Bengali Movie, Network: ছবি মুক্তি এই সপ্তাহেই, ২৮ জুন। প্রায় দীর্ঘ দু'বছরের একটি জার্নির অবসান বলা যায়। ২০১৭ সালে প্রথম 'নেটওয়ার্ক' ছবির ঘোষণা করেন সপ্তাশ্ব বসু। এটাই তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য়ের ছবি যা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে। ছবির প্রযোজক তিনি ও তাঁর পরিবার। বলতে গেলে এক ধরনের স্বাধীন চলচ্চিত্রই বলা যায় নেটওয়ার্ক ছবিটিকে। সম্প্রতি পরিচালকের একটি বিশেষ সোশাল মিডিয়া পোস্ট বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে যেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন যে এক বড় প্রযোজনা সংস্থা তাঁর ছবি মুক্তির শেষ মুহূর্তের কিছু কাজে বাধা দিতে চেষ্টা করেছে। ওই পোস্টে ঘটনাটির আভাস দিয়ে তিনি লিখেছেন, ''আমাদের ছবি হয়তো খুবই সাধারণ মানের কিন্তু আর যাই হোক, কপি নয়।'' এই বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হল সপ্তাশ্ব সেই প্রযোজনা সংস্থার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে অস্বীকার করেন কিন্তু পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন।
''রিলিজের আগে একবার ফাইনাল চেক করে ছবিটা মুম্বই পাঠাতে হতো। এই চেকিংটা আগে থেকে করা হয় না, রিলিজের ঠিক আগেই একবার দেখে নেওয়ার কথা। সবাই তাই করেন। আমি সেই মতো কলকাতারই একটি এডিট স্টুডিওতে তিনদিনের জন্য় স্লট বুক করি। ওই তিনদিনই অন্য় একটি বড় প্রযোজনা সংস্থা বার বার এসে আমার কাজে বাধা দেয় নানাভাবে। স্টুডিও চেষ্টা করে অনেক বার তাদের বোঝাতে, যেহেতু ওই সংস্থা তাদের রেগুলার ক্লায়েন্ট, একটা সময় পরে স্টুডিওকেও বাধ্য় হয়ে কিছুটা মেনে নিতে হয় ওদের কথা। ওই হাউসের ছবি রিলিজ আরও দু'সপ্তাহ পরে, কিন্তু ওদের তখনই, আমার স্লটগুলিতেই কাজ করতে হতো। এটা এমন একটা ব্য়াপার যেটা নিয়ে সেভাবে অভিযোগ হয় না। কিন্তু অত্য়ন্ত চাপ তৈরি হয়। সেই চাপের কারণেই আমার ছবির ফাইনাল চেক ঠিকমতো না করেই আমাকে আউটটপুট পাঠাতে হয় মুম্বইতে। বেশ কিছু ভুল ছিল। সেগুলো আলাদা করে এখন মেল করে জানাতে হচ্ছে'', জানালেন সপ্তাশ্ব।
আরও পড়ুন: এবছর যে ৮টি বলিউড ছবির দিকে থাকবে নজর
বাংলা ছবির জগতে পা রাখা নতুন প্রযোজক-পরিচালক সপ্তাশ্বের অভিজ্ঞতাটি খুব অভিনব কিছু নয়। এমনটাই হয়ে এসেছে এবং হয়। সপ্তাশ্ব যা বলেছেন তা আরও একবার প্রমাণ করল যে নতুন প্রযোজক-পরিচালকদের কতটা হেনস্থা হতে হয় বাজারে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলির হাতে। তার পরেও নতুন প্রজন্মের মানুষ বাংলা ছবি করার স্বপ্ন দেখেন, উদ্যোগ নেন, এটাই অত্যন্ত আশার কথা।
ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি নিয়েও চাকরি করেননি সপ্তাশ্ব কারণ মোটামুটি টিনএজ থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলেন তিনি ছবিই করবেন। হাই স্কুলে পড়ার সময়, সুযোগ পেলেই চলে যেতেন সিরিয়ালের শুটিং দেখতে। ছেলের আগ্রহ দেখে স্টুডিওপাড়ায় নিয়ে যেতেন সপ্তাশ্বর মা নিজেই। এখন সপ্তাশ্বর প্রযোজনা সংস্থা নিও স্টুডিওস-এর অনেকটা দায়িত্ব তিনিই সামলান।
''আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় থেকেই বিদেশী ছবি দেখা, ছবি নিয়ে পড়াশোনাটা শুরু করি। এমনকী ম্য়ানুয়াল পড়ে পড়ে এডিটিংও শিখেছি প্রাথমিকভাবে। ক্য়াম্পাসিংয়ে বসতেই হয়েছিল কিন্তু প্রথম রাউন্ডে পাশ করেও বলেছিলাম আমি পাইনি। ছবি বানাতে হবে, এটাই মাথায় ঘুরত। কিন্তু নিতান্তই মধ্য়বিত্ত বাড়ির ছেলে আমি। তাই টাকা জোগাড় করতে খুবই কষ্ট হয়েছে'', বলেন সপ্তাশ্ব, ''নেটওয়ার্ক-এর চিত্রনাট্য নিয়ে আমি একবার ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-কেও অ্য়াপ্রোচ করেছিলাম কিন্তু তখন ওরা রাজি হয়নি। ব্য়ক্তিগত উদ্যোগেই ফাইনান্সার জোগাড় করে ছবিটা করেছি। তার জন্য অনেকগুলো শিডিউলে শুটিং করতে হয়েছে। শুটিং পুরোপুরি শেষ হয়েছে ২০১৮-র মাঝামাঝি। তার পরে প্রায় এক বছর লেগে গেল ছবিটা রিলিজ করতে কারণ প্রথমে হল পেতে খুবই সমস্য়া হয়েছিল। পরে কিন্তু ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-ই আমাকে জানায় যে ওরা ডিস্ট্রিবিউশন করতে ইচ্ছুক।''
আরও পড়ুন: ধারাবাহিক থেকে বাদ পড়তেন ‘ত্রিনয়নী’-নায়িকা, যদি না আবার ডাকতেন সাহানা
নেটওয়ার্ক একটি থ্রিলার যার চিত্রনাট্য লিখেছেন রিনি ঘোষ ও সপ্তাশ্ব। পরিচালনাও সপ্তাশ্বের। প্রধান চরিত্রে রয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্য়ায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, রিনি ঘোষ ও ইন্দ্রজিৎ মজুমদার। এছাড়া অন্য়ান্য় চরিত্রে রয়েছেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্য়ায়, সপ্তর্ষি রায়, রজত গঙ্গোপাধ্য়ায় প্রমুখ। স্পেশাল অ্য়াপিয়ারেন্স রয়েছে সায়নী ঘোষ, অনিন্দ্য় চট্টোপাধ্য়ায় ও দর্শনা বণিকের। ডিওপি প্রসেনজিৎ চৌধুরী ও অঙ্কিত সেনগুপ্ত।
নিঃসন্দেহে নতুন এবং স্বাধীন পরিচালকের কাছে এটা এক ধরনের জয় কারণ স্বাধীন চলচ্চিত্র তৈরির প্রক্রিয়া যতটা কঠিন, ছবির প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি তার চেয়ে অনেক বেশি দুরূহ। সেই কঠিন কাজে সফল হয়েছেন সপ্তাশ্ব। এখন দর্শক ও সমালোচকেরা বিচার করবেন ছবির মান কেমন।