Shailendra: 'একসময় পায়ের কাছে', মাত্র ৪৩-এ সব শেষ, কিংবদন্তি পরিচালকের জন্যই অকালে প্রাণ যায় গীতিকারের?

প্রথমে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও, পরবর্তীতে আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে রাজ কাপুরের খামে দেওয়া টাকা নিতে গিয়ে বদলে দেন নিজের লেখা কয়েকটি গান। সেখান থেকেই জন্ম হয় ১৯৪৯ সালের বরসাত ছবির অমর গান...

প্রথমে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও, পরবর্তীতে আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে রাজ কাপুরের খামে দেওয়া টাকা নিতে গিয়ে বদলে দেন নিজের লেখা কয়েকটি গান। সেখান থেকেই জন্ম হয় ১৯৪৯ সালের বরসাত ছবির অমর গান...

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
shailendra-raj-kapoor-e1756531658232

চেনেন এই মানুষটিকে?

মাত্র কয়েক মাস আগেই প্রয়াত কিংবদন্তি রাজ কাপুরের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গোটা কাপুর পরিবার, একত্রিত হয়েছিল তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে। আয়োজিত হয়েছিল বিশেষ চলচ্চিত্র উৎসব, যেখানে রাজ কাপুরকে আদর্শ মেনে বড় হওয়া শিল্পীরাও তাঁকে স্মরণ করেন। এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রীও সেই সময় তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে- রাজ কাপুর কি একাই তাঁর সাফল্যের জন্য কৃতিত্বের দাবিদার?

Advertisment

১৯৫০-এর দশকে ‘শ্রী ৪২০’, ‘আওয়ারা’-র মতো ছবি ভারতীয় সিনেমাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে যায়। আজও রাশিয়ার প্রবীণরা ‘মেরা জুতা হ্যায় জাপানি’ গানটির কথা মনে রেখেছেন। শুধু তাই নয়- ‘জিনা ইয়াহাঁ মরনা ইয়াহাঁ’, ‘আওয়ারা হুঁ’, ‘জিনা ইসি কা নাম হ্যায়’, ‘প্যায়ার হুয়া ইকরার হুয়া’— এমন অসংখ্য গান, যা ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্বের দরজায় পৌঁছে দিয়েছিল, লিখেছিলেন এক অসাধারণ গীতিকার। রাজ কাপুরের উইং ম্যান ছিলেন তিনি। তাঁর নাম শৈলেন্দ্র।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয়, সে সময় গীতিকারদের কোনও রয়্যালটি বা বাড়তি অর্থ দেওয়া হতো না। মাসিক মাত্র ৫০০ টাকা বেতনে আর.কে. স্টুডিওর কর্মী হয়েও শৈলেন্দ্র লিখেছিলেন সেরা কিছু গান। ১৯২৩ সালে, রাওয়ালপিন্ডিতে শঙ্করদাস কেশরীলাল নামে জন্মগ্রহণ করা শৈলেন্দ্র মীরাট রেলওয়েতে চাকরি করতেন। পরে বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) চলে এসে যোগ দেন আইপিটিএ-র কবিতা পাঠের আসরে, সেখানেই প্রথম রাজ কাপুরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ। রাজ তখনই বুঝেছিলেন, শৈলেন্দ্র সাধারণ কবি নন, তিনি ‘জনতার কবি’।

Advertisment

Ankush Hazra-Betting App: পুজোর আগে আইনি জটিলতা, 'রক্তবীজ ২'-র প্রচারের মাঝে ইডির সমন! কবে হাজিরার নির্দেশ অঙ্কুশকে?

প্রথমে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও, পরবর্তীতে আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে রাজ কাপুরের খামে দেওয়া টাকা নিতে গিয়ে বদলে দেন নিজের লেখা কয়েকটি গান। সেখান থেকেই জন্ম হয় ১৯৪৯ সালের বরসাত ছবির অমর গান, যা ছিল হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে প্রথম ‘টাইটেল সং’। এরপর শুরু হয় তাঁদের একসঙ্গে কাজ। শৈলেন্দ্র কখনও অর্থলোভী ছিলেন না। নিজের বাড়ি, পরিবার চালানোর মতো আয় হলেই তিনি খুশি হতেন। প্রায়ই রেকর্ডিং শেষে টেকনিশিয়ান ও সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে নিজের পারিশ্রমিক ভাগ করে দিতেন। তাঁর মেয়ে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন- রাজ কাপুর প্রতি মাসে নিয়মিত ৫০০ টাকা বেতন দিতেন, গান লিখুন বা না লিখুন।

‘আওয়ারা’ মুক্তির পর তাঁদের সবার ভাগ্য বদলে যায়। ছবির গান ‘আওয়ারা হুঁ’ সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপুল জনপ্রিয় হয়। পরে শৈলেন্দ্র স্বীকার করেছিলেন, তিনি গানটি স্ক্রিপ্ট না শুনেই লিখেছিলেন, শুধু ছবির নাম জেনে। প্রথমে রাজ কাপুর গানটি ফিরিয়ে দিলেও, পরে আব্বাস সাহেবের পরামর্শে সেটিই হয়ে ওঠে চলচ্চিত্রের শিরোনাম গান। রাজ কাপুর সবসময় শৈলেন্দ্রকে অগাধ শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর ছেলে মনোজ শৈলেন্দ্র জানিয়েছিলেন, "রাজ সাহেব প্রায়ই গীতিকারের পায়ের কাছে বসতেন এবং তাঁকে ‘কবিরাজ’ বা ‘পুশকিন’ বলে সম্বোধন করতেন।" 

Sohini Ganguly New Born Death: সন্তানহারা মায়ের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা, সোহিনীর সমর্থনে কী সাফাই মানসী-অহনা-রূপসাদের?

কিন্তু জীবনের শেষ দিকে এক দুঃখজনক অধ্যায় শুরু হয়। শৈলেন্দ্র ১৯৬১ সালে 'তিসরি কসম' নামের একটি সিনেমার প্রযোজনা শুরু করেন। প্রথমে বাজেট ছিল ২–৩ লক্ষ টাকা, কিন্তু পাঁচ বছর ধরে নানা জটিলতায় ছবিটি শেষ হতে খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২২–২৩ লক্ষ। ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। ছবিটি মুক্তির কিছুদিন পরই ৪৩ বছর বয়সে অকালে মারা যান শৈলেন্দ্র। অনেকে মনে করেন, ছবির ব্যর্থতাই তাঁর মৃত্যুর প্রধান কারণ। 

পরে কবি-গীতিকার জাভেদ আখতার অভিযোগ করেছিলেন, রাজ কাপুরের জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে ঋষি কাপুর তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন, তাঁদের পরিবার শৈলেন্দ্রকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল এবং কোনও পারিশ্রমিকও নেননি। যা-ই হোক, অকালমৃত্যু হলেও শৈলেন্দ্র রেখে গিয়েছেন এক অমূল্য ধনভাণ্ডার। মেরা নাম জোকার-এর বিখ্যাত গান ‘জিনা ইয়াহাঁ মরনা ইয়াহাঁ’-র মতো সৃষ্টি তাঁর কলমেরই উপহার, যা আজও ভারতীয় সিনেমার গৌরব বহন করছে।

bollywood Raj Kapoor Entertainment News Today