ছবিঃ গোত্র
পরিচালকঃ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়
অভিনয়ঃ অনসূয়া মজুমদার, নাইজেল আকারা, মানালি দে, খরাজ মুখোপাধ্যায়, অম্বরিশ
রেটিংঃ ৩/৫
ধর্ম, গোত্র, জাত-পাত এগুলো আপনি মানেন? আর যদি নাও মানেন ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা আপনার কাছে কেবল সংবিধানে বলে দেওয়া উদার মানসিকতার প্রকাশ নয় তো? 'বিরিয়ানি মনস্টার' বলে আপনার মধ্যে যে গর্ব বোধটা রয়েছে হিন্দু-মুসলমানের ফারাকটা বোধহয় কেবল ওখানে মিটে যায়। দোকানের বাইরে বেরোলেই সেই আমরা-ওরা? আপত্তি তুলবেন কি করে বলুন, মুসলমি হওয়ার অপরাধে এই, এই শহর কলকাতাতেই ঘর ভাড়া জোটেনা। তবু অন্ধ মনুষ্যত্বের বড়াই করবই। হিন্দু-মুসলমান তো অনেক বড় বিষয়, বাড়ির কাজের লোকটার আপনার ডাইনিং টেবিলে বসার অধিকার আছ? মোটা দাগের হিপোক্রেসিগুলোয় যখন মানব ধর্ম বিপন্ন তখন মুক্তিদেবীদের প্রয়োজন হয় বৈকি।
গোবিন্দধাম। আর সেখানে বাস মুক্তিদেবীর। একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকে, তাই দেশে মায়ের দেখাশোনার জন্য কেয়ারটেকার চাই।এই কাজেই এল জেলফেরত তারেক আলি। কিন্তু যে বাড়িতে রাধাগোবিন্দের বাস সেখানে ঠাঁই পাবে তো তারেক? সংলাপ ও মানবাতার ধর্মে এখানেই এগিয়ে গোত্র। এদিকে আবার পাড়ার গুণ্ডা পড়ে রয়েছে বাড়িটার পেছনে। শুধুমাত্র গোবিন্দধামের জন্যই যে প্রমোটারির অতগুলো টাকা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাড়ি বিক্রি করবেন না মুক্তিদেবী। অগত্যা কেয়ারটেকার তারেক আলির সঙ্গে হাত মেলাতে গেল সে। শেষপর্যন্ত কী হবে গোবিন্দধামের?
আরও পড়ুন, প্রসেনজিৎ থেকে গুমনামী হওয়ার নেপথ্য কাহিনি
গল্প নিজের ছন্দে এগিয়েছে কিন্তু সেই সঙ্গে ছবির প্রতিটি ছত্রে রয়েছে জাত-পাতের দলাদলিতে সামাজিক অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে যোগ্য জবাব। রাধাগোবিন্দের ভোগ দিতে পারবে না একজন মুসলিম। কিন্তু কৃষ্ণের মূর্তি যখন তারা তৈরি করেন| দুূর্গাপূজোর প্রতিমা যখন তাদের হাতেই গড়ন পায়, কই আমাদের ভক্তিতে তো বিঘ্ন আসেনা। তখন তো জানতে চাইনা প্রতিমা যে বানিয়েছে তাঁর গোত্র কি?
আরও পড়ুন, আবার বকেয়া টাকার সমস্যা! ‘রাণী রাসমণি’ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’-র শুটিং ব্যাহত
ছবিতে অনসূয়া মজুমদার অর্থাত মুক্তি দেবী অনবদ্য।মানানসই মানালি। আর মুখ্যচরিত্রে নাইজেল আকারা বেশ ভাল।প্রেমের দৃশ্য কী ভীষণ স্বাভাবিক। তবে বাড়তি সংযোগ খরাজ মুখোপাধ্যায় ও অম্বরিশ ভট্টাচার্য। অভিনয় ও কমিক সেন্স ছবির একঘেয়েপনা কাটিয়ে দেবে।ছবির চিত্রনাট্য যেমন মন ভেজাবে তেমনই অতিরিক্ত গানের ব্যবহার ধৈর্যচ্যুতিও ঘটাতে পারে।ছবির দ্বিতীয় ধাপে কিছু দৃশ্য বাদ গেলে ছবিটা আর একটু জমাটি হত।
একবারের জন্য মনে হতে পারে চারপাশে এতকিছু ভাল হয় নাকি! প্রতিটা মানুষ সাদা কিংবা কালো। হয়না হয়তো। তবে সেরকমটা হলে মন্দ হতোনা। আসলে আমাদের সামনে একটা আয়না ধরতে চেয়েছেন পরিচালদ্বয়। 'গোত্র' সেখানে সফল।