Dhumavati in Mangal Chandi: কালারস বাংলা-র 'মঙ্গলচণ্ডী' ধারাবাহিকে এবার দেখা যাবে চণ্ডীর ধূমাবতী রূপ। এই চরিত্রে এলেন ঈশানী সেনগুপ্ত। টেলিপর্দার এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে এমন একটি রূপে এর আগে দেখেননি দর্শক। ধনপতি-খুল্লনার গল্পে সম্প্রতি দেবী চণ্ডীকে আবারও অসম্মান করে ধনপতি। সেই ক্রোধেই চণ্ডীর ধূমাবতী রূপে আবির্ভাব। ধূমাবতী হলেন দশ মহাবিদ্যার এক মহাবিদ্যা। কথিত আছে যে তিনি সিদ্ধিদাত্রী অথচ তাঁর আবির্ভাব কোনও এক অমঙ্গলের পূর্বাভাস দেয়।
ভারতে খুব সীমিত সংখ্যক মন্দির রয়েছে ধূমাবতীর, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বারাণসীর মন্দিরটি। তন্ত্রসাহিত্যে তাঁর যা বর্ণনা পাওয়া যায় তা হল তিনি নিরাভরণ এবং কুৎসিত। তিনি সাদা শাড়ি পরিহিতা এক বিধবা রমণী। কখনও তাঁর আগমন হয় অশ্বহীন একটি রথে আবার কখনও তাঁকে কাকের পিঠে চড়েও আসতে দেখা যায়। কাক হল ধূমাবতীর বাহন। তাঁর এক হাতে থাকে কুলো ও অন্য হাতে বরদা-মুদ্রা। সাক্ষাৎ ভয়ের প্রতিমূর্তি তিনি।
আরও পড়ুন: রুবেলের নায়িকা এবার ঈশানী! আসছে নতুন ধারাবাহিক
ধূমাবতীর হলেন সপ্তম মহাবিদ্যা। 'শক্তিসংগম তন্ত্র' গ্রন্থ অনুযায়ী, পতিনিন্দা সহ্য করতে না পেরে দক্ষরাজার যজ্ঞের আগুনে আত্মাহুতি দেন সতী। তখন সতীর দগ্ধ দেহ থেকে যে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়, সেই ধোঁয়া থেকেই আবির্ভাব হয় ধূমাবতীর। আবার 'প্রাণতোষিণী তন্ত্র' গ্রন্থ অনুযায়ী ধূমাবতী আসলে সতীরই এক রূপ যা শিবের ক্রোধের ফলে চিরবৈধব্য বেশে অভিশপ্ত। একবার সতী অন্ন প্রার্থনা করেন শিবের কাছে। শিব তা দিতে অস্বীকার করলে সতী শিবকে গ্রাস করে তাঁর অপরিসীম ক্ষুধা নিবৃত্তি করেন। এর পর শিবের অনুরোধে সতীর মুখ থেকেই শিবের নিষ্ক্রমণ ঘটে। নিষ্ক্রমণের পরে ক্রুদ্ধ শিব সতীকে পরিত্যাগ করেন ও অভিশাপ দেন যে তাঁর বৈধব্যবেশ ঘটবে। সেই কারণেই ধূমাবতীকে বিধবার বেশে দেখা যায়।
ধূমাবতীর ব্যাখ্যা ও তাঁর মাহাত্ম্য নিয়ে বেশ খানিকটা ধোঁয়াশা রয়েছে। যেহেতু প্রাথমিকভাবে ধূমাবতী ছিলেন তান্ত্রিক দেবী এবং পরবর্তীকালে বৈদিক ধর্মে তাঁর আত্তীকরণ ঘটে, তাই তাঁর উৎপত্তি ও দর্শন নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত। আর একটি কাহিনিতে শোনা যায় যে শুম্ভ-নিশুম্ভের সঙ্গে যুদ্ধের সময় দেবী দুর্গাই সৃষ্টি করেন ধূমাবতীকে। ধূম্র্ বা ধোঁয়া সৃষ্টি করে শত্রুপক্ষকে বিপর্যস্ত করেন বলেই তাঁর এই নাম।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে হনিমুনে গিয়ে ঘটবে অঘটন, ধারাবাহিকে নতুন মোড়
এবার ফেরা যাক ধারাবাহিকের প্রসঙ্গে। 'মঙ্গলচণ্ডী' ধারাবাহিকে গল্প যে জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তা হল খুল্লনাকে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে বলে বণিক সমাজ। খুল্লনা জলে ডুবল না, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়ে সে হেঁটে গেল এবং শেষে জতুগৃহ থেকেও সে একইভাবে বেরিয়ে এল, আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারল না। সবই দেবী চণ্ডীর কৃপা, এই কথা খুল্লনা ধনপতিকে জানাতেই সে ক্রোধে লাথি মেরে দেবী চণ্ডীর ঘট ভেঙে দেয়। এই সময়েই ধূমাবতী রূপে আবির্ভাব হয় চণ্ডীর।
ধূমাবতীর আবির্ভাব মানেই ঘোর অমঙ্গলের পূর্বাভাস এমনটাই মনে করা হয়। ধনপতি-খুল্লনার গল্পে এর পরে ঘোর দুর্গতি ঘটে ধনপতির। যাঁরা মঙ্গলকাব্যটি পড়েছেন তাঁরা জানেন এর পরে ঠিক কী কী ঘটতে চলেছে। যাঁরা পড়েননি, তাঁরা এই টেলি-নির্মাণটি দেখে নিতে পারেন।