Niloy Banerjee on SRK, Priyanka, Ranbir: মুম্বই এমন একটা শহর যেখানে অভিনেতাদের একবার না একবার যেতেই হয়। বলিউডে কাজ করবেন, এমন স্বপ্ন নিয়েই মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন নিলয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সব স্বপ্ন সফল যে হয়েছে তা নয়, কিন্তু একটা স্বপ্ন তো হয়েছে বটেই-- শাহরুখের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার। ছোটবেলা থেকেই শাহরুখ খানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। তাই 'জিরো' ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে একই সিনে কাজ করার সুযোগ যখন এল, তখন স্বপ্নপূরণ তো হল বটেই, পাশাপাশি শাহরুখের ব্যবহারে অভিভূত নিলয়।
''আমার সিন ছিল আসলে ক্যাটরিনার সঙ্গে। সংলাপও ছিল ওঁর সঙ্গেই। কিন্তু শাহরুখ এমন সুন্দর একটা ইমপ্রোভাইজ করলেন সিনটা যে আমার সঙ্গে সরাসরি একটা ইন্ট্যারাকশন হল। আর ওই অভিজ্ঞতাটা আমি কোনওদিন ভুলব না'', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন নিলয়, ''জিরো ছবিতে ক্যাটরিনার পার্সোনাল হেয়ার স্টাইলিস্ট টিমে আমরা তিনজন ছিলাম। সিনটা ছিল যে শাহরুখ ঢুকবেন এবং কিছু কথা বলে বেরিয়ে যাবেন। কিন্তু শাহরুখ এসেই আমাদের বললেন যে, ঠিক জমছে না। চলো আমরা এই সিনটা একটু ইমপ্রোভাইজ করি। ওই মুহূর্তটা আমার কাছে খুব দামি। শাহরুখ খান, যিনি ছোট থেকে আমার রোল মডেল, তিনি আমাকে বলছেন একসঙ্গে ইমপ্রোভাইজ করতে। এটা একজন নতুন অভিনেতার কাছে যে কতটা সম্মানের, বলে বোঝানো যাবে না।''
আরও পড়ুন: ‘মায়ের কথাতে অডিশনে যাই’! ‘গন্দি বাত’ তৃতীয় সিজনে বাংলার পল্লবী
তবে শুধু শাহরুখ নন, মুম্বইয়ের তারকাদের সুব্যবহারের অভিজ্ঞতা আরও অনেক রয়েছে নিলয়ের। ২০১২ সালে মুম্বই যাওয়ার পরে তাঁর প্রথম কাজটিই ছিল ২০১৩ সালে অনিল কাপুরের '২৪', যা সম্প্রচার হতো কালারস টিভি-তে। তবে তার জন্য প্রচুর অডিশন দিতে হয়েছে। মোটামুটি কাছাকাছি সময়েই তিনি ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন অনুরাগ বসু-র 'স্টোরিজ বাই রবীন্দ্রনাথ টেগোর'-এ। সেখানে তাঁর অভিনয়ের অংশটি ছোট হলেও অনুরাগ বসু ঠিক মনে রেখেছিলেন। তাই 'জগ্গা জাসুস'-এর একটি গানের দৃশ্যের জন্য নিলয়কেই ডেকে পাঠান তিনি।
''অনুরাগ স্যারের স্ত্রী তানিদিই আমাকে ফোন করেন। তখন আমার খুব টাইট শিডিউল। '২৪'-এর কাজ চলছে। সারাদিন ওখানে ব্যস্ত। কিন্তু তানিদি জানালেন যে ওই দৃশ্যের জন্য অনুরাগ স্যার আমাকেই খুঁজছেন। 'জগ্গা জাসুস' প্রজেক্টের কথা তখন আমরা সবাই জানি। অনুরাগ স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। ওঁর মতো মানুষও কম দেখেছি। তার পর কাজ শুরু হল ডবল শিফটে। রাতে 'জগ্গা জাসুস' আর সকালে '২৪'। এই করতে করতে একদিন এত ক্লান্ত ছিলাম যে বাইক অ্যাক্সিডেন্ট হল। পায়ের পাতায় ফ্র্যাকচার হয়ে গেল। তার পরের দিনই 'খানা খা-কে দারু পি-কে' গানটির শুট। আমি কোনওমতে স্প্রে করে, ব্যান্ডেজ করে শুটে পৌঁছলাম'', স্মৃতি রোমন্থন করেন নিলয়, ''অনুরাগ স্যার প্রথমে আমার পায়ের এই অবস্থা দেখে খুব রেগে গেলেন। উনি যে কম্পোজিশনটা ভেবেছিলেন, সেটা ওই পায়ে করা খুব কঠিন। আমি ওঁকে তখন বলেছিলাম, আমার মুখে একটুও যন্ত্রণার রেশ থাকবে না। আমি ঠিক করে ফেলব। ওই রাতটা ভুলব না। বেশ কয়েকবার টেক হয়েছিল। হঠাৎ দেখলাম আমার কাঁধে একটা হাত। দেখি রণবীর। বলল, 'হাই ব্রো কেয়া হুয়া।' বললাম। তখন বলল, 'অভি দর্দ কম হ্যয় না, টেক কেয়ার অফ ইওরসেলফ।' ওর কোনও প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু এই জেসচারটাই দারুণ।''
আরও পড়ুন: এপ্রিলে বিয়ে? সব্যসাচীর লেহঙ্গা অর্ডার দিলেন আলিয়া
প্রায় ৭ বছর বলিউডে কাজ করার অভিজ্ঞতায়, নিলয়কে সবেচেয়ে বেশি নাড়া দেয় তারকাদের নম্র ব্যবহার এবং সামগ্রিকভাবে নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব। শুধু ছবি নয়, বহু বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন নিলয় এবং তাঁর জীবনের প্রথম টিভিসি ছিল প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে। প্রথম থেকেই নার্ভাস ছিলেন অভিনেতা। একে বিশ্বসুন্দরী তার উপর প্রথম সারির নায়িকা। নিলয় ও প্রিয়াঙ্কাকে একটি বিশেষ স্টেপ দেওয়া হয়েছিল। বেশ কয়েকবার রিহার্সাল করার পরেও প্রথম টেকেই স্টেপ গন্ডগোল করেন নিলয়। প্রিয়াঙ্কা নিজেই থামিয়ে দিয়েছিলেন টেক। তার পরে নিলয়কে বলেন, কোনও অসুবিধা নেই। আর কয়েকবার স্টেপটা অভ্যাস করে নিলেই হবে।
আসলে এই আচরণগুলি হয়তো তেমন কিছুই নয় কিন্তু যে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ফ্লোরে নতুন, তারকাদের সঙ্গে তাঁদের প্রচুর মানসিক ব্যবধান থাকে। বলিউডের বেশিরভাগ তারকাই সেই ফাঁকটুকু ভরাট করে নেন তাঁদের সুব্যবহার দিয়ে। তবে নিলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোকাসে এখন বাংলা। বলিউড থেকে ব্রেক নিয়ে আপাতত কিছুটা সময় কলকাতাতেই থাকতে চান। ''আমার মা খুব অসুস্থ। তাই ওঁর কাছে এখন যতটা বেশি সময় সম্ভব থাকতে চাইছি। তাছাড়া এখানে কাজের কথাও চলছে'', জানালেন নিলয়। তবে বলিউডে বসে যেমন মিস করতেন বাংলাকে, তেমনই এখন কলকাতায় বসে একটু হলেও মিস করছেন বলিউডকে।