Advertisment

জানেন, দূরদর্শনের টেলিছবিতে অভিনয় করেছিলেন মান্না দে?

Manna Dey Birth Centenary: কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে-র জন্মশর্তবর্ষ এবছর। সেই উপলক্ষে অভিনেতা কৌশিক ভট্টাচার্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র কাছে স্মৃতিচারণা করলেন এমন একটি ঘটনার, যা এই প্রজন্মের অনেকেরই অজানা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Legendary Manna Dey acted on a Doordarshan tele-drama

টেলিছবির শেষদৃশ্য়ে মান্না দে-র সঙ্গে অভিনেতারা। ছবি সৌজন্য়: কৌশিক ভট্টাচার্য

Manna Dey Birth Centenary: মান্না দে-কে নিয়ে বাঙালির উচ্ছ্বাস চিরকাল ছিল এবং থাকবে। কিংবদন্তি এই শিল্পী বাঙালি মানসে কতটা প্রভাব ফেলেছিলেন, তার একটি ছোট্ট নিদর্শন এই ঘটনা। মিলেনিয়ামের একেবারে গোড়ার দিকের কথা। তখনও বাংলা বিনোদন জগতে প্রাইভেট বিনোদন চ্যানেলগুলির অতটা রমরমা হয়নি, তখনও শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দর্শক নিয়মিত দেখেন দূরদর্শনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সেই দূরদর্শনেই কিংবদন্তি শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি হয়েছিল একটি টেলি-ড্রামা। আর সেখানে নিজ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মান্না দে স্বয়ং।

Advertisment

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে সেই টেলিড্রামার গল্প শোনালেন অভিনেতা কৌশিক ভট্টাচার্য। ''এই টেলিছবি আমার অভিনয় জীবনের একেবারে গোড়ার দিকের কথা এবং চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। যতদূর মনে পড়ে, সেটা ২০০১ সাল। আমি নিজেও মান্না দে-র একজন ভক্ত। কোনওদিন ওঁর পাশে দাঁড়িয়ে শট দেব, ভাবতে পারি নি,'' জানালেন কৌশিক।

আরও পড়ুন: ”ফ্লোরে কেঁদে ফেলেছিলাম, কোয়েল খুব সাপোর্ট করেছিল”: কৌশিক

টেলিছবির গল্পটা ছিল এই রকম - মান্না দে-র ভক্ত এক পরিবার মেয়ের বিয়ে দিতে উদ্যোগী। মেয়ের বাবা এতটাই ভক্ত যে বাড়িতে একটি ঘর রয়েছে যা মান্না দে-র ছবি দিয়ে সাজানো। কিংবদন্তি শিল্পীর কোনও জলসা-ই তিনি মিস করেন না। তাই মেয়ের বিয়ের জন্য এমন পরিবারের সন্ধান চলছে যারা একইরকম গুণমুগ্ধ। তেমন পরিবার পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম যে পাত্রটি দেখতে আসে মেয়েকে, সে মান্না দে-র নাম শোনেনি বলে তাকে নাকচ করে দেওয়া হয়। শেষমেশ আসে এক পাত্র ও তার বাবা, যারা মান্না দে সম্পর্কে একইরকম উচ্ছ্বসিত। বিয়ের কথা প্রায় পাকা হয়ে যাওয়ার সময়ে দুম করে মেয়ের বাড়ির একজন বলে বসেন যে মান্না দে-কে মেয়ের বাবা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন।

Manna Dey কিংবদন্তি শিল্পী মান্না দে। ছবি: শিল্পীর ফ্যান পেজ থেকে

এই শুনে পাত্রের বাবা দাবি করে বসেন যে কোনও দেনাপাওনার প্রয়োজন নেই। বিয়েতে যদি কিংবদন্তি শিল্পী নিজে এসে বর-কনেকে আশীর্বাদ করে যান, তবেই এই মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেবেন তিনি। পাত্র যাতে হাতছাড়া না হয়ে যায়, সেই জন্য পাত্রপক্ষকে বলা হয় যে মান্না দে নিশ্চয়ই আসবেন। তার পরেই শুরু হয় উদ্বেগ। জানা যায়, শিল্পী তখন বিদেশ সফরে গিয়েছেন এবং কবে ফিরবেন জানা নেই। মেয়ের বাবা অগত্যা সব কথা জানিয়ে একটি চিঠি দিয়ে আসেন শিল্পীর বাড়িতে। বিয়ের দিন পাত্রপক্ষ এসে জানতে পারে যে মান্না দে আসবেন না, কারণ তিনি এই পরিবারের সঙ্গে পরিচিতই নন। পাত্রীপক্ষ মিথ্যে বলেছেন, সেই রাগে বিয়ে ভেঙে দিতে চান ছেলের বাবা। এমনকী বরকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। আর তখনই গেটের সামনে এসে দাঁড়ায় মান্না দে-র গাড়ি। পাত্রপক্ষকে শান্ত করেন কিংবদন্তি শিল্পী। সুসম্পন্ন হয় বিয়ে। ফ্রিজ ফ্রেমে ধরা পড়ে শিল্পীর দু'পাশে দাঁড়িয়ে বর-কনে ও দুই পরিবারের মান্না দে ভক্তরা।

আরও পড়ুন: শ্রমিক দিবসেই মিলতে পারে সমাধান, আশাবাদী টেলিপাড়া

বাংলা টেলিজগতে এত সুন্দর 'ফ্যান ফিকশন' সৃষ্টি হয়েছে কি না জানা নেই। টেলি ছবিটির নাম ছিল 'পাগল তোমার জন্য যে'। মান্না দে-র বিখ্যাত গানের কলি থেকেই নামকরণ। এই টেলিছবির ইউনিটে যাঁরা ছিলেন তাঁরা পরবর্তীকালে প্রত্য়েকেই অত্য়ন্ত সুনাম অর্জন করেছেন বাংলা বিনোদন জগতে। পরিচালকের ভূমিকায় ছিলেন সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন বাংলা টেলিজগতের স্বনামধন্য় প্রযোজক-পরিচালক স্নেহাশিস চক্রবর্তী, যিনি পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর প্রযোজনা সংস্থা 'ব্লুজ'। এই টেলিছবির সঙ্গীত পরিচালনাও তাঁর ছিল। এই প্রসঙ্গে স্মৃতিমেদুর প্রযোজক জানালেন, মান্না দে গানও গেয়েছিলেন ওই টেলিছবিতে। চিফ অ্যাসিস্ট্য়ান্ট ডিরেক্টর ছিলেন রাজীব কুমার, যিনি এখন বাংলা মেইনস্ট্রিম ছবির পরিচালক। অন্যতম অ্যাসিস্ট্য়ান্ট ছিলেন সুশান্ত দাস, যিনি এখন বাংলা টেলিজগতে প্রথম সারির প্রযোজক ও 'কৃষ্ণকলি'-র নির্মাতা। টেলিছবিতে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন খরাজ মুখোপাধ্যায়, প্রয়াত বিপ্লবকেতন চক্রবর্তী, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়-সহ বাংলা বিনোদন জগতের বিশিষ্ট অভিনেতারা। আর বরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কৌশিক ভট্টাচার্য।

''আমার অভিনয় জীবনের সেরা অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে একটি ওই টেলিছবি। এত সুন্দর, নিটোল একটি কাজ। তার উপর মান্না দে-র মতো কিংবদন্তিকে এত কাছ থেকে দেখা। উনি তো অভিনেতা নন, তাও কিন্তু ওয়ান টেক ওকে হয়েছিল ওঁর শটগুলি। ছবির শেষ দৃশ্যে, ফ্রিজ ফ্রেমে ওঁর ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমার এই ছবিটা সারা জীবনের সম্পদ,'' বলেন কৌশিক।

Advertisment