থাপ্পড় কাস্ট: তাপসী পান্নু, পাভেলী গুলাটি, রত্না পাঠক শাহ, কুমুদ মিশ্র, মায়া সারাও, তনভী আজমি, গীতিকা বিদ্যা, মানব কৌল
থাপ্পড় পরিচালক: অনুভব সিনহা
থাপ্পড় রেটিং: ৩.৫/৫
অনুভব সিনহা'র থাপ্পড়-এর একটাই দৃষ্টিভঙ্গি: আপনি কোনও মহিলাকে থাপ্পড় মারতে পারেন না এবং আশা করেন সে বিষয়টি এড়িয়ে যাবে ও ভুলে যাবে। এটা হতে পারে না।
সিনেমায় এই কথাটা পরিষ্কার করে বলতে আমাদের ২০২০ সাল লাগল। ছবিটা সমাজ সম্পর্কে অনেক কথা বলে। যা আমাদের 'সভ্যতা', 'মর্যাদা'-র আওতায় সকল প্রকার মন্দকে ক্লিনচিট দেয়। আপনি যদি 'আদর্শ বউ' হন, যেমন অমৃতা (তাপসী পান্নু), আপনার বৃদ্ধ শাশুড়ির সুগার পরীক্ষা করা আপনার কাজ, রান্নাঘরেক তদারকি করা, স্বামীকে (গুলাটি) গাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে আসা এবং তার মানিব্যাগ এগিয়ে দেওয়া এবং টিফিন দেওয়া সবটা, কারণ তিনি রোজগার করতে ব্যস্ত। গাম্ভীর্য ছেড়ে, হাসি মুখে, ভাল ব্যবহারে প্রতিটা দিন একই কাজ।
আরও পড়ুন, ডিসকভারি চ্যানেলে ‘থালাইভা’! আসছে রজনীকান্তের বিশেষ এপিসোড
কী হতে পারত তা নিয়ে ছবিতে একটা তীব্র আফসোস রয়েছে। অমৃতার বাবা যেভাবে মেয়েকে দেখতে চেয়েছিলেন সেভাবেই একজন নৃত্যশিল্পী, এমনকি পেশাদার তাঁর হতে পারত। কিন্তু সে তার স্বপ্নগুলি পিছনে ফেলে, শুধু একজন কর্তব্যরত স্ত্রী এবং পুত্রবধূ হওয়ার জন্য বিয়ে করে। যে নিজের মতো করে সকালবেলা কাজ শুরু করার আগে তৈরি করে কালো চা- এইটুকুই দাবি।
থাপ্পড় এই সমাজের অনুরূপ। কারণ পরিচালক দেখায়, কখনও কোনও শব্দ না ব্যবহার করে (আবার কখনও কখনও খুব বেশি), ঠিক কীভাবে পিতৃতন্ত্রকে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং মহিলারাও যে কাজে সমানভাবে দায়ী। পরিবার এবং অতিথিদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সজোরে চড় মারার পরে, অমৃতা নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর দেয় এবং যখন তা কার্যকর হয় না, তখন সে আশা করে নিজের পরিবারের মা (শাহ), ভাই এবং বাবা পাশে দাঁড়াবে। তবে অবাক না করেই, এখানে মা বলে ওঠে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার গুরুত্বের কথা। বলেন, ''শ্বশুর বাড়িই এখন তোমার বাড়ি''।
ছবির সবচেয়ে মনে রাখার অংশ, যেখানে আমাদের দেখানো হয় নারীদের কীভাবে সারাক্ষণ বলে দেওয়া হয় কী করবে কী করবে না, কীভাবে অনুভূতিগুলো লুকিয়ে রাখবে, কীভাবে সেগুলোর বহিঃপ্রকাশ আটকাবে ইত্যাদি প্রভৃতি। ছবিতে তাপসীর মা এনং আইনজীবীও হতাশ করেছে এবং আর বাড়ির কাজের লোক যে তার মাতাল স্বামীর কাছে প্রতিনিয়ত মার খায়।
আরও পড়ুন, Shubh Mangal Zyada Saavdhan Review: সমকামীদের গল্প নয়, প্রেমের গল্প
পারিবারিক নির্যাতন সমস্ত শ্রেণি ও বয়েসে ছড়িয়ে রয়েছে। তবে স্পষ্টতই এখানে দর্শকদের কাছে ধারণাটা ইউটোপিয়ান না করার একটা চেষ্টা রয়েছে, বিশেষত যখন অমৃতা এবং তার স্বামীর মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়টি উন্মোচিত করার ক্ষেত্রেই তা পরিলক্ষিত: দীর্ঘ দড়ি টানাটানি এবং বিচ্ছেদে অশ্রুর মধ্যে সেই টানাপোড়েন দেখানো হয়েছে।
তাপসী ছবিটাকে ধরে রেখেছেন, তার অভিনয়ের খাটনিটা চোখে পড়েছে। যেভাবে আইনজীবী এগিয়েছেন, কাজের লোক হিসাবে গীতিকা প্রত্যেকে আলাদ করে লক্ষ্যণীয়। তবে সন্দেহের লেশমাত্র নেই যে পরিচালক অনুভব সিনহা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, জরুরি ছবি তৈরি করেছেন। কয়েকশো বছর ধরে পুরুষের ধ্যানধারণা সামগ্রিকভাবে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটাই দেখানোর চেষ্টা করেছে। দৃঢ়ভাবে কোনও নারীর দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছেন, মহিলা নিজের আত্মসম্মান রাখতে যে কোনও সিদ্ধান্তকে না বলতে পারে, সেটা একটা থাপ্পড় হলেও।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন