ছবি- বর্ণপরিচয়
পরিচালক- মৈনাক ভৌমিক
অভিনয়ে- আবির চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, প্রিয়াঙ্কা সরকার, মিঠু চক্রবর্তী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
রেটিং- ২/৫
খুনের মোটিভ বোঝা যাচ্ছে না, প্রত্যেকটা খুনের পর ক্লু রেখে যাচ্ছে খুনী, সঙ্গে অডিও টেপ। সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে শাসন ব্যবস্থাকে। কিন্তু প্রশাসন তাঁকে ধরতে ব্যর্থ। ব্র্যাড পিট ও মরগান ফ্রিম্যানের সেভেন-এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল ছবিটা দেখতে দেখতেই। সাত বছরের পরে দু বছরের বিরতি, তারপরে ফিরে আসে সে, আর এখান থেকেই ভাঙা গড়ার খেলায় ঢুকে পড়ে মৈনাক ভৌ্মিক। 'বর্ণপরিচয়', মৈনাকের প্রথম থ্রিলার।
গল্পের শুরু থেকেই টানটান উত্তেজনা ধরে রেখেছে পরিচালক। প্রথমের পরিক্তত্য কারখানায় হাত বাঁধা, মুখে সেলোটেপ আটকানো এক ব্যক্তি আর তার সামনে খুনী। কাট টু ঘরে বসে নেশায় চুর প্রাক্তন পুলিশ অফিসার ধনঞ্জয়। পুরো ঘটনাটা খবরে দেখে কিন্তু কোনও হেলদোল নেই। বারবার পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তার হাতে পায়ে ধরে কেসটা সলভ্ করার আর্জি জানায়, কিন্তু সে তখন ব্যর্থ প্রেমিক ও পরাজিত বাবার ভূমিকায়। খুনী চিঠি লিখে রণক্ষেত্রে ফিরতে বলে। সেখানেও লুকিয়ে ক্লু।
আরও পড়ুন, কোন লুকে মানাচ্ছে গোয়েন্দা জুনিয়রকে?
এতক্ষণে গল্পের গাড়ি গড়গড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না ছবির নাম বর্ণপরিচয় কেন? কেনই বা মৃত্যু মিছিল? শুধু বোঝা যাচ্ছে চিত্রনাট্য এগোবে বলে একের পর এক যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্ত তাতে প্রাণ নেই, রস নেই। ধাঁধার জট খুলতে পারলেই প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাওয়ার মত উত্তেজনা নেই। বড্ড প্রেডিকটেবল। সিটে বসে আপনার থ্রিলারের গোয়েন্দা হতে ভাল লাগবে না।
তবে অভিনয়ের জোরে শেষ পর্যন্ত দেখে ফেলা যায় ছবিটা। যদিও তার বেশিরভাগ কৃতিত্বটাই যিশুর। সিরিয়াল কিলার হিসাবে আবিরের অভিনয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বড্ড সীমাবন্ধতা রয়েছে। তুলনায় যিশু অনেক সাবলীল। পঞ্চমহাভূতের একটা তালমিল রাখার চেষ্টা করেছেন বটে মৈনাক, তবে তা কতটা যুক্তি সঙ্গত করতে পেরেছেন তা আপনারা যাচাই করুন। আর অত্যুক্তি হল সংলাপের। অকারণ কমিক রিলিভ বোকা বোকা।
আরও পড়ুন, রাতের শহরে ফের হেনস্থা, থানায় অভিযোগ অভিনেতার
তবে প্রংশসা করতে হয় রিসার্চের। নৌকাডুবি, রবীন্দ্রনাথ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, পদ্মানদীর মাঝি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, লালনগীতি, কলকাতার নতুন পুরনো যোগসাজশ বেশ ভালই ঝালিয়ে নিয়েছেন মৈনাক। কিন্তু এই হিসাব কষতেই দেখা গেল দেড় ঘন্টা পার। অগত্যা তিরিশ মিনিটে ইতি টানতে বেগ পেতে হল। ভাল সম্পাদনা, ক্যামেরা এবং আবহ। শুধু ছবির সবটুকু বলা যায় না, তাই কিছু যুক্তি পরিচালকের জন্য রেখে দেওয়া বাঞ্ছনীয়, তবে হলে বসে ছবির সঙ্গে সঙ্গেই আপনি সবটা বলে ফেলতে পারেন।