তিনি টলিউড ইন্ডাস্ট্রি। সিনেমার পর্দা থেকে তার বাইরে নানা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সম্প্রতি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'গুমনামী' ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। আর এই ছবির জন্যই বিতর্কের সম্মুখীনও হয়েছেন।এদিন সিনেমা থেকে বর্তমান সমাজ সব নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
'গুমনামী' করতে রাজি হলেন কেন?
একটা তো বড় কারণ বেশকিছু বছর ধরেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছবি না হলে আমি করিনা। আর সৃজিতের এই ছবিটা সেরকমই। তাছাড়া এরকম একটা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে ছবি করা...তবে প্রথমেই আমি চরিত্রটার জন্য রাজি হইনি। তিন-চারমাস সময় লেগেছিল হ্যাঁ বলতে। তবে জানিনা কেন সৃজিত বরাবর বলে এসেছে 'তুমি পারবে'।
চরিত্রটা কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন?
গুমনামী বাবা-র চরিত্রটা খুব কঠিন ছিলনা, কিন্তু নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস আমার জন্য ভীষণ কঠিন লড়াই ছিল।এরকম নয় আমি ওনার আত্মীয়, ওনার মতো দেখতেও নই, থিয়েটার করিনা, আমার নিজের একটা ইমেজ রয়েছে- আমিও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এতবছর ধরে দেখছে দর্শক আমাকে দেখছে। সেখানে এটা ভেঙে ওই মেকওভার করা সত্যিই কঠিন ছিল। কোন কারণেই সেই মানসিক জায়গাটাকে পৌঁছতে পারছিলাম না।
সত্যি বলতে কি, পৃথিবীর কোনও অভিনেতা নেতাজি, গান্ধিজী কিংবা হিটলারের মতো চরিত্র করতে বললে সে মানা করবে! এই সুযোহ তো একবারই আসে। আমি তো তাও লাকি একটা লালন ফকির, একটা অ্যান্টনি ফিরিঙ্গীর মতো চরিত্র করতে পেয়েছি, আজকে নেতাজী করছি। অভিনেতা হিসাবে এই চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তো কাম্য। সৃজিতের যদিও এই চরিত্রটার তৈরি করার পিছনে অনেক বেশি কৃতিত্ব রয়েছে। আর রাজকুমারকে সিরিজে দেখে বুঝেছি শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে চরিত্র হয়ে ওঠা যায়।এটা তো নেতাজির বায়োপিক নয়, তাই অনেক খাটতে হয়েছে। বেশি খেয়েছি, ওনার সমস্ত ভিডিও দেখেছি, হাঁটাচলা রপ্ত করার চেষ্টা করেছি। বাকিটা তো দর্শকের হাতে।
আরও পড়ুন, ‘গুমনামী’-র মুক্তিতে বাধা নেই, কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ জনস্বার্থ মামলা
কিন্তু পরবর্তিতে এই ছবিটা নিয়ে যেভাবে বিতর্ক হয়েছে, তাতে কখনও হতাশা গ্রাস করেনি? আপনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করা হয়েছে।
দেখুন, বিতর্ক হবে এটা ছবিটা তৈরি করার সময় থেকেই আমরা জানতাম। তবে একটা জিনিস ভাল লাগছে নেতাজিকে নানান রকম কাজ হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য কাজ যেখানে গিয়ে শেষ করেছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের গুমনামী সেখান থেকে শুরু হয়। বাঙালি পরিচালক পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই প্রশ্নটা তুললেন এটা বোধহয় খুব প্রয়োজন ছিল। আজকের প্রজন্ম ছবিটা দেখার পর তাঁদের মনের মধ্যে যদি প্রশ্ন ওঠে এবং প্রশ্নের ঝড় তোলেন তাহলেই ছবিটার সার্থকতা। সৃজিত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি। ছবিটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থেকে যাবে।
আরও পড়ুন, টলিউডে ‘খোলা হাওয়া’, বিজেপির নতুন শাখা থেকে তৃণমূলকে তোপ বাবুলের
আমরা কি ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছি?
হ্যাঁ তা তো কিছুটা হয়ে পড়ছিই। সিনেমা না দেখে, বই না পড়ে প্রতিক্রিয়া দিই এবং এখন প্রতিক্রিয়া জানানোর প্ল্যাটফর্মটা এত সহজ হয়ে গিয়েছে। এত মতামত আগে মানুষ দিতে পারলেও সেটা নিজের বাড়ি কিমবা পাড়ার আড্ডায় সীমাবন্ধ থাকত। এখন সেটা সোশালি সব জায়গায় চলে আসছে। ব্যক্তিগত জায়গায় বলব, নিজের কাজ করে যান। ভাল -মন্দ থাকবেই, সেটা জীবনের অঙ্গ।
আরও পড়ুন, পুজোর ফ্যাশন: সাবেকী থেকে নয়া ট্রেন্ডের সন্ধান
প্রযোজনা, অভিনয়, ইন্ডাস্ট্রির এত ঝক্কি সবটা সামলে এখন কেবল গুমনামী-র প্রচারে ব্যস্ত?
এই মূহুর্তে অতনুর ছবির শুটিং করছি, খুবই ব্যস্ত। গুমনামী রিলিজ, নিজের কাজ সবমিলিয়ে বিগত একমাস আমি তিনঘন্টা ঘুমিয়েছি, খাওয়া, এক্সারসাইজ সব বানচাল হয়ে গেছে (হাসি)। এটা প্রতি বছরই হয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। আর অতনুর ছবিটা ভীষণ কঠিন একটা ছবি। আসলে যতক্ষণ ভালবাসা আছে সেই কাজ করি, নইলে দমবন্ধ লাগে। তাও মনে হয় আরও কাজ প্রয়োজন। শুধু অভিনয় নয়, আরও অন্যান্য কাজের মধ্যে থাকতে ভালবাসি।