বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতে এখনও ‘শকড’ বলিউড। মানসিক স্থিরতাকে এক ধাক্কায় যেন বেসামাল করে দিয়েছে এই একটি মৃত্যু। সুশান্তের আত্মহত্যা ঠিক কী কারণে, তা এখনও রহস্যে মোড়া। যদিও একাধিক মহলের মত, বিষাদ-অবসাদের হাতছানিতেই পরপারে পাড়ি দিয়েছেন 'কাই পো চে' ছবির অভিনেতা। সুশান্তের এই মানসিক অবস্থার সঙ্গে নিজেদের মানসিক পরিস্থিতির মিল খুঁজে পেয়েছেন সিনে দুনিয়ার অনেকেই। সেভাবেই সুশান্তের মৃত্যু নাড়া দিয়ে গিয়েছে টলিউডের অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রকেও।
নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে লাইভে এসে অবসাদ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁর পেশাগত জীবনের বেশ কিছু ঘটনা শেয়ার করেছেন শ্রীলেখা। তাতেই উঠে এসেছে স্বজনপোষন, তঞ্চকতার মতো বিস্ফোরক কিছু অভিযোগ। প্রায় একঘন্টা নয় মিনিটের এই ভিডিওতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শ্রীলেখা। এসেছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মতো বেশ কিছু নামও।
শ্রীলেখা বলেছেন, "মানসিক অবসাদ আছে, থাকবে। এটা নিয়ে আমি বহু বছর ধরে লড়াই করছি এবং করব। আমি আত্মহত্যা প্রবণ নই। কিন্তু একটা সময় ছিলাম।" অভিনেত্রী জানিয়েছেন, একটা সময় ব্যক্তিগত ও পেশাগত দিক থেকে একাকীত্ব ঘিরে ধরেছিল। তখন অনেকবার নিজেকে শেষ করার কথা ভেবেছেন। তবে যতই কঠিন পরিস্থিতি আসুক না কেন, কখনোই তিনি আপোষ করেন নি।
আরও পড়ুন: বাঙালির মাছ ও লকডাউন! গল্প নিয়ে ‘ভালবাসা আবাসন’
কেরিয়ারের গোড়ার দিক থেকেই বলা শুরু করেন 'আশ্চর্য প্রদীপ' ছবির অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, "তখন ইন্ডাস্ট্রিতে বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ), দীপকদা (চিরঞ্জিত), তাপসদা (তাপস পাল) এবং বাইরে থেকে মাঝে মাঝে রণিত রায়ের মতো নায়করা আসতেন। কিন্তু বুম্বাদা এক নম্বরে। তখন বুম্বাদা'র বোনের চরিত্র করেছি, সেকেন্ড লিড করেছি। জানতাম, আমার নায়িকা হওয়ার যোগ্যতা আছে, কিন্তু করতে পারি নি। কারণ তখন ঋতুপর্ণার সঙ্গে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রেম।"
তিনি আরও বলেন, "আমি দেখেছি, বুম্বাদা ফ্লোরে চেয়ারের উপর পা তুলে বসে আছেন। মাটিতে বসে আছেন পরিচালক। ঋতু দেরি করে আসত। আমরা সময়ে এসেও বঞ্চিত। তাছাড়া তখন ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ জুটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। ছবি হিট হোক আর না হোক, ওরাই করবে।" তাই আস্তে আস্তে টেলিভিশনকেই বেছে নিয়েছিলেন শ্রীলেখা।
আরও পড়ুন: কীসের ভয়ে ফেসবুকে লেখা খোলা চিঠি ডিলিট করলেন সুশান্তের দিদি?
'অন্নদাতা' (২০০২) ছবির প্রসঙ্গ টেনে শ্রীলেখা বলেন, "বুম্বাদা আমার সঙ্গে ছবিটা করতে চান নি। অশোক ধানুকা সবটা ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আমাকে ফোন করে এ কথা জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রসেনজিতকে আমি এড়িয়ে যাওয়ায় প্রযোজকই ফোন করে বলেছিলেন, আমি ছবিটা করছি। 'অন্নদাতা' সফল হয়েছিল। কিন্তু বুম্বাদার সঙ্গে আমি আর কোনও ছবি করি নি। কারণ ওই ছবিতেই অতিথি চরিত্রে ছিল অর্পিতা (প্রসেনজিতের বর্তমান স্ত্রী), এবং ততদিনে প্রসেনজিৎ-অর্পিতার প্রেম শুরু হয়ে গিয়েছে।"
তাঁর বক্তব্য, "কখনোই ইন্ডাস্ট্রিতে জুটি তৈরি করতে পারি নি। কারণ কোনও নায়ক ছিলেন না। প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা, জিৎ-স্বস্তিকা, স্বস্তিকা-পরমব্রত, প্রসেনজিৎ-অর্পিতা তৈরি হয়ে গিয়েছে।" সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন অভিনেত্রী। শ্রীলেখার আক্ষেপ, "সৃজিত আমার অনেক পুরনো বন্ধু। কিন্তু প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর আমাকে কোনও ছবিতে নেয় নি।" এমনকী কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে সরাসরি এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, "চূর্ণী (কৌশিকের স্ত্রী) কোথাও কাজ পায় না, তাই আমার ছবিতে ওকে নিতেই হবে।"
আরও পড়ুন, টলিপাড়ার স্বজনপোষণ বিতর্ক: জবাব দিলেন কি স্বস্তিকা?
শ্রীলেখা বলেছেন, "ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কোনও গডফাদার নেই। আর তাঁবেদারি না করতে পারার মাশুল দিতে হয়েছে আমাকে।" অভিনেত্রীর আশঙ্কা, এই ভিডিওর পর তা দ্বিগুণ হবে। কিন্তু তাতে আমল দিতে নারাজ তিনি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, "নেপোটিজম আছে এবং থাকবে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন