সঙ্গীতপ্রেমীরা ‘নজর কে সামনে’, ‘তেরি উমেদ’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর মতো বিখ্যাত গানের পেছনের নাম সমীর আনজান নিশ্চয়ই শুনেছেন। জনপ্রিয় গীতিকার অঞ্জনের পুত্র হয়েও, সমীরকে নিজের জায়গা খুঁজে পেতে লড়াই করতে হয়েছে অনেক বছর। বাবার পরিচিতি তার পথ সহজ করেনি, বরং সংগ্রাম আরও তীব্র ছিল।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সমীর জানান, কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তাই চাকরি ছেড়ে মুম্বই আসেন। কিন্তু একা শহরে দিন কাটানো ছিল দুঃসহ। খাওয়া-দাওয়ার অভাবে দিন কাটাতেন চা ও বিস্কুটে। এক ভদ্রলোক তাকে খাবার এনে দিতেন। রাতে যদি কেউ ডাকে, তবেই ভাল, নইলে একটা কলা দিয়েই সারারাত কাটাতেন। তিনি বলেন
"মুম্বাইয়ে আমি সবচেয়ে কঠিন সময় দেখেছি। আমি যখন বেনারসে ছিলাম, এক গ্লাস জল গড়িয়েও খেতাম না। আমি রান্না করতে জানতাম না, শুধু চা বানাতে জানতাম। বিস্কুট ছিল আমার নাস্তা। মধ্যাহ্নভোজে উত্তরপ্রদেশের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে খার স্টেশনের এক সাউথ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিতাম। সে আমার জন্য পুরি চুরি করত। আমি প্রতিদিন দুপুরের খাবারের জন্য ১০ টাকা দিতাম। রাতের খাবারের জন্য, যদি লোকেরা আমাকে কখনও আমন্ত্রণ জানাত তবে ভাল এবং ভাল, যদি না হত তবে কেবল একটি কলা খেয়ে কাটিয়ে দিতাম।"
Chiranjeet Chakraborty: ২১-শে জুলাইকে যারা ডিম-ভাত দিবস বলে তাঁরা বিধানসভা-লোকসভায় শূন্য: চিরঞ্জিত চক্রবর্তী
তার বাবা প্রথমে জানতেনই না যে তিনি মুম্বইয়ে আছেন। তাঁর দুর্দশা দেখে কষ্ট পেয়ে তার মা চিঠি লেখেন অঞ্জনকে। এরপরই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং দীর্ঘ ২৩ বছর পর তাদের দেখা হয়। কিন্তু তার আগে সমীরকে বাবার কাছ থেকে শুনতে হয়ে গীতিকার হতে হলে ১৭ বছর সংগ্রাম করতে হবে—এটা ছিল বাবার শর্ত। তাঁর কথায়, "এর মধ্যে যখন আমাকে বেনারস যেতে হয়েছিল, তখন আমার পরনে ছিল ১০ টাকার শার্ট আর একটা পুরনো প্যান্ট। ভালো খাবার না খেয়ে রোগা হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মা আমাকে দেখে অবাক। তারপর বাবাকে উনি একটা চিঠি লেখেন।"
একদিন এক নামকরা সুরকারের কাছে গিয়েছিলেন সমীর। যিনি ছিলেন তার বাবার বন্ধু। সমীর ৪০টি গান শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বলেন, "আপনি খুব খারাপ লেখেন। বাবার নাম নষ্ট করবেন। বেনারসে ফিরে যান।" এমনকি রাগ করে তার ডায়েরিটিও জানলা দিয়ে ছুঁড়ে দেন।
Anupam Kher: 'আমার বিয়েটা নিখুঁত নয়, তবুও', দীর্ঘ ৩৯ বছর সংসার করার পর বিস্ফোরক অনুপম খের
এই অপমান নিয়েও হাল ছাড়েননি সমীর। তিনি সরাসরি চলে যান সঙ্গীত পরিচালক ঊষা খান্নার কাছে। মাত্র চারটি লেখা শুনেই তিনি বলেন, "এই চারটিই রেকর্ড করব।" যেখান থেকে সমীরের যাত্রা শুরু হয়। এরপর আসে ‘আশিকি’ (1990), ‘দিওয়ানা’ (1992), ‘হাম হ্যায় রাহি প্যায়ার কে’ (1993)—এবং তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। পরবর্তী এক পার্টিতে সেই সুরকারের সঙ্গে আবার দেখা হয়। কিন্তু এবার তিনি আর চোখ তুলে তাকাতেও পারেননি। সমীর তখন অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ভুলে যাননি সেই অপমানের মুহূর্তগুলো—যেগুলো তাকে আরও শক্ত করেছিল।