গতকালই ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। কোলনের সমস্যার ছিলেন আইসিইউতে। কিন্তু বুধবার সকাল যে এমন দুঃস্বপ্ন বয়ে আনবে তা কেউ কখনও কল্পনা করেনি। অভিনেতা ইরফান খান আর নেই, শব্দগুলো বিশ্বাসই হচ্ছে না। সিনেমাপ্রেমীরা তো বটেই তাঁর চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না বাংলা সিনেমা জগতের তারকারাও। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বললেন, "আমি এই খবরটি মেনে নিতে পারছি না, বলা ভালো মেনে নিতে অস্বীকার করছি। হ্যাঁ, এটা ঠিক আমরা ওর অসুস্থতা সম্পর্কে অবগত ছিলাম। কিন্তু সেটা যে এভাবে...! অন্তত এত তাড়াতাড়ি নয়! আরও অনেকটা সময় লাগবে মেনে নিতে"।
পরিচালক-অভিনেতা অপর্ণা সেনও টুইটারে লিখেছেন, ''ইরফান খান...চলে গেলেন। সেরা এক অভিনেতাকে হারাল বিশ্ব। আমার আর কিছু বলার নেই। বিদায় ইরফান। তুমি যেখানে থেকো ভাল থেকো, শান্তিতে থেকো। এই ভাইরাস কবলিত, অশান্ত পৃথিবীর থেকে সেই জায়গা অনেক বেশি ভালো। পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল।
আরও পড়ুন, ইরফানের পথেই হাঁটলেন ‘গোল্ডম্যান’ ঋষি
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় লিখলেন, ''ইরফান খান, আপনি বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলে। আপনি ছিলেন, আপনি আছেন এবং ভবিষ্যতেও ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেতা হয়েই থাকবেন। এই কঠিন সময়েও আপনার কাজ করা শেষ সিনেমা ইংরেজি মিডিয়াম আমি দেখেছি এবং আপনার অভিনয় দেখে আমি হতবাক হয়েছি। আপনি যেখানেই থাকুন আমার বন্ধু হয়েই থাকুন।''
আরও পড়ুন, প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান
১৯৬৬ সালের ৭ জানুয়ারী জয়পুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইরফান খান। ন্যাশানাল স্কুল অফ ড্রামার কৃতী ছাত্র কাজ করেছেন বহু ছবিতে। আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছিলেন বলিউডকে।ইরফানের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় টুইট উঠে এসেছে ইরফানের সঙ্গে তাঁর কাজ না করতে পারার আক্ষেপ। লেখেন, "যেমন আমার মারা যাওয়ার আগে নাসিরুদ্দিন শাহ, আশা ভোঁসলে আর অল্প হলেও অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করা হয়ে গিয়েছে, তেমনই যেটা হল না সেটা ঋতুদাকে অ্যাসিস্ট করা বা ইরফান খানের সঙ্গে কাজ করা। বহুবার মিটিং হয়েছিল হেমলকের হিন্দি ভার্সন নিয়ে। কিন্তু আনন্দ কর আর হল না।রূপোলী পর্দার সেরাদের মধ্যে উনি। ইংলিশ মিডিয়াম ছবির মুক্তির আগে ওনার যে বার্তা ছিল তা সবসময় মনে থাকবে।অভিনেতা এবং যোদ্ধা। কিংবদন্তীদের মধ্যে তুমি তোমার সৃষ্টিতে বিরাজমান থেকো।"
কেরিয়ারের প্রথমদিকে চাণক্য, ভারত এক খোঁজ, বনেগী আপনি বাত, চন্দ্রকান্ত, স্টার বেস্ট সেলারস-এর মতো শো করেছেন অভিনেতা। পাওলি বললেন, ''একটা অদ্ভুত ফিলিং আমার হৃদয়কে ঘিরে ধরে রয়েছে। এটা কি সত্যি? রূপোলী পর্দার সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেলেন। এই চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এটা ঠিক নয়। আমি মন থেকে চাইতাম অন্তত একবার ইরফান খানের সঙ্গে কাজ করতে। যার ভিতরের ভালো গুণগুলি ফুটে উঠত স্ক্রিনে। মন ছুঁয়ে যেত দর্শকদের। মনে হচ্ছে পরিবারের কাউকে হারালাম। পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আপনি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে এবং স্মৃতিতে বেঁচে থাকবেন।''
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ভয়েস কলে বললেন, ''ইরফান খান অসুস্থ ছিলেন জানি, কিন্তু এভাবে যে চলে যাবেন এটা বুঝতে পারিনি। সিনেমার একটা বড় অংশে উনি ছিলেন। শুধুমাত্র ভারতীয় নয়, আন্তর্জাতিক চলচিত্রেও ওনার পদচিহ্ন রেখে গিয়েছেন। উনি যে কত বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন তা হয়তো নিজেও জানতেন না। আমি ওনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম এবং অনেক সময় কাজ নিয়েও আলোচনা করেছি। কিন্তু এভাবে চলে যাওয়াটা কতোটা হৃদয়বিদারক তা বোঝানোর ভাষা নেই। ওনার কাজ দিয়ে ভারতীয় সিনেমাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন তা বুঝতে পারি যখন কানস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ওনার 'লাঞ্চ বক্স' ছবিটি সমাদৃত হয়েছিল। চলচ্চিত্র জগতে এটা অপূরণীয় ক্ষতি। এ মুহুর্তে অদ্ভুত একটা দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এর শেষ কোথায় জানা নেই। অনেক ভালো ভালো শিল্পীরা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমি ওনার পরিবারের প্রতি সমব্যাথী। উনি ওনার কাজ, সৃষ্টিতে আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। এক ডক্টর কি মথ এই ছোট ছোট ছবি থেকে এত বড় জায়গায় উনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন, উনি সত্যিকারের যোদ্ধা।''
আরও পড়ুন, জীবন যুদ্ধ শেষ ঋষির, বন্ধু বিয়োগের সুর অমিতাভের গলায়
আবির চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "হতাশার সময়কে যেন আরও খারাপ করে তুলল। ইরফান, আপনি আমাদের সেরা শিল্পীদের মধ্যে একজন। আমি যখন নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে তখন আপনিই আমার অনুপ্রেরণা ছিলেন। ইরফান খান, আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রইল।''
ইরফানের সঙ্গে ডুব ছবিতে কাজ করেছেন অভিনেত্রী পার্নো মিত্র। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁর চলে যাওয়াটা। প্রায় বাক্যহারা অভিনেত্রী বললেন, ''হৃদয় বিদারক''।
১৯৮৮ সালে মীরা নায়ারের ছবি সালাম বম্বে দিয়ে বড়পর্দায় ডেবিউ করেছিলেন ইরফান খান। তারপর অনেক বছরের কষ্টের পর ফের ২০০১ আসিফ কপাডিয়ার দ্য ওয়ারিয়র। এরপর আর থামেনি ইরফানের অভিনয়ের চাকা- হাসিল, মকবুল, লাইভ ইন অ্য মেট্রো, দ্য লাঞ্চবক্স, হায়দার, পিকু তালিকাটা লম্বা। পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশেও- দ্য নেমসেক, দ্য দার্জিলিং লিমিটেড, স্ল্যামডগ মিলিয়েনিয়র, লাইভ অফ পাই এবং জুরাসিক ওয়ার্ল্ড। বিশ্ব দরবারে সমাদৃত তারকা চলে গেলেন নিঃশব্দে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন