Bollywood actor Tragic Life: "আরে ও সম্ভা, কিতনে আদমি থে?"এই একটি সংলাপই যথেষ্ট। চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক কালজয়ী চরিত্রের ছবি। সিনেমার পর্দায় এই সংলাপটিকে এমনভাবে পরিবেশন করেছিলেন যা যুগে যুগে সমাদৃত। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই সংলাপ সেই অভিনতার পরিচয়। তিনি নান আদার দ্যান আমজাদ খান। সেলিম-জাভেদের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি শোলে ছবির 'গব্বর সিং' হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম সেরা খলনায়ক।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/4cd69772-c06.jpg)
আমজাদ খান ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা জয়ন্তের বড় ছেলে। জয়ন্ত নিজে একজন পেশাদার শিল্পী ছিলেন। অল্প বয়সেই অভিনয় জগতে পা রাখেন আমজাদ খান,। বাবার অভিনীত কিছু ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৬৫ সালে পাথর কে সনম-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও ছবিটি স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে ১৯৭৭ সালে হিন্দুস্তান কি কসম-এর মাধ্যমে বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে। এরপরও সিনেদুনিয়ায় টিকে থাকতে লড়াই করতে হয়েছিল।
একসময় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে স্ত্রীর সন্তান প্রসবের পর হাসপাতালের বিল মেটানোর মতো টাকাও ছিল না। এই প্রসঙ্গে তার ছেলে শাদাব খান একটি পুরোনো সাক্ষাৎকারে জানান, হাসপাতালের বিল দিতে না পারায় তার বাবা এতটাই লজ্জিত ছিলেন যে তিনি সেদিন আর হাসপাতালে যাননি। শাদাব বলেন, 'আমার মা যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেখান থেকে বাড়ি নিয়ে আসার মতো অর্থ বাবার কাছে ছিল না। তিনি কাঁদতে শুরু করেন। বাবা লজ্জায় হাসপাতালে আসেননি। শেষ পর্যন্ত হিন্দুস্তান কি কসম-এর পরিচালক চেতন আনন্দ এগিয়ে এসে বিলটি পরিশোধ করেন।'
আরও পড়ুন 'যদি অবহেলা করতাম...', ক্যানসারের পর কোন মারাত্মক বিপদ থেকে বরাতজোরে রক্ষা পেলেন রাকেশ?
কাকতালীয়ভাবে ছেলের জন্মদিনেই আমজাদ শোলে-তে গব্বর সিং চরিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন। যে চরিত্রটি তাকে রাতারাতি স্টার বানিয়েছিল। সেলিম-জাভেদ গব্বর সিংয়ের চরিত্রে ড্যানি ডেনজংপাকে ভাবলেও তারিখের সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি ছবি থেকে বাদ পড়েন। ভাগ্যে শিঁকে ছেড়ে আমজাদ খানের। এই চরিত্রের জন্য নিজের সেরাটুকু উজার করে দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন অভিনেতা। চোরবাজার থেকে মিলিটারি পোশাক জোগাড় করেন, কাঁধে বুলেট বেল্ট ঝোলান এবং দাঁত কালো করে তামাক চিবিয়ে চরিত্রটিকে আরও নিখুঁত করার চেষ্টা করেন।
তবুও শুটিংয়ের প্রথম দুই দিন পরিচালক রমেশ সিপ্পির সঙ্গে সুর মেলাতে পারেননি। আমজাদের পারফর্ম্যান্স নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। তাকে পরিবর্তনের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন সেলিম-জাভেদ। কিন্তু, রমেশ সিপ্পি আমজাদকে আরও একটি সুযোগ দেন এবং বাকিটা ইতিহাস। এই ঘটনা পরে যখন আমজাদ জানতে পারেন তখন খুব আঘাত পান। তাই আর কখনও সেলিম-জাভেদ বা রমেশ সিপ্পির সঙ্গে কাজ করেননি।
আরও পড়ুন 'এগুলো না করলে...', অভিনেত্রী হতে কী শর্ত? কেরিয়ারের শুরুতে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুললেন কল্কি
শোলে মুক্তির এক বছর পর মুম্বই থেকে গোয়া যাওয়ার পথে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন আমজাদ খান। স্টিয়ারিং হুইল তার বুকে ধাক্কা খায়। ফুসফুসে আঘাতের কারণে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। সেই সময় সহ-অভিনেতা ও বন্ধু অমিতাভ বচ্চন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বন্ডে সই করেন বিগ বি। কারণ অন্য কেউ সেই দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। অমিতাভ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নেবে না।
আরও পড়ুন পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়ে দুর্ঘটনা, সাগরে তলিয়ে গেলেন গ্র্যামি জয়ী কিংবদন্তি অভিনেতা
সেই মর্মে কাগজে সই করে মুম্বইয়ে আমজাদের পরিবারের সম্মতি নেন। চার্টার্ড ফ্লাইটেরও ব্যবস্থা করেন অমিতাভ। শোলে আমজাদকে অমর খ্যাতি এনে দিলেও সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ভার বহন করতে হয়েছে তাঁকে। ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে এবং শরীরিক সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে। তা সত্ত্বেও তিনি শতরঞ্জ কে খিলাড়ি, হাম কিসিসে কম নাহিন, মুকাদ্দর কা সিকান্দার, বরসাত কি এক রাত, সত্তে পে সত্তা-সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেন। বেশিরভাগ ছবিতেই ছিলেন অমিতাভ বচ্চনের ঘনিষ্ঠ সহ-অভিনেতা। ১৯৯২ সালে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমজাদ খান প্রয়াত হন।