১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর, ভারতীয় সঙ্গীতজগত হারায় তার এক অমর কিংবদন্তিকে, তিনি কিশোর কুমার। তাঁর মৃত্যু শুধু একটি প্রজন্ম নয়, গোটা দেশের সাংস্কৃতিক আবেগকে আঘাত করে। মোহাম্মদ রফির মৃত্যুর মাত্র সাত বছরের মধ্যেই দেশ হারাল তার আরেক অনন্য প্রতিভাবান কণ্ঠস্বরকে। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে ভারতীয় সঙ্গীতের দুই মহীরুহের পতনে যেন এক শূন্যতা নেমে এসেছিল রেকর্ডিং স্টুডিওগুলির রাজসভায়।
সম্প্রতি, রেডিও নাশার একটি সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমারের ছেলে অমিত কুমার আবেগঘনভাবে তুলে ধরেন তাঁর বাবার জীবদ্দশার শেষ বছরগুলোর কিছু স্মৃতি। সেখানে কিছু সময় ছিল, কখনও আনন্দের, কখনও বা অজানা আশঙ্কায় ঘেরা।
এক ভবিষ্যদ্বাণী, যা সত্যি হলো
অমিত বলেন, "১৯৮১ সালে বাবার একবার হার্ট অ্যাটাক হয় এবং দীর্ঘ ছয় মাস বিশ্রামে ছিলেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অস্থির, একরোখা এবং দৃঢ়চেতা। তিনি খুব দ্রুত আবার মঞ্চে ফিরে যান।”
১৯৮২ সালে, আসামে একটি শো চলাকালীন তাঁরা এক ট্যারো রিডারের সাক্ষাৎ পান। অমিত বলেন, "বাবা তার সঙ্গে কথা বলেন, আর সেই পাঠক সবার সামনেই বলে দেন, কিশোর কুমার আর নাকি মাত্র সাত বছর বাঁচবেন। আশ্চর্যজনকভাবে, ঠিক সাত বছর পর, সেই কথাটি সত্যি হয়।"
Bengali Movie National Award: 'উপর থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে...', মায়ের মৃত্যুর পর জাতীয় পুরস্কার জিতে আবেগপ্রবণ পরিচালক অর্জুন
শেষ কথোপকথন, শেষ অনুরোধ
কিশোর কুমারের মৃত্যুর সময় অমিত ছিলেন আমেরিকায়, গোবিন্দা, আসরানি ও কুলভূষণ খারবান্দার সঙ্গে একটি লাইভ শো ট্যুরে। তখন ছেলেকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন কিশোর। কী কী জিনিস কিনতে বলেছিলেন? অমিত বলেন, "আমার বাবা আমাকে সিনেমার ডিভিডি আর লেজারডিস্কের একটা বড় তালিকা দিয়েছিলেন কিনে আনার জন্য। বলেছিলেন, এই জিনিসগুলো ছাড়া আমি যেন বাড়িতে না ফিরি।"
তবে দেশে ফেরার ঠিক আগের দিন সকালে আসে সেই দুঃসংবাদ। অমিতের কথায়, "প্রথমে ফোন করেন শমু মুখোপাধ্যায়, এরপর আরও দু’একজন। সবাই জিজ্ঞেস করছিলেন আমি কখন ফিরছি। শেষে পরিচালক শক্তি সামন্ত ফোন করে জানালেন- বাবা আর নেই।"
SRK National Award: ভাঙা হাতে বাদশাহী মেজাজে আইকনিক পোজ! প্রথমবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তিতে কী বার্তা 'কিং' শাহরুখের?
ফ্লাইটে ফিরে আসা, বিমর্ষ এক যাত্রা
বেদনার্ত অমিত বলেন, "গোবিন্দা আর আসরানি আগে থেকেই জানত, তাই ফোনের সময় আমার ঘরে আসেনি। ফোন রাখার পর ওরা সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিতে আসে। কুলভূষণ খারবান্দা সারা ফ্লাইটে পাশে থেকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন আমায়।" অমিত জানান, তাঁর নিজের ব্যর্থ বিবাহ জীবনও হয়তো কিশোর কুমারকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল। বলেন, "তিনি বুঝতে পারছিলেন না, কেন তাঁর ছেলের জীবনে এমন অশান্তি এলো। আমার মনে হয়, সেই দুশ্চিন্তাও তাঁর শারীরিক অবনতিতে ভূমিকা রেখেছিল।"