Paayel Sarkar: 'নারীকেন্দ্রিক ছবি বিক্রি করতে সমস্যা হয়', নতুন ছবি মুক্তির দিন আর কোন 'প্রশ্ন' পায়েলের মনে?

New Bengali Movie: ২৫ এপ্রিল মুক্তি পেল পায়েল সরকার অভিনীত নতুন ছবি 'প্রশ্ন'। ছবি মুক্তির প্রাক্কালে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে পায়েলের মনে কী কী প্রশ্ন রয়েছে? শুনল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।

New Bengali Movie: ২৫ এপ্রিল মুক্তি পেল পায়েল সরকার অভিনীত নতুন ছবি 'প্রশ্ন'। ছবি মুক্তির প্রাক্কালে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে পায়েলের মনে কী কী প্রশ্ন রয়েছে? শুনল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।

author-image
Kasturi Kundu
New Update
নোংরা মনটাকে পরিষ্কার করা উচিত। তা নাহলে সিনেমা, বই কোনও কিছুই সমাজিক কাঠামো বদলাতে পারবে না।

নোংরা মনটাকে পরিষ্কার করা উচিত, নাহলে সিনেমা- বই কোনও কিছুই সমাজিক কাঠামো বদলাতে পারবে না: পায়েল

দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ারে আরজি কর-এর মতো সেনসেটিভ ইস্যুর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নতুন কোনও অভিজ্ঞতা হল?

Advertisment

এই সিনেমার শুটিংটা অন্য ছবির শুটিংয়ের তুলনায় একদম আলাদা। আমরা যখন শুটটা করেছিলাম তার কয়েক মাস আগেই ঘটনাটা ঘটেছিল। মানুষ তখন রাগে ফুঁসছে। ঘটনার স্মৃতি আজও সকলের মনে টাটকা। কিন্তু, তখন প্রতি মুহূর্তে আরজি কর কাণ্ডের কোনও না কোনও আপডেট আমরা খবরে দেখেছি। পুরো প্রসেসটার মধ্যে দিয়েই আমাদের শুটিংটা হয়েছে। যে কথাগুলো প্রতিনিয়ত আমরা টেলিভিশনে শুনেছি, খবরের কাগজে পড়েছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি ঠিক সেইরকমই কথাবার্তা-পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের শুটিংটা হত। অন্য সিনেমার শুটিংয়ের সময় যে হাসি-আনন্দ-মজা হয় সেটা এখানে একেবারেই ছিল না। আমি কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে এই ছবিটাকে পুরোপুরি আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তৈরি ছবি বলতে চাই না। কারণ মহিলাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা এই ছবির মূল বিষয়। আমরা কিন্তু, মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা আগেও দেখেছি। সমাজে মহিলাদের অবস্থানটা ঠিক কোথায় সেটা এই সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে। 

নির্যাতিতা এক নারীর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য মানসিকভাবে নিজেকে কী ভাবে তৈরি করেছিলেন?

আসলে এই চরিত্রে অভিনয়ের আগে সেই মানুষটা সম্বন্ধে তো অনেক কিছু জেনে গিয়েছিলাম আমরা। সংবাদমাধ্যম মারফৎ আমরা প্রতি মুহূর্তে ঘটনার আপডেট পাচ্ছিলাম। নির্যাতিতার সম্পর্কে অনেক তথ্যই জেনেছি। তাই আলাদাভাবে এই চরিত্রটার জন্য কোনও প্রস্তুতি নিতে হয়নি। তবে মানসিকভাবে একটা প্রস্তুতি অবশ্যই নিতে হয়েছিল। মর্মান্তিক ঘটনাকে যখন চিত্রায়িত করা হয় আর সেই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আমি সেটা তো মনের উপর একটু প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু, একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি নিজের সেরাটুকু উজার করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

Advertisment

অভয়া সম্পর্কে বিশদে জানতে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন?

না, আমি যাইনি। কারণ একজন মানুষ হিসেবে আমার মনে হয়েছিল, ওইরকম পরিস্থিতিতে ওঁদের বিরক্ত করা মোটেই উচিত নয়। নিজের সিনেমার জন্য অভয়ার মা-বাবার কাছে যাওয়াটা অমানবিক বলে মনে হয়েছিল। 

সিনেমার মাধ্যমে মানুষের কাছে অনেক বার্তা পৌঁছনো সম্ভব। মেয়েদের প্রতিনিয়ত হেনস্থার নেপথ্যে তৈরি গল্প সমাজিক চিত্রটা একটুও বদলাতে পারবে?

সিনেমা একজন মানুষের মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা আমি সত্যিই বলতে পারব না। কিন্তু, শুটিং করতে গিয়ে একটা জিনিস মনে হয়েছে আমরা 'ব্লেম গেম'-এ বিশ্বাসী। নিজের কর্মক্ষেত্রে একটা মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুতে অনেকে সরকারকে দোষ দিয়েছে। কিন্তু, যেসব মেয়েরা অন্যত্র বা বাড়িতে এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয় তখন কাকে দোষ দেবে? বিচার তো চলছে। কারো মতে বিচারের রায় সঠিক কারও মতে আবার সঠিক বিচার হল না। আমার মনে হয় যে মানুষটার মধ্যে এই জঘন্য মানসিকতা রয়েছে আগে সেই নোংরা মনটাকে পরিষ্কার করা উচিত। তা নাহলে সিনেমা, বই কোনও কিছুই সমাজিক কাঠামো বদলাতে পারবে না।

এই ধরনের ইস্যু ভিত্তিক ছবি মুক্তির পরই যদি কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়, সেই নিয়ে টেনশন কাজ করছে?

আমরা কিন্তু, কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সিনেমায় ফোকাস করিনি। আমরা কিন্তু, কাউকে পিন-পয়েন্ট করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করিনি। একটা ক্রাইমকে তুলে ধরেছি। এখনও আমরা ঘটনার সঠিক বিচার চাই। আমাদের ছবি তৈরির উদ্দেশ্য কিন্তু কাউকে দোষারোপ করা নয়। যে মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটেছে সেটা এই ছবির মাধ্যমে আরও একবার মানুষের মনে জীবন্ত করে দেবে। 

সিনেমার নাম 'প্রশ্ন', ফিল্মি কেরিয়ারে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এমন কোনও প্রশ্ন আজও মনের ভিতর রয়েছে?

ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে প্রশ্ন ঠিক নয়, তবে অনেক কিছু জানার আছে। যেমন অভিনেতাদের থেকে অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক অনেক সময়ই কম কেন হয়। নারীকেন্দ্রীক ছবি তৈরি হলে সেটা হল পেতে সমস্যা কেন হয়? এমনও না যে পুরুষকেন্দ্রীক ছবি বক্স অফিসে ঝড় তুলছে!! কিন্তু, লিঙ্গভিত্তিক একটা বৈষম্য আজও বর্তমান। আমার মনে হয়, সিনেমার গল্পই ছবি ভাল-খারাপের মাপকাঠি হওয়া উচিত। যেদিন সেটা প্রমাণ হবে সেদিনই এই সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে। অনেক ছোট বয়স থেকে অভিনয় করছি। প্রথম ছবিতেও কাস্টিং কাউচের শিকার হতে হতে হয়নি। তবে এমন ঘটনা যে একেবারেই ঘটেনি তাও নয়। সেটা প্রত্যেকেই জানে। আমি নতুন করে সেই কথা বলে ওই মানুষটাকে পাবলিসিট দিতে চাই না। আমার অনেক ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফল হননি।

মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি থেকে অনেকদিন দূরে। ইন্ডাস্ট্রিতে গুটি কয়েক মানুষই প্রাধান্য পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে?

বাংলাতে বাণিজ্যিক ছবির সংখ্যা এখন অনেক কমেছে। অনেকদিন পর খাদানের হাত ধরে বাণিজ্যিক ছবি সফল হল। আশা করি আগামি দিনে আরও ভাল মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি তৈরি হবে। আমি তো কেরিয়ার শুরু করেছি বাণিজ্যিক ছবি দিয়ে। আর আমার মনে হয়, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখতে বাণিজ্যিক ছবির একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমি নিজেও সেই স্রোতে ফিরতে চাই। 

বাংলা ছবি মুক্তি ঘিরে আজকাল প্রতিযোগীতা তৈরি হয়েছে। এই লড়াই ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে ক্ষতিকর?

প্রথমত, আমার মনে হয় এই প্রতিযোগীতা ভিত্তিহীন। হিন্দি ছবি যে পরিসরে মুক্তি পায় বাংলা সিনেমার ব্যপ্তি সেই তুলনায় অনেক কম। অথচ বলিউডে কিন্তু, যদি কোনও বড় অভিনেতার ছবি মুক্তি পায় তখন কিন্তু, অন্য ছবি মুক্তির দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে একদিনে সব ছবি রিলিজ করে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হলে আমার তো মনে হয় আখেরে ক্ষতিটা ইন্ডাস্ট্রিরই হয়। 

বলিউড ও দক্ষিণী ছবির ভিড়ে বাংলা ছবি হারিয়ে যাচ্ছে! বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানাতে হচ্ছে। একজন সিনিয়র স্টার হিসেবে এটা শুনতে কতটা খারাপ লাগে?

অবশ্যই খারাপ লাগে। বাংলার মানুষ কেন বাংলা ছবি দেখছে না? বাংলা ছবি দেখার জন্য আকুতি করতে হয়! হিন্দি বা দক্ষিণী ছবি রিলিজ করলে বাংলা ছবির শো-টাইম বদলে ফেলা হয়। হল সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনাগুলো তো অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রত্যেকটা বাংলা ছবি যদি তার নিজস্ব স্পেসটা পায় তাহলে হয়ত অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

রাজ চক্রবর্তীর থেকে সিনেমার প্রস্তাব পেলে বাণিজ্যিক ছবিতে কামব্যাক করবেন?

এই প্রশ্নটা আমার জীবনে গুরুত্বহীন। এই প্রসঙ্গে আমি একটি শব্দও খরচ করতে চাই না। 

আরও পড়ুন: আমার সঙ্গে প্রেম করতে হলে আগে কথাবার্তা বলতে হবে, মেয়ে তো বলে ডেটে যাও, এত কথা বলার কী আছে: স্বস্তিকা

Bengali Film Industry Bengali Song Payel Sarkar Bengali Film Bengali Actress Bengali Cinema