New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/Mission-Mangal.jpg)
'মিশন মঙ্গল'-ছবির দৃশ্য
চরিত্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এই ছবির শক্তি। কিন্তু ছবিতে বিজ্ঞানের জায়গাগুলো বড়ই দুর্বল, একেবারেই অজ্ঞদের কথা মাথায় রেখে লেখা।
'মিশন মঙ্গল'-ছবির দৃশ্য
Mission Mangal movie cast: বিদ্যা বালন, অক্ষয় কুমার, সোনাক্ষী সিনহা, তাপসী পান্নু, নিত্যা মেনন, কীর্তি কুলহরি, এইচ জি দত্তাত্রেয়, শর্মন যোশী, বিক্রম গোখলে, দলীপ তাহিল, সঞ্জয় কাপুর, মহম্মদ জিশান আয়ুব
Mission Mangal movie director: জগন শক্তি
Mission Mangal movie ratings: ২.৫/৫
নভেম্বর ২০১৩ সালে উৎক্ষেপিত হয় বহু প্রতীক্ষিত মঙ্গলযান। তার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পাঁচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র বহনকারী হালকা ওজনের এই স্যাটেলাইট মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। সৃষ্টি হয় ইতিহাস।
আজ পর্যন্ত ভারতই প্রথম দেশ, প্রথমবারের চেষ্টাতেই যারা মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠাতে পেরেছে। তাও আবার মহাকাশ গবেষণায় তথাকথিত রথী-মহারথী আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের তুলনায় অনেকগুণ কম খরচে। নিশ্চিতভাবেই এতে বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান, এবং সারা দুনিয়া জেনেছে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরো-র বিজ্ঞানীদের আশ্চর্য দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তির কথা।
এ ধরনের ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বলিউড ছবি বানানোর যে অন্যতম প্রধান অসুবিধে, তা একেবারে প্রথম থেকেই 'মিশন মঙ্গল' ছবিতে বিদ্যমান: পরিভাষা এড়িয়ে গল্প বলা। বিশেষত যখন সবাই জানেন কীভাবে এই মিশনের পরিকল্পনা করা হয় (প্রথম ঘোষণা হয় ২০০৮ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকারের সময়), কীভাবে এটিকে প্রবল প্রতিকূলতার মুখেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং অবশেষে সম্পূর্ণ হয় (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালের শুরুতে)। কীভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে জটিল, খটখটে শুকনো বৈজ্ঞানিক তথ্য পেশ করা যায় দর্শককুলের কাছে, যাঁদের প্রধান চাহিদা হলো বিনোদন?
আরও পড়ুন: সেক্রেড গেমস টু: সপ্তাহান্তের ছুটির জন্য এক্কেবারে পারফেক্ট
এর উত্তর দ্বিমুখী: এক, বিজ্ঞানের দিকটা যতটা সম্ভব সোজা সরল করে ফেলা; দুই, বড়সড় একজন তারকাকে (অবশ্যই পুরুষ হতে হবে) ছবির অগ্রভাগে রাখা। এই প্রেক্ষিতে মঞ্চে প্রবেশ করেন রাকেশ ধাওয়ান (অক্ষয় কুমার), যিনি থাকবেন তারা শিন্ডের (বিদ্যা বালন) নেতৃত্বাধীন এই মিশনের নজরদারির দায়িত্বে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা NASA (নাসা)-ফেরত এক নাক উঁচু বিজ্ঞানীর (তাহিল) অবজ্ঞা এবং তাচ্ছিল্য মাথায় নিয়ে যুগান্তকারী স্যাটেলাইট তৈরি করেন একা গান্ধী (সোনাক্ষী), কৃতীকা আগরওয়াল (তাপসী), নেহা সিদ্দিকি (কীর্তি), বর্ষা পিল্লাই (মেনন), পরমেশ্বর নাইডু (যোশী) এবং অনন্ত আয়ার (দত্তাত্রেয়)।
এঁরা সকলেই উপগ্রহ, যাদের কেন্দ্রে রয়েছেন চাঁদ-রূপী অক্ষয়, তবে ছবিটির একটি প্রশংসনীয় দিকের উল্লেখ না করলেই নয়। তা হলো বিজ্ঞানীদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কাহিনী আলাদা করে বলার চেষ্টা। এখানেই ছবি হিসেবে 'মিশন মঙ্গল'-এর সার্থকতা। আমরা তারা শিন্ডেকে একজন দক্ষ ঘরণী তথা মা হিসেবেও দেখি, যাঁর ব্যাজারমুখো স্বামীর (সঞ্জয় কাপুর) অসমর্থনের বিপরীতে রয়েছে তাঁর শ্বশুর এবং সন্তানদের সমর্থন। তারার ভূমিকায় অনবদ্য বিদ্যা বালন, এবং ছবিটির আসল ভরকেন্দ্রও তিনিই বটে। বেশ কিছু জায়গায় মনে হতেই পারে, একা হাতে ছবিটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যা।
আরও পড়ুন: ‘মিশন মঙ্গল’-এর শুরুটা জোরদার হবে, এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বক্স অফিস
বাকি বিজ্ঞানীদের চরিত্রগুলির কাঠামো একটু ঢিলে, ধর তক্তা মার পেরেক গোছের, যদিও তারকাদের চেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বর্ষা পিল্লাইয়ের ভূমিকায় মেননের মতো অপেক্ষাকৃত অচেনা মুখ। তাঁর আছেন এক স্নেহশীল স্বামী (কোহলি) এবং এক ছিদ্রান্বেষী শাশুড়ি, কিন্তু তিনি টিম এবং ছবি, উভয় ক্ষেত্রেই নিঃসন্দেহে সম্পদ। শর্মন যোশীকে গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্রে দেখতে ভালো লাগে। বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাওয়া এক মুসলিম তরুণী হিসেবে কীর্তি কুলহরি ছাপ ফেলতে সক্ষম হন। তাপসী পান্নুর চরিত্রটি খুব খারাপ গাড়ি চালান, এবং তাঁর ফৌজি স্বামীর (ছোট চরিত্রে আয়ুব) সঙ্গে থাকেন; বনের মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ান সোনাক্ষী।
এঁদের টুকরো টুকরো কথা এজন্যই বলা যে এঁরা আসেন, যান। দেশ নিয়ে বড় বড় কথা বলার জন্য তো অক্ষয় রয়েছেন। ছবিতে এটিই তাঁর একমাত্র কাজ। কিন্তু তাঁকে হিন্দি ছবির গানের ভক্ত বানানোটা কি খুব দরকার ছিল? যে কটি গান গুনগুন করেন, দায়িত্ব নিয়ে সেগুলিকে খুনও করেন।
সুতরাং চরিত্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এই ছবির শক্তি। কিন্তু ছবিতে বিজ্ঞানের জায়গাগুলো বড়ই দুর্বল, একেবারেই অজ্ঞদের কথা মাথায় রেখে লেখা। এবং হলিউডের চোখ-ধাঁধানো মহাকাশের ছবি দেখতে অভ্যস্ত দর্শকের কাছে এই ছবির কম্পিউটার গ্রাফিক্স কাঁচাই মনে হবে। কিন্তু কোথাও একটা সামঞ্জস্য আছে ছবির দর্শনের সঙ্গে। মনে রাখতে হবে, বিক্রম সারাভাই বা আব্দুল কালামের মতো আমাদের মহাকাশ গবেষণার পথপ্রদর্শকেরা তাঁদের যন্ত্রপাতি নিয়ে যেতেন গরুর গাড়ি করে। কাজেই ঝাঁ চকচকে গ্রাফিক্স হয়তো আমাদের ক্ষেত্রে বেমানান। বিশেষ করে যেখানে দেখানো হচ্ছে, দেশের এক শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী মঙ্গল যানে কম জ্বালানী ব্যবহারের পদ্ধতি খুঁজে বের করছেন আগুন নেভানো কড়াইয়ে 'পুরি' ভাজা দেখে।
অবজ্ঞার নয়, এসব দেখে স্নেহের হাসিই হাসবেন আপনি। এবং অস্বীকার করার উপায় নেই যে মহাকাশে 'মঙ্গল যানের' প্রথম দর্শন এবং সফলভাবে কক্ষপথে প্রবেশের পর, গর্বেও বুক ভরে উঠবে বটে। সুতরাং আজকের যুগের 'মিঃ ইন্ডিয়ার' সর্বময় উপস্থিতি সত্ত্বেও 'সব মঙ্গল হ্যায়'।