কে বলেছে এই ইন্ডাস্ট্রি শুধুই নায়কের অবদানের কিংবা স্টারডমের কথা মনে রাখে? এমন কিছু অভিনেত্রীও আছেন, যারা সুপারস্টারদের টেক্কা দিয়েছেন। তাঁদের খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। শুধু তাই নয়, তাঁরা যেভাবে আলোচনার শীর্ষে থাকতেন, তা সাংঘাতিক। যেখানে এখন নায়িকারা কত টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন সেই নিয়ে আলোচনা হয়, সেখানে এই অভিনেত্রী নিজেই যেন তাঁর জীবনের সবথেকে সুন্দর সময় দেখেছিলেন সেসময়। যিনি পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ এবং অশোক কুমারের মতো কিংবদন্তি তারকাদের পিছনে ফেলেছিলেন।
গায়িকা ও অভিনেত্রী হিসেবে সিনে জগতে সুরাইয়ার উত্থানঃ
সুরাইয়া, ওমর খৈয়াম (১৯৪৬), প্যায়ার কি জিৎ (১৯৪৮), বড়ি বেহান (১৯৪৯) এবং দিল্লাগি (১৯৪৯) এর মতো সিনেমায় তার চরিত্রের জন্য পরিচিত ছিলেন। যা তার ক্যারিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। তবে, তিনি প্রাথমিকভাবে অভিনেত্রী হওয়ার জন্য সিনেদুনিয়ায় পা রাখেননি। পরিবর্তে, তিনি প্রথম সংগীত পরিচালক নওশাদের তরফেই তার সুন্দর কণ্ঠের জন্য অনেক প্লেব্যাক গাওয়ার অফার পেয়েছিলেন।
Actress Fake Death News: সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে এল খবর, বেঁচে আছে…
তখন সুরাইয়া মাত্র ১২ বছরের। প্রায়শই তিনি তার মামার সাথে শুটিং সেটে যেতেন। তাজমহলের সেটে এমনই একবার পরিদর্শনের সময়, পরিচালক তাকে তরুণ মুমতাজের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওর জন্য বেশ কয়েকটি শিশুদের প্রোগ্রামে অভিনয় করার পর, সুরাইয়ার গানের প্রতিভা নওশাদ আবিষ্কার করেছিলেন। এরপর তাকে কিংবদন্তি অভিনেতা মেহতাবের জন্য শারদা (১৯৪২) ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি শীঘ্রই ফুল, সমরত চন্দ্রগুপ্ত, আজ কি রাত, দর্দ, দিল্লাগি, নাটক, আফসার, কাজল, দাস্তান, সনম এবং চার দিনের মতো ছবিতে গেয়েছিলেন।
হলিউড তারকা গ্রেগরি পেকের সঙ্গে সুরাইয়ার সাক্ষাৎঃ
সুরাইয়া হলিউডের হার্টথ্রব গ্রেগরি পেকের বিশাল প্রশংসক ছিলেন এবং তিনি যখন ভারত সফরে আসেন, তাঁর সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে সুরাইয়া তার অটোগ্রাফ করা ছবি হলিউড পরিচালক ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রাকে দিয়েছিলেন। ফ্র্যাঙ্ক সেবার ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সময় ভারত সফরে অংশ নিয়েছিলেন। সুরাইয়া তাঁকে বলেছিলেন, গ্রেগরি পেককে সেটি দিয়ে দেওয়ার জন্য। হলিউড অভিনেতা অটোগ্রাফটি পেয়েছিলেন এবং ভারতে এসে সুরাইয়ার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন।
Actress Tragic Story: বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রীর মৃত্যু! ঝুলন্ত দেহ…
অন্যদিকে, দেব আনন্দের সাথে সুরাইয়ার সম্পর্ক ছিল টক অফ দ্যা টাউন। পেশাগত জীবনের শীর্ষে, সুরাইয়া দেব আনন্দের প্রেমে পড়েন, যার সাথে তিনি সাতটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এমনকি দেব আনন্দ, তাকে একটি হীরের আংটি কিনে দেওয়ার জন্য টাকা ধার করেছিলেন। সেই সময়, সুরাইয়া দেব আনন্দের চেয়ে বড় তারকা ছিলেন। সুরাইয়ার দিদিমা, তার কর্মজীবন নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি তিনি দেব আনন্দের জন্য কেনা আংটিটি সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বলেছিলেন, তাদের মধ্যে চিত্রিত রোমান্টিক দৃশ্যগুলি কেটে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
দেব আনন্দ সুরাইয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এবং এমনকি অভিনয় ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, যা তার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না, তাই শেষ পর্যন্ত তারা আলাদা হয়ে যান। তবে এই সম্পর্ক সুরাইয়ার উপর এতটাই গভীর প্রভাব ফেলেছিল যে তিনি কখনও বিয়ে করেননি। এদিকে দেব আনন্দ ১৯৫৪ সালে কল্পনা কার্তিককে বিয়ে করেছিলেন। বলেছিলেন.. "যখন আমি দেবকে বিয়ে করতে অস্বীকার করি, তখন সে আমাকে কাপুরুষ ভেবেছিল। আমি স্বীকার করছি, যে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম না। এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস আমার ছিল না। হয়তো এটা একটা বোকামি ছিল, হয়তো ভুল ছিল অথবা হয়তো নিয়তি?"
সুরাইয়ার পতন ও অবসরঃ
দেব আনন্দের সঙ্গে ব্রেকআপের পর সুরাইয়ার পেশাদার ক্যারিয়ারও ধাক্কা খায়। ১৯৫০-এর দশকে তার অভিনীত সিনেমাগুলো তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। তিনি ১৯৫৪ সালে তার মির্জা গালিব ছবিতে দারুণ প্রশংসা পেয়েছিলেন। এমনকি তিনি জওহরলাল নেহেরুর কাছ থেকেও প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। নেহরু তাঁকে বলেছিলেন, "তুমি মির্জা গালিবের আত্মাকে জীবিত করেছ"। কিন্তু ১৯৬৪ সালে পৃথ্বীরাজ কাপুরের সহ-অভিনীত 'রুস্তম সোহরাব' ছবিটি বড় ধরনের ফ্লপ হয়। ক্যারিয়ারের পতন দেখে সুরাইয়া ১৯৬৩ সালে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে লাইমলাইট থেকে সরে আসেন। তাকে আর কখনও বড় পর্দায় দেখা যায়নি এবং প্লেব্যাক গায়কীতেও ফিরে আসেননি। ২০০৪ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি মারা যান।