৃথিবীতে যে জিনিসের স্থায়িত্বই ক্ষণিকের তার গুরুত্ব কতটা সেটা তো না বললেও বোঝা যায়।
প্রশ্ন: বাংলা সিনেমার বক্স অফিস লড়াই আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ঋত্বিক চক্রবর্তী: একটা সিনেমা যখন মুক্তি পায় তখন অবশ্যই চাইব আমার ছবি দর্শক হলে এসে দেখুক। অন্য ছবির সঙ্গে জড়িত মানুষরাও একইভাবে সেটাই চাইবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকবেই। একসঙ্গে অনেক ছবি থাকলে কখনও আমার ছবির দর্শক কম হতেই পারে। দর্শক তো অবশ্যই তাঁর পছন্দের ছবিই দেখবে।
আরও পড়ুন সত্যজিৎ রায়ের স্বপ্ন ছিল বাংলার আকাশেও UFO উড়ুক, সেটাই পূরণ করার চেষ্টা করেছি: সৌকর্য ঘোষাল