তিনি আসলেই যেন মহানায়ক। ৪৬ বছর পর তাঁর খ্যাতি আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। বাংলার সিলভার স্ক্রিনে তাঁর মতো প্রতিভা আর দুটি দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়। এই মানুষটি অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে নির্দেশক কিংবা পরিচালক হিসেবেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, সেই নিয়ে বলতেই হয়। পরিচালক উত্তমের বেশ প্রশংসা ছিল সিনেপাড়ার বুকে। এমনকি, খেয়াল করলে দেখা যাবে, নিজের পরিচালনায় সবথেকে বেশি স্বাধীনচেতা হয়ে কাজ করতেন তিনি।
সেই প্রসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই জানতেন। বিশেষ করে কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী ছবিতে শর্মিলা ঠাকুর তাঁর নির্দেশনায় কাজ করেছিলেন। আর উত্তম যে এতভাল পরিচালক, কোনও কালেই যেন কল্পনা করতে পারেননি তিনি। শুধু পরিচালক না, বরং উত্তম যে গান গাইতে পারতেন, একথা জানা ছিল? বেশিরভাগ সময় হেমন্ত উত্তম জুটি দারুণ মন কেড়েছে সকলের। কিন্তু, একটি ছবিতে তিনি শুধু অভিনয় করেছিলেন এমন না, বরং গান পর্যন্ত গেয়েছিলেন। থিয়েটারের মানুষের এমনিও গান গাওয়ার অভ্যাস থাকেই। নাটকের প্রয়োজনে নানা সময় নিজেদের খালি গলায় গান গাইতে হয় তাঁদের। মহানায়কের সেই অভ্যাস ছিল।
Anand L Rai-Ranjhana: পাল্টে যাচ্ছে রাঞ্ঝানার শেষ দৃশ্য, আইনি চিঠি পাঠ…
তবে, একটি ছবিতে নিজেই নিজের পারদর্শিতা দেখানোর সুযোগ পেলেন। এবং নিজেই গান গাইলেন। সঙ্গীত পরিচালককে অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে দিয়ে গান গাওয়ানোর জন্য। উত্তম এবং সাবিত্রী জুটির এই ছবির কাজ যখন শুরু হয়েছে, তখন সঙ্গীত পরিচালক নচিকেতা ঘোষ নিজেই কাউকে খুজছেন যিনি গান গাইতে পারেন। ছবির নাম নবজন্ম। আর যেই মহানায়ক জানতে পারলেন যে, এই ছবির গান গাওয়ার জন্য পরিচালক কাউকে খুঁজছেন, তিনি নিজেই যেন রাজি হয়ে গেলেন। অভিনেতা জানিয়েছিলেন, তিনি নিজেই গান গাইবেন। এতে তাঁর অভিনয় ভাল হবে।
Uttam Kumar Death Anniversary: অসাড় হয়ে গিয়েছিল শরীর, উত্তমের মৃত্যুর খবর কানে পেতেই যা মনে হয়েছিল শর্মিলার..
প্রথম যেদিন রেকর্ডিং হল, সেদিন হাতেনাতে প্রমাণ পেলেন নচিকেতা ঘোষ। বুঝতে পারলেন, ছবির প্রতিটা কীর্তন বেশ নির্ভুল গাইছেন তিনি। তারপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল প্রতিটা গান তিনিই গাইবেন। সেই গানগুলো ব্যবহার করা হয় ছবিতে। কিন্তু, মহানায়কের রেকর্ড করা সেই গানের অ্যালবাম রেকর্ডে রাখা হয়নি। যদিও সমাজ মাধ্যমে এদিক ওদিক খুঁজলে পাওয়া যায় সেই গানের এক দুটো ভিডিও। শুনলে বোধ হবে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে গাওয়া সেই গান। কিন্তু, মহানায়ক নিজেই গেয়েছেন সেই গান। প্রসঙ্গে, এরপর আর কোনোদিন কোনও সিনেমায় তাঁকে গাইতে শোনা যায়নি।
আজ তাঁর মৃত্যুর ৪৬ বছর পরেও মহানায়ক উত্তমের জনপ্রিয়তা আগের মতই রয়ে গিয়েছে। বরং, মাত্র ৫৩ বছর বয়সে চলে গিয়ে, তিনি যেন অনেক কিছুই না দিয়ে চলে গেলেন বাঙালিকে।