Parcel Movie cast: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, দামিনী বসু, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদার, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, তিয়াসা দাশগুপ্ত, কৌশিক অধিকারী
Parcel Movie Director: ইন্দ্রাশিস আচার্য
Parcel Movie Rating: ৩/৫
অপরাধ ও ভুলের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম রেখা আছে। অনেক সময়েই ফলাফল কতটা তীব্র, তার উপর নির্ভর করে বিচার করা হয়, যা ঘটেছে তা অপরাধ না ভুল। যে অপরাধ ঠিক ঠাওর করে ওঠা যায় না, বিছানা-চাদরে-মশারির জালে লুকিয়ে থাকে আনুবীক্ষণিক ভাইরাসের মতো, 'পার্সেল' হল সেই অপরাধের গল্প।
আরও পড়ুন: ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ নস্ট্যালজিয়ায় আবির-অর্পিতা-তনুশ্রী
খুব চেনা-জানা চরিত্র, যেমনটা দেখা যায় পাশের বাড়িতে অথবা পাড়ার গানের স্কুলে, আপাতদৃষ্টিতে যারা সাধারণ, তেমন মানুষের বেঁচে থাকাটাই এক একটা থ্রিলার আসলে। যে মেয়েটি উপার্জনে অক্ষম পঙ্গু স্বামীর ভিজিয়ে ফেলা বিছানা কাচে রোজ বাড়ি ফিরে অথবা বড়লোক-ডাক্তার দিদির প্রত্যাশায় পথ চেয়ে, মরণাপন্ন স্ত্রীকে নিয়ে বসে থাকে যে নিম্ন-মধ্যবিত্ত যুবক, তার জীবনের হাড়ে-মজ্জায় অনুভব করা প্রেম-ভয় আর নিরাপত্তাহীনতার চেয়ে বেশি থ্রিল কোনও সিরিয়াল কিলারের গল্পে নেই।
বিকৃতমস্তিষ্ক খুনি-মাফিয়াদের দীর্ঘশ্বাসের সেলিব্রেশন, যে ট্রেন্ডে ইদানীং বাংলা ছবি ভেসে গিয়েছে, তার থেকে বেশ খানিকটা দূরে, কোনও মধ্যবিত্ত পাড়ার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে এই ছবি। অনুভূতিপ্রবণ যে কোনও দর্শক এ ছবিতে নিজেকে দেখবেন, নিত্য ওঠাবসা যে স্বজনদের সঙ্গে তাদেরও দেখবেন। তেমন কোনও আত্মীয়ের কথা মনে পড়বে যার ফোন ধরা হয়নি আপনার। সেই ফোন আর আসবে না কোনওদিন।
ইন্দ্রাশিস আচার্য-র আগের দুটি ছবিও পরিবারেরই গল্প। বলা উচিত মধ্যবিত্তের গল্প। পরিচালক তাঁর সব ছবিতেই প্রতিদিনের স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা, ঔদাসীন্য, জড়িয়ে ধরা, ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার যে মধ্যবিত্ত জীবন তাকে নিজস্ব একটি ঢঙে দেখাতে চান। সে দেখা বেশ খানিকটা শ্লথ, কখনও শান্ত, কখনও একঘেয়ে। আবার সেই শ্লথের মধ্যেই আচমকা স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠে ভয়ঙ্কর।
আরও পড়ুন, সেরা তিন কন্যা, প্রথম রাসমণি! রইল টিআরপি সেরা দশ তালিকা
তবে এই স্ফুলিঙ্গগুলিকে পরিচালক সংলাপকেন্দ্রিক ট্রিটমেন্টে এনেছেন, চিত্রগ্রহণের ট্রিটমেন্টে নয়। একটু মন দিয়ে দেখলে তবেই দর্শক ধরতে পারবেন ঠিক কোথায় কোথায় ভয়ঙ্করের মুখ দেখা গেল। কিন্তু ছবিটি কিঞ্চিৎ দীর্ঘ। যদিও ইন্দ্রাশিস একটু স্লো বিল্ড-আপ পছন্দ করেন কিন্তু তার পরেও কিছু কিছু দৃশ্য এবং সিকোয়েন্স আর একটু ছোট হলেও অসুবিধা ছিল না। চিত্রগ্রহণে আরও একটু বৈচিত্র্য থাকলে ভাল হতো। ছবির সঙ্গীত পরিচালনা জয় সরকারের। ছবির মুড অনুযায়ী সঙ্গীতের ব্যবহারও ভাল। সাউন্ডস্কেপে নব্বইয়ের একটা স্বাদ আছে।
আসলে নব্বই দশকে যাঁরা বড় হয়েছেন তাঁদের সাঙ্গিতীক পার্সপেক্টিভ বর্তমান প্রজন্মের থেকে অনেকটাই আলাদা। এই ছবির সম্পূর্ণ মেজাজটাই নব্বই থেকে নব্য মিলেনিয়ামের সুরে বাঁধা, একটি অস্তিত্ববাদী দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। কীভাবে, তার সামান্য ইঙ্গিত দিলে ছবি দেখার আনন্দটা হারাবেন দর্শক। সেটাই এই ছবির থ্রিল। রাগসঙ্গীত শোনার সময় যে ধৈর্য্য নিয়ে বসতে হয়, অনেকটা সেই ধৈর্য্য নিয়ে দেখতে হবে এই ছবি। সাসপেন্স আছে কিন্তু সাসপেন্সের চটক নেই।
এবার আসা যাক অভিনয়ের প্রসঙ্গে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ঠিক ততটাই স্বাভাবিক যতটা আপনি নিজে আপনার ব্যক্তিগত পরিসরে। যেহেতু ছবির মেজাজটি ভারি সাটল, সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই সেই মেজাজটি ধরে রেখেছেন। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট চরিত্র হলেও সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন দামিনী বসু।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন