একজন মেগাস্টার, আরেকজন টলিউডের সুপারস্টার। অতঃপর দেব-মিঠুন যে সিনেমায়, তা নিয়ে যে দর্শকদের মধ্যে আলাদা কৌতূহল যে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। শুক্রবারই মুক্তি পেয়েছে অভিজিৎ সেন পরিচালিত এবং অতনু চৌধুরি নিবেদিত 'প্রজাপতি'। কেমন হল? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
গতবছর দেবের সঙ্গে শীতের আমেজে ভাল থাকার 'টনিক' নিয়ে এসেছিলেন পরিচালক অভিজিৎ সেন। আর এবার তো বড়দিনেই বসন্তকে ডেকে আনলেন। বাবা-ছেলের দুষ্টু-মিষ্টি সমীকরণ। 'প্রজাপতি'র ডানায় হরেক রঙে বুনে দিলেন প্রেম-ভালবাসা, আবেগের গল্প। তবে এবার দেব-অভিজিৎ জুটির ক্যানভাসে রং ভরলেন আরও একজন। তিনি মিঠুন চক্রবর্তী। এই সিনেমার সেরা প্রাপ্তি।
মধ্যবিত্ত সংসারে বাবা-ছেলের রোজকার খুনসুঁটির কড়চা, মশলাদার রাজনৈতিক টিপ্পনি, পুরনো বন্ধুত্ব ফিরে পাওয়া, ভাব-ভালবাসা, সমাজের প্রচলিত ট্যাবু ভাঙা.. সমস্ত উপকরণ ঢেলে খাসা চিত্রনাট্য কষানোর চেষ্টা করেছেন শুভদীপ দাস। পরিচালক অভিজিৎ সেনের ফ্রেমে গোপী ভগতের ক্যামেরায় ডানা মেলেছে দেব-মিঠুনের 'প্রজাপতি'। চিত্রনাট্যের পরতে পরতে মুখরোচক মজার সংলাপ ছবির ইউএসপি। ড্রামা-মেলোড্রামায় ভরপুর তরুণ মজুমদারকে উৎসর্গ করা এই সিনেমা।
এবার আসা যাক অভিনয়ের কথায়। মিঠুন চক্রবর্তীর অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার আর প্রয়োজন পড়ে না এত দশক বাদে। গোটা সিনেমাজুড়ে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গিয়েছেন। বাড়ির কর্তার মতোই তাঁকে 'প্রজাপতি'র কর্তা বললেও অত্যুক্তি হয় না! এই ছবি তাঁরই। এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই ভিন্ন স্বাদের সিনেমায় চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে ভেঙে চলেছেন দেব। এই ছবিতেও তাই। হিরোইজম-এর বদলে তাঁর অভিনেতা সত্ত্বা দিনোত্তর আরও প্রকট হচ্ছে। দেবের আবেগি সংলাপ বলার ধরণও প্রশংসার দাবিদার। 'সাঁঝবাতি' এবং 'টনিক'-এর দেবের ছায়া মিললেও তিনি এখানে এককথায় আরও পরিণত অভিনেতা। দেব যদি 'প্রজাপতি'র 'অর্জুন' হন, তাহলে মিঠুন চক্রবর্তী এই সিনেমার 'সারথি কৃষ্ণ'।
<আরও পড়ুন: বাড়ি ফিরতেই রাজের কাঁধে বিরাট দায়িত্ব, মজা নিচ্ছেন শুভশ্রী?>
কুসুমের চরিত্র ছাড়া এই রান্নার স্বাদ যথাযথ হত না। সেক্ষেত্রে মমতাশঙ্কর 'প্রজাপতি'র প্লাসপয়েন্ট। বিশেষভাবে নজর কাড়ে জামাইয়ের ভূমিকায় অম্বরীশ ভট্টচার্যের অভিনয়। আর খরাজ মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি। মেয়ের চরিত্রে কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও ভাল। বেশ সাবলীল ছোটপর্দার শ্বেতা ভট্টাচার্য এবং কৌশানী মুখোপাধ্যায়।
গল্পটা খানিক বলা যাক.. সত্তরোর্ধ্ব বাবা। গৌর চক্রবর্তী। তবে শরীরের বয়স সত্তরের কোঠায় হলেও মনের দিক থেকে কিন্তু এখনও তরতাজা সবুজ। সারা বাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছেন। রান্না ঘরে খুন্তি নেড়ে ছেলের পছন্দের টিফিন তৈরি করছেন। গল্প করতে, আড্ডা দিতে তার জুড়ি মেলা ভার! ভারী মজার মানুষ। 'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে..', প্রবাদটিকেই যেন বদলে দিয়েছেন গৌরবাবু। তবে গোটা বাড়িতে বড্ড একলা অনুভব করেন। হাজার হলেও বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়েদের চাওয়া-পাওয়া বলতে, ছেলে-মেয়েদের কাছে থাকা। বউমা কিংবা মেয়ে-জামাই থাকবে। গৌরবাবুর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা নয়। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এবার ছেলের বউ আনতে চান ঘরে। এদিকে ছেলের মন নেই বিয়েতে। সে কাজপাগল।
<আরও পড়ুন: বিয়ে না করেই ‘বিরাট সুখী’ দেব! অভিনেতার ওপর রেগে গিয়ে মারতে গেলেন রচনা?>
ছেলে জয়ের ভূমিকায় দেব। পেশায় ওয়েডিং প্ল্যানার। অন্যের চার হাত মিলিয়ে সংসার বাঁধে, এদিকে নিজের বিয়ের পিঁড়িতে বসার কোনও ইচ্ছে নেই। কারণ ব্যবসার পরিসর আরও বাড়াতে চায় সে। তাই বাবা আদা-জল খেয়ে পাত্রীর সন্ধান করলেও দেবের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আর এহেন ছেলেই একদা নিজের অফিসের কর্মী মালা মালা ওরফে শ্বেতা ভট্টাচার্যের প্রতি টান অনুভব করেন। এরই মাঝে গল্পে আরেকটা টুইস্ট!
গৌরবাবুর দেখা হয় পুরনো বন্ধু কুসুম ওরফে মমতাশঙ্করের সঙ্গে। নিঃসঙ্গ জীবনে নতুন টান অনুভব করেন। একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়া, আইসক্রিমের স্বাদ ভাগ করে নেন গৌর-কুসুম। ফিরে পাওয়া বন্ধুত্বের গল্পকে দারুণভাবে পরিবেশন করেছেন পরিচালক অভিজিৎ সেন। তারপর শেষমেশ 'প্রজাপতি' বসবে কার গায়ে, বাবা না ছেলে? সেই উত্তর এখানে না দেওয়াই ভাল। বরং বড়দিনের ছুটিতে সপরিবারে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখে আসতে পারেন এই সিনেমা।