সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে ভাইয়ের কান্না, মায়ের কষ্ট, বাবার কান্না ভাসত। মনে হত আমি যদি কিছু করতে পারতাম। প্রায় সকলকে ধরে ধরে বলতাম, আমাকে একটা কাজ দেবেন। আমাদের খুব কষ্ট… গলা বুঁজে আসে মিস শেফালির।
এ শহরে কাজের সন্ধানে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বাড়িতে পরিচারিকা হিসাবে যোগ দেন শেফালি। এরপর… একবছর আগে জি ২৪ ঘন্টাকে দেওয়া মিস শেফালি-র একটি সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছিল সেই ফেলে আসা জীবন। ”বিকেল হলেই ওখানে একটা গ্যাদারিং হত। মদ্যপান, নাচ সবই চলত। ওখানে যে নাচ চলত, তা দেখে দেখে লুকিয়ে নাচতাম। ভিভিয়ান হ্যানসন নামে একটা ছেলে ওদের বাড়িতে আসত, মোকাম্বো-তে গান গাইত। আধভাঙা হিন্দিতে ওকে বলতাম, এর থেকে বেশি পয়সার কাজ দেবে? বলেছিল, ডান্স করনা জানতে হো? সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলাম। ওখান থেকেই শুরু…”।
আরও পড়ুন, তানসেনের তানপুরা! আসছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে প্রথম থ্রিলার
এক নিঃশ্বাসে আরতি থেকে শেফালি হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনি নিজেই বলে চলেন ষাটের দশকের ‘কুইন অফ ক্যাবারে’, ”প্রথমে আমাকে নিয়ে যায় গ্র্যান্ডে। কিন্তু কী মনে হয়েছিল সেখানে না ঢুকে নিয়ে গেল ফেরপো’জ-এ। ম্যানেজার মিস্টার ডেভিড এবং মিস্টার ভ্যালে দাঁড়াতে বলল, ঘুরতে বলল, সবই করলাম কিন্তু গোল বাঁধল নামে! নিজেরাই ইংরাজীতে কী সব বলল। পরে জানাল, সবই ঠিক আছে তবে নামটা চলবে না। ওরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বলল, ”আজ থেকে তোমার নাম আরতি দাস নয়, শেফালি। ৭০০ টাকা পারিশ্রমিক।”
আরও পড়ুন, মিস শেফালি-র জীবনাবসান
সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ (১৯৭০) এবং ‘সীমাবদ্ধ’ (১৯৭১) ছবিতে অভিনয় করেছেন মিস শেফালি। কীভাবে আলাপ মায়েস্ত্রো-র সঙ্গে… ”উনি আমাকে কোথায় দেখেছেন জানি না। একদিন খুব ফোন আসছে। ভীষণ বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। ফোনটা তুলে বলেছিলাম, ‘কী চাইছেন আপনি বলুন তো! পরিস্কার বাংলায় ওপার থেকে ভেসে উঠেছিল, শেফালি তুমি আমার নাম শুনলেও শুনতে পার, আমি সত্যজিৎ রায় বলছি। তোমাকে আমার দরকার। আমার ছবিতে তোমাকে কাস্ট করতে চাই।’ বাড়িতে ডেকেছিলেন তিনি, বুঝিয়ে বলেছিলেন সবটা। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোমার ব্লাউজ খুলতে আপত্তি আছে? তুমি কি সিগরেট খাও?’ তবে আমার দাবি মতো লোক পাঠিয়ে ছিলেন, সংলাপ জলের মতো মুখস্থ করেছিলাম। কিন্তু সেটে চিত্রনাট্য ছিঁড়ে ফেলে বলেছিলেন, আমি বলিয়ে নেব”। পরে সংলাপ বলিয়ে রীতিমতো তাঁকে দিয়ে অভিনয়ও করিয়ে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়।
শেফালির নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন,মহানায়ক উত্তম কুমারও। শেফালি বলেছিলেন, ”উনি সবসময় সামনে চেয়ারে বসতেন। একদিন হাওয়াইন ডান্সে (হনলুলু-র ফর্ম)মালা পরানোর রীতিতে রয়েছে। সেখানে দেখি দাদা’র নাম রয়েছে। ওনার গলায় মালা পরাতে হবে। মালা পরিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে এসেছিলাম নাচের জন্য। মনে মনে বলেছিলাম, তুমি উত্তম কুমার হলে আমিও মিস শেফালি, তোমাকে কেমন নাচাচ্ছি দেখ।” পরবর্তীতে শেফালির সার্কাস অ্যাভিনিউর বাড়িতে যেতেন উত্তম কুমার, আড্ডাও দিতেন। এমনকী সুপ্রিয়া দেবী-র সঙ্গেও আলাপ ছিল শেফালির।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
Get all the Latest Bengali News and West Bengal News at Indian Express Bangla. You can also catch all the Entertainment News in Bangla by following us on Twitter and Facebook
Web Title:
রাগ, অভিমান ভুলে রাজীব-লক্ষ্মীরতন-বৈশালীকে একসঙ্গে লড়াইয়ের বার্তা প্রসূনের
টিকা নিয়েও রাজনীতি! বর্ধমানে ভ্যাকসিন নিলেন তৃণমূল বিধায়করা, তুঙ্গে বিতর্ক
শ্রাবন্তীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ, তার মাঝেই 'মনের বান্ধবী'র সঙ্গে ছবি পোস্ট রোশনের
"স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য ইতিহাস রাহুল গান্ধীকে স্মরণ করবে"
ফাইজারের করোনা টিকা নেওয়ার পর ২৩ জনের মৃত্যু, চাঞ্চল্য নরওয়েতে