মেয়েদের যে কি পরিমান যৌন নিগ্রহ এবং শারীরিক হেনস্থার শিকার হতে হয়, তা চারপাশে খেয়াল করলেই দেখা যাবে। সারা দেশ থেকে রাজ্য যখন নারী সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় নেমেছে, তখন সারা দেশের ইন্ডাস্ট্রি বা কেন সেখানে পিছিয়ে থাকে। মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রিতে যে পরিমাণে যৌন নিগ্রহের গল্প উঠে আসছে, তাতে আশঙ্কা এবং চিন্তা ক্রমশই বাড়ছে।
সর্বপ্রথম মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রির বুকে হেনস্থার কথা জানান বাঙালি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। তারপর থেকে সেখানে যেন, অভিনেত্রীদের অভিযোগ কমছে না। বরং, দিনের পর দিন যে অত্যাচারের সম্মুখীন তারা হয়েছেন, তার রেশ কাটিয়ে এখন তার প্রতিবাদ করছেন। তামিল জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাম না করে পরিচালকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন, তাতে শিউরে উঠতে হয়।
১৮ বছর বয়সে তার রাত যাত্রা শুরু। সেসময় কিছুই বুঝতেন না। উল্টে, রুপালি জগতের মায়াপুর এই জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা করে বসে ছিলে। বলা উচিত ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। অভিনেত্রী, এক সাক্ষাৎকারে জানান সেই পরিচালক তাকে যৌন দাসীর মত রেখেছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে, এই যন্ত্রণা চেপে রেখেছে নিজের মধ্যে। তবে আজ যখন সমস্ত মানুষকেই প্রতিবাদ করতে দেখছেন, তখন আর চুপ থাকবেন না। অভিনেত্রীয় জানান যে কেরল সরকার যে বিশেষ পুলিশ টিম গঠন করেছে তার কাছে তিনি নাম ফাঁস করবেন পরিচালকের।
কী ঘটেছিল সেসময়?
তখন তার প্রায় ১৮ বছর বয়স। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রীর কাছে ইন্ডাস্ট্রি ছিল ফ্যান্টাসি। থিয়েটার গ্রুপে যেহেতু অভিনয় করতেন, সেখান থেকে তার কাজের সুযোগ আসে। পরিবারের অমতে গিয়ে ছুটে যান স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে। ৯০ দশকের গোড়ায় তিনি মালায়ালাম ছবি, তামিল ছবি দেবে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন।
কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার আগেও তিনি বুঝতে পারেনি তার সঙ্গে এরম কিছু হতে চলেছে। অভিনেত্রী এক সাক্ষাৎকারে জানান, যে পরিচালকের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন তার আচরণ এবং ব্যবহার মোটেই তার ভালো লাগেনি। যে কারণে তিনি কাজও করতে চাননি। কিন্তু পরিচালক তাকে শাসানি দিয়ে রীতিমতো জোর করে, কাজ করতে বাধ্য করেন। বলেছিলেন যে তাদের অনেক খরচ হয়ে গিয়েছে, রীতিমতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেই অভিনেত্রীকে রাজি করান তারা। কিন্তু আউটডোর শুটে যাওয়ার পরপরই, অভিনেত্রী বুঝতে পারেন কিছু সমস্যা আছে। পরিচালক সেই ব্যক্তি তার সঙ্গে রীতিমতো খারাপ আচরণ, ধমক দেওয়া এগুলি করতে থাকেন। কিন্তু অল্প বয়সের মেয়েটি বুঝতে পারেননি কোনটা ফাঁদ আর কোনটা ভালোবাসা।
সেই পরিচালকের পাশাপাশি তার স্ত্রীও ভয়ংকর মাপের গেম প্ল্যানার। তামিল অভিনেত্রী জানান, "তার দুই মেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, এই ধরনের মিথ্যে কথা বলে আমাকে তাঁরা ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করেন।" এবং তারপরেই সেই পরিচালক দম্পতির বাড়িতে থাকতে শুরু করেন নির্যাতিতা। অভিনেত্রীর কথায়...
"সেই পরিচালক আমাকে মেয়ে বলে ডেকেছিলেন। কিন্তু একদিন রাত্রিবেলা হঠাৎ করে তিনি আমাকে চুমু খান। আমি এত অপ্রস্তুতে পড়ে যাই, যে কোনও শব্দ খুজে পাচ্ছিলাম না। চেয়েছিলাম বন্ধুদেরকে বলতে। কিন্তু বলতে পারিনি ভয়ের চোটে। যদি সবাই আমায় ভুল বোঝে। তারপর থেকে উনি প্রতিনিয়ত আমার শরীরটাকে ব্যবহার করতে শুরু করে। প্রায় প্রতিদিনই আমি ওনার কাছে ধর্ষিত হতাম। এই ভয়ংকর কাণ্ডকারখানা চলেছিল প্রায় কয়েকমাস, এক বছরের কাছাকাছি।"
এখানেই শেষ নয়। সেই পরিচালক যাকে মেয়ে বলে ডেকেছিলেন তার কাছ থেকেই সন্তান কামনা করেছিলেন। গলা কাঁপতে থাকে অভিনেত্রীর। বলেন, "কেউ ভাবতে পারবে, যে আমাকে মেয়ে বলে ডেকেছিল সেই আমার কাছ থেকে সন্তান চাইত। এই পরিচালক একা নয়। অভিনেত্রী বলেন, এক সহ অভিনেতা ও আমাকে যৌন হেনস্তা করে, তার নাম হিমা কমিটি রিপোর্ট এসেছে।"