১৯৮০ সালের ছবি ‘দাদার কীর্তি’-তে যদি অভিনেতার জন্ম হয়ে থাকে তবে ২০০০ সালে তাঁর পুনর্জন্ম হয় বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-র ছবি ‘উত্তরা’-তে। তার ঠিক কয়েক বছর আগে, নব্বই দশকের শেষে যে বাণিজ্যিক ছবিগুলিতে তাপস পালকে দেখা গিয়েছিল, সেগুলি একেবারেই উল্লেখযোগ্য নয়। অন্তত সিনেমার ইতিহাসে সেই ছবিগুলি নিতান্তই তাৎপর্যহীন।
আরও পড়ুন: প্রয়াত তাপস পালের কিছু বিরল ছবির অ্যালবাম
‘উত্তরা’-তে শুধু বাংলা নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্র জগৎ দেখল এক অভিনেতাকে। ছবিটি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং স্পেশাল ডিরেক্টর্স অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। আশির দশকের টালিগঞ্জের রোমান্টিক নায়ককে পরিচালক দিয়েছিলেন এক কুস্তিগিরের চরিত্র। ”টানা তিন মাস ও আখড়ায় গিয়ে অভ্যাস করেছিল। হাত ভেঙে গিয়েছিল কিন্তু হাল ছাড়েনি। ওর অভিনয় দেখে কেউ বলবে না যে ও জাত-কুস্তিগির নয়”, বলেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।

পরিচালকের আরও দুটি ছবি ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ ও ‘জানালা’-তে নিজের অভিনয় ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ও একজন অসামান্য অভিনেতা, আমি মনে করি ওর তুল্য অভিনেতা ওর সময়ে টালিগঞ্জে আর কেউ ছিল না”, স্মৃতিচারণা করেন পরিচালক, ”যখন ড্রাইভারের চরিত্র করেছে তখন মনে হয়েছে ও এত বছর ধরে শুধু ড্রাইভারই ছিল। ‘জানালা’-তে চোরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল। চোরের সংলাপ যখন বলত, মনে হত সত্যিকারের অপরাধীই বুঝি।”
আরও পড়ুন: প্রয়াত তাপস পাল, স্মৃতিচারণায় মুখ্যমন্ত্রী থেকে টলিউড
তবে কি অভিনেতা তাপস পাল বাংলা ছবিতে ঠিকমতো ব্যবহৃত হননি? কেন তরুণ মজুমদারের আবিষ্কার এই অসামান্য অভিনেতা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ছাড়া পরবর্তী সময়ের আর কোনও অন্যধারার পরিচালকের ছবিতে কাজ পেলেন না?
”আমিও তাই মনে করি যে বাংলা ছবিতে তাপস পাল অনেকটাই অব্যবহৃত। আসলে কোন অভিনেতাকে নিয়ে কে কাজ করবেন সেটা পুরোপুরি পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। অন্য পরিচালকদের কথা তো আমি বলতে পারব না”, বলেন বুদ্ধদেব, ”কিন্তু আমার খুব প্রিয় অভিনেতা ছিল। প্রত্যেকটা চরিত্রের জন্য নিজেকে যেভাবে তৈরি করত… আর খুব সহজ-সরল মানুষ ছিল। একটা ঘটনার কথা বলি। ‘উত্তরা’ যখন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে যায়, তখন তাপস আমার সঙ্গে সেখানে গিয়েছিল। ‘উত্তরা’ পুরস্কার পেল যখন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার কী নাচ, তাকে থামানো যায় না। আমাকে ডেকে একজন বললেন উনি বোধহয় আপনার ছবির অভিনেতা, ওনাকে নিয়ে আসুন। আর ওখানেও সবাই ওর অত্যন্ত প্রশংসা করেছিল। ও এরকমই ছিল। খুব আনন্দে থাকত সব সময়। অনেক কিছুই হয়তো না বুঝে, না ভেবে বলে ফেলত, কিন্তু মানুষটা সহজ ছিল।”
আরও পড়ুন: ‘শ্রীময়ী’-র জীবনে আসছে বিশেষ কোনও মানুষ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন