২০১৬ সালের ১ এপ্রিল, জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকাল মৃত্যু গোটা বিনোদন দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দেয়। "বালিকা বধূ"-খ্যাত এই অভিনেত্রীকে মুম্বইয়ের গোরেগাঁওয়ে তার ভাড়া বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে গণ্য করে। তবে তার মৃত্যু ঘিরে প্রেমিক রাহুল রাজ সিংয়ের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে।
রাহুল রাজ সিংয়ের দাবি: ‘প্রত্যুষা হতাশাগ্রস্ত ছিলেন, মদ্যপান ছিল সমস্যার মূল’
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাহুল রাজ সিং দাবি করেছেন যে প্রত্যুষা মানসিক অবসাদে ভুগতেন। এবং দীর্ঘদিন ধরেই মদ্যপান করতেন। বলিউড বাবলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ওর বাবা ওকে ছোটবেলা থেকেই মদ খাওয়াতেন। আমি ওর জীবনে আসার আগেই সে মদ্যপানে অভ্যস্ত ছিল। আমি তাকে সাবধান করেছিলাম যে, এভাবে চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত বিপদ ডেকে আনবে।”
তিনি জানান, বালিকা বধূ সিরিয়াল শেষ হওয়ার পরে প্রত্যুষার পরিবারে টানাপড়েন শুরু হয়। তার বাবা শান্ত সময় ভালো ব্যবহার করলেও মদ্যপানের পর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতেন। রাহুল আরও জানান, তিনি প্রত্যুষাকে মদ্যপান কমাতে এবং জীবনে স্থিরতা আনতে উৎসাহ দিতেন। “আমি ওকে ডায়েরি লিখতে বলতাম, যাতে নিজের খারাপ অভ্যাসগুলো শনাক্ত করতে পারে। এমনকি আমি চেষ্টা করেছিলাম ওকে আবার একটি শক্তিশালী চরিত্রে ফিরিয়ে আনতে।”
Riddhi Sen-Mamata Shankar: স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতর্কে মমতাকে জোরাল আক্রমণ ঋদ্ধির, টেনে আনলেন পরিবারকেও..
তিনি বলেন, “আমি চেয়েছিলাম সে বালিকা বধূর মতো আরেকটি ধারাবাহিকে প্রধান চরিত্রে ফিরুক। কিন্তু এরপর তার কাজের সুযোগ কমে যেতে থাকে। একাধিক প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায় বা সফলতা পায় না। তার সৃজনশীল বিষয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে মতানৈক্য হয়, এবং আর্থিক সমস্যাও বাড়তে থাকে।”
অভিযোগ ও মামলা: আদালতের পর্যবেক্ষণ কী বলছে?
প্রত্যুষার মৃত্যুর পর রাহুল রাজ সিংয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে ছিল ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা), ৫০৪ (ইচ্ছাকৃত অপমান), ৫০৬ (ভয় দেখানো) এবং ৩২৩ (শারীরিক আঘাত)। যদিও তিনি আগাম জামিন পান, আদালতে মামলা চলতে থাকে।
Plane Crash in Bangladesh: বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুমিছিল! বেরোচ্ছে একের পর এক এম্বুলেন্স, বাংলাদেশে আতঙ্কে তারকারা..
মামলার তদন্তে উঠে আসে যে প্রত্যুষা গভীর আর্থিক সঙ্কটে ছিলেন। তার গাড়ি ঋণের কিস্তিও বাকি ছিল। পুলিশ তার বাড়িতে তিনটি বিয়ার ক্যান এবং বেশ কিছু মদের বোতল উদ্ধার করে। এছাড়া জানা যায়, মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি গর্ভপাত করান, যাতে রাহুলের বক্তব্য অনুযায়ী ছিল "পারস্পরিক সিদ্ধান্ত"।
২০২৩ সালের আগস্টে আদালত একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দেয়। বিচারক এস. জে. আনসারি বলেন, “তিনি মাসি বর্নালি ব্যানার্জি এবং এক ট্যারো কার্ড রিডারের কাছে জীবন ছেড়ে দিতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। অভিযুক্তরা তাঁকে এমন এক করুণ অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল, যা কল্পনার বাইরে। এমনকি স্বাধীনভাবে বসবাস করলেও, তিনি ছিলেন রাহুল রাজ সিংয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।”