"মৃত্যুর পর আমার সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস করা হোক..." সপ্তমীর দিন হঠাৎই ফেসবুকে ঘোষণা করলেন কবীর সুমন। এ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সবেতেই কেমন যেন এক অচলায়তন অবস্থা। চারদিকে রোগভোগ, শোক, একে একে বহু প্রিয় ব্যক্তিত্ব বিয়োগ। জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেও মনটা কেমন যেন উদাসীন। আর এসবেরই মাঝেই হঠাৎ করে ফেসবুকে নিজের ইচ্ছেপত্র পোস্ট শিল্পী কবীর সুমনের (Kabir Suman)। সেখানেই তিনি বলেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস করে দেওয়ার কথা, নতুবা তাঁকে অপমান করা হবে বলেও মত তাঁর।
সেই পোস্টের সঙ্গে হাতে লেখা এক ইচ্ছাপত্রে কবীন সুমন আরও সংযোজন করেছেন। তাঁর কথায়, "আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনও স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ড ডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেগুলি ধ্বংস করার জন্য। আমার কোনও কিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান।"
আরও পড়ুন: মধুরেন সমাপয়েৎ, প্রেমিক রোহনপ্রীতের সঙ্গে বিয়ে সারলেন নেহা কক্কর, দেখুন ভিডিও
স্বাভাবিকভাবেই কবীর সুমনের এমন পোস্টের পর অনুরাগীরা বিচলিত হয়ে পড়েছেন। তবে তাদের উদ্দেশে কিন্তু শিল্পী আগেভাগেই বার্তা দিয়ে রেখেছেন যে, তাঁরা যেন এই পোস্টে কোনওরকম বিচলিত না হন।
কবীর সুমনের মন্তব্য, "খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সকলকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১২ সালে আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর। খোলাখুলি সকলকে জানিয়ে রাখছি। অনুগ্রহ করে মতামত দেবেন না। ভাল-মন্দ কিছু লিখবেন না। এটা এক প্রবীন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি। অনেক অভিজ্ঞতার পর, অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি। ফেসবুকে, যাতে অনেকেই এটা জেনে যান। অনুগ্রহ করে আবেগের বশবর্তী হবেন না, উপদেশ পরামর্শ দেবেন না। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, যাব। আমার জীবনে কোনও হতাশা, দুঃখ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই। আমি সানন্দে বেঁচে আছি, আমার কাজ করে যাচ্ছি। আমার জীবনে ভালবাসা, কামনা, কাম, লালসা, আনন্দ-স্ফুর্তি, মজা, রঙ্গরগড়, হাসাহাসি, নিভৃত কান্না, কাজ, অধ্যবসায়, নিয়মিত রেওয়াজ, পরিশ্রম, সৃজনশীলতা সবই আছে। প্রয়াত খুশওয়ান্ত সিং তাঁর ' দি এণ্ড অফ ইণ্ডিয়া' গ্রন্থে লিখেছিলেন - "কাজই ধর্ম"। আমি তাই-ই মনে করি। আমার ধর্ম কাজ। প্রতিনিয়ত আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, অর্থাৎ স্বধর্ম পালন করছি। আমি জানি আমি সানন্দে,খুশি মনে মারা যাবো। আমি বেঁচে আছি বাংলা খেয়াল, বাংলা গান সুর-তাল-ছন্দ-লয়।"