মুখার্জি দার বউয়ের পর এবার কোন ঘরানার গল্পে একসঙ্গে ঋত্বিক-সোহিনী-সঞ্জয় মিশ্র?
বাবা-ছেলের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে গল্পটা তৈরি হয়েছে। সিনেমার নাম 'ফেরা'। বাবার চরিত্রে সঞ্জয় মিশ্র আর ছেলের ভূমিকায় ঋত্বিক চক্রবর্তী। এই আঙ্গিকে অনেক সিনেমাই তৈরি হয়েছে। কিন্তু, 'ফেরা'-তে আমার নিজস্ব একটা দৃষ্টিকোণ আছে। আর সেটা হল মফঃস্বল থেকে শহরে আসার জার্নি। আমি রানাঘাটের মেয়ে। কর্মসূত্রে এখন ঠিকানা কলকাতা। আমার সংসাময়িক অনেকেই আছেন যাঁরা মফঃস্বল থেকে শহরে এসে কেরিয়ার গড়েছেন। মফঃস্বল আর কলকাতার জীবনযাপনের মধ্যে একটা বিস্তর ফারাক আছে। আমাদের আগের প্রজন্ম শহর আর মফঃস্বলের মধ্যে পার্থক্যটা যে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছে বর্তমান প্রজন্মের ক্ষেত্রে সেটাও সম্পূর্ণ আলাদা। এই ছবিটার মধ্যে দিয়ে আমি যে বিষয়ে আলোকপাত করতে চেয়েছি সেটা হল আজকের এই ইঁদুর দৌড়ে মানুষ যে ছুটে চলেছে সেটা আদতে কতটা কার্যকরী। নাকি ছোটবেলা থেকে আমাদের মনে গেঁথে দেওয়া, সাফল্য পেতেই হবে সেই লক্ষ্যেই ছুটে চলেছে? দিনের শেষে আমাদের জীবনচক্রে সেই সাকসেসটা সত্যিই প্রকৃত সাফল্যলাভ? আদৌ তার কোনও মূল্য আছে? এইরকম ছোট ছোট বিষয়গুলোই সিনেমার চরিত্ররা দর্শকের সামনে ফুটিয়ে তুলবে। নিত্যদিনের রোজনামজার মধ্যেই একটা অন্যরকম গল্প বলার চেষ্টা করেছি।
বাবা-ছেলের গল্পের মূল আকর্ষণ কী?
আমি আমার জীবনে যেটা দেখেছি বাবা-মেয়ের মধ্যে অনেক বেশি কথা হয়। যেটা বাবা-ছেলের সম্পর্কে হয় না। অনেক বেশি বোঝাপড়ার ব্যপার থাকে। চেনা ছকের বাইরে বাবা-ছেলের সম্পর্কের একটা সমীকরণ এই সিনেমায় দর্শক দেখতে পাবে।
মুখার্জি দার বউ-তেও পারিবারিক গল্প, আগামী ছবির প্রেক্ষাপটও অনেকটা সেইরকমই। ঘরোয়া বিষয় নিয়ে ছবি তৈরির অনুপ্রেরণা কী?
আমি নিজে যতক্ষণ না একটা গল্প বলার তাগিদ অনুভব করি ততক্ষণ ছবি তৈরি করতে পারি না। নিজের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বা নিজের জীবনযাপনের থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে গল্প বলাটা আমার কাছে সহজ। সিনেমায় সাধারণত গল্পের শেষে চরিত্রের সাকসেসকে সেলিব্রেট করা হয়। কিন্তু, আমার ব্যক্তিগত মত, সাধারণ মানুষের সাধারণভাবে বাঁচাটাও একটা সেলিব্রেশন। কারণ প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকাটাও একটা লড়াই। যার জন্য সাহসের প্রয়োজন। সেই ধরনের গল্প আমাকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করে। আমার বরাবরই সম্পর্ক এবং তার যে প্রতিটি স্তর এবং জটিলতা গুলো নিয়ে কাজ করতে অনেক বেশি ভাল লাগে। সেই জন্যই আমার ছবিতে সেই ধরনের গল্পই হয়তো বারবার ঘুরে আসে।
ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে আরও একবার কাজ, কেমন অভিজ্ঞতা?
ফিচার ফিল্মে অল্পই কাজ করেছি। আর সেই স্বল্প কাজের পরিসরে দুবার ঋত্বিকদার সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলাম। ভীষণ ভাল অভিজ্ঞতা। শুধু অভিনেতা হিসেবে নন, একজন ভাল মনের মানুষ। ওঁর সঙ্গে ফের কাজের সুযোগ পেয়ে আমি খুব খুশি।
এবার চেনা ছকের বাইরে দেখা যাবে ঋত্বিক-সোহিনী জুটিকে?
এখানে ওঁদের কোনও রোম্যান্টিক রিলেশনশিপ নেই। সোহিনী সরকারের চরিত্রের একটা নিজস্ব জার্নি আছে। যা সিনেমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট। ঋত্বিক দা নায়ক আর সোহিনী নায়িকা এখানে সেটা নয়। এই ছবির মলাট চরিত্র সঞ্জয় জি আর ঋত্বিক দা। তবে সোহিনীর চরিত্রটা ছাড়াও ছবি তৈরি সম্ভব নয়। মূল গল্পে ওঁর চরিত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।
দু-তিনটে ছবি তৈরির পরই সঞ্জয় মিশ্রর মতো বলিউড স্টারের সঙ্গে কাজ বিরাট প্রাপ্তি? স্ক্রিপ্ট শুনে একবারেই রাজি হয়েছিলেন?
অবশ্যই বিরাট প্রাপ্তি। ওঁর রাজি হওয়ার পিছনে একটা মজার ঘটনা আছে। সঞ্জয় জি-র সঙ্গে কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাব ছবির প্রযোজককে। আমরা একদিন ছবি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন টিমের একজন সঞ্জয় জি-র কথা বলেন। তারপর প্রদীপ বাবু (প্রযোজক)-র কথাতেই মুম্বই গিয়ে ওঁর সঙ্গে দেখা করে গল্পটা বলি। আমার গল্প শুনেই উনি রাজি হয়ে যাবেন সেই আশা নিয়ে একদমই যাইনি। কিন্তু, গল্পটা সঞ্জয় জির পছন্দ হয়। সেইদিন সন্ধ্যাতেই আমাকে ওঁর সম্মতির কথা জানান। আসলে ওঁর মনে হয়েছিল এটা শুধু বাংলার একটা গল্প নয়, এর সঙ্গে একটা ইউনিভার্সাল ইমোশন জড়িয়ে আছে। উনিও দ্বারভাঙার মানুষ। সেখান থেকেই মুম্বইয়ের জার্নি। এই ছবির সঙ্গে জড়িত ঋত্বিক দা, সোহিনী, আমি এবং সঞ্জয় জি, প্রদীপ দা প্রত্যেকেরই মফঃস্বল থেকে শহুরে জার্নির অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই গল্পের কার্ভটা ওঁর নিজের জীবনের সঙ্গেও কিছুটা হলেও মিলে গিয়েছে।
সিনেমার শুটিং কোথায় হবে ?
বাংলা-বিহার বর্ডারে কোনও একটা জায়গায় শুটিং করব। কারণ সঞ্জয় জির সংলাপ বাংলাতেই থাকবে। উনিই ডাবিং করবেন। ওঁর কথায় যদি একটু টানও থাকে সেটা জাস্টিফায়েড হবে। কলকাতাতেও কিছুটা অংশের শুটিং হবে। পুজোর পর শুটিং শুরু করব। এই বছরেই শুট শেষ হবে। আর ছবি মুক্তি ২০২৬-এ।
আরও পড়ুন দেবী চৌধুরানীর শুটিং শেষে বুম্বাদা তিনবার সিনেমাটা দেখার পর বলেছে এটা 'কর্মাশিয়াল ক্লাসিক': শুভ্রজিৎ মিত্র