Tollywood Actress Swarnakamal Dutta: নারী দেখলেই ভাল লাগে? এমনই এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ১৫ বছর পার করেছেন বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বর্নকমল দত্ত। একসময় তিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে পরপর ছবি রিলিজ করত। এখন, টেলিভিশনেও দারুণ জনপ্রিয় তিনি। একের পর এক ধারাবাহিকে কাজ করছেন লাগাতার। কিন্তু, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনটা যে এত সাংঘাতিক যন্ত্রণার। অভিনেত্রী নিজেই জানালেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে। ১৫ বছর ধরে বিবাহিত জীবনের দুর্বিষহ অবস্থা সহ্য করছেন তিনি। অভিনেত্রী বর্তমানে চিরসখা ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। তাঁর স্বামীর তরফে যে ধরনের অত্যাচার সহ্য করেছেন তিনি।
তার স্বামীর বিবরণ দিতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠলো তার। অভিনেত্রীকে বলতে শোনা গেল, এমন মানুষ তার জীবনে খুব কম দেখেছেন। ২২-২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। ছোট বয়সের ভুলই তাকে এত বছর ধরে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। তার স্বামীর মহিলা দেখলেই নাকি ভালো লাগে। যার তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। অভিনেত্রী সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এই নিয়ে কথা বললে তিনি সোজাসাপটা জানান, ওর বাবা মা ওকে খুব সাপোর্ট করে। ওরাই তাকে বলে যে এই মেয়ের সঙ্গে থাক। আমি ১৫টা বছর ধরে যা সহ্য করেছি।" শুধু কি গায়ে হাত তুলে সেটা অত্যাচার? শ্বশুরবাড়ির তরফে, তার শাশুড়ি শ্বশুর এবং তার স্বামী এরা যেভাবে অকথ্য গালিগালাজ তাঁকে করতেন, সেসব তাঁর মনে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে গিয়েছে।
Mahanayak Uttam Kumar: 'আমাকে বাঁচান...', মহানায়ক সেদিন ছুটে গিয়েছ…
অভিনেত্রী বলেন, আমার মেয়ে যখন পাঁচ মাসের তখন ও আমাকে বাড়ি থেকে একবার বের করে দিয়েছিল। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই বাড়ির কেয়ারটেকাররা আমাকে বসিয়ে সান্তনা দিয়েছিল। আমি এর আগেও সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম। এর মতো আমিও ভেবেছিলাম যে যদি সংসারটাকে কোনভাবে বাঁচানো যায়। আসলে আমার প্রাক্তন স্বামী, সে কোনই কাজ করত না। আমার বাবা একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বানিয়ে দিয়েছিল। সেইখানে একজন মহিলা এমপ্লয়ী ছিল, তার সাথেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল ও। বর্তমানে যে কার সঙ্গে থাকে আমি জানিনা। আইনত বিচ্ছেদ এখনো আমার হয়নি। আমার উকিল বলেছেন তিনি ব্যাপারটাকে বুঝে নেবেন। তবে একটা কথা বলতেই হয়... এবারও আমি চেষ্টা করেছিলাম। ওই লোকটার জন্মদিনে তাকে ডেকে এনে কেক কাটানো থেকে শুরু করে সবকিছু করেছিলাম। কিন্তু তারপরও আমাকে বাক বিতন্ডার মধ্যেখানে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে চলে গেল।
অভিনেত্রী সন্তান এখন অনেকটাই বড়। মেয়ে যেহেতু বুঝতে শিখেছে তাই মায়ের সঙ্গে হওয়া দিনের পর দিন অত্যাচার আর মেনে নিতে পারিনি। ছোট থেকে চোখের সামনে মেয়েকে অকথ্য গালিগালাজ এবং নানান ধরনের কুৎসার শিকার হতে দেখেছে সে। তাই সে যখন, শেষবার তার বাবাকে মায়ের সঙ্গে এহেন আচরণ করতে দেখে, তখন যেন আর সামলাতে পারেনি নিজেকে। বরং মাকে সেদিন সে হুশিয়ারি দিয়ে দিয়েছিল, "এই লোকটা যদি এরপর থেকেই বাড়িতে আসে তাহলে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব।" অভিনেত্রী বলেন, "আমি কিন্তু সেই লোকটাকে ছেড়ে কোথাও চলে যাইনি। বরং সেই ছয় সাত মাস আগে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। এবং তাতে আমি ভীষণ খুশি।"
তিনি আরো বললেন, "আমি যখনই ওকে বোঝাতে যেতাম যে আমাদের সম্পর্কটা ঠিক করা উচিত কিংবা এরকম সে যে অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে, এগুলো বন্ধ করা উচিত তখন ও আমাকে মারতো। আর তখন আশেপাশের ফ্ল্যাটের কাকিমারা সকলে আমাকে বাঁচাতে আসতেন। লোকটা আমার জীবন থেকে চলে যাওয়া, চারপাশের মানুষগুলো খুব খুশি হয়েছেন। আমার বাবা-মা ও বেশ খুশি। আসলে ছোট বয়সের ভুল তো। আমি পরবর্তীকালে জানতে পেরেছিলাম আস্তে আস্তে, পুরো পরিবারটাই ফ্রড এবং চিটিংবাজ। ওদের বাড়ির কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল না। আজ এই বাড়িতে ভাড়া থাকত কাল ওই বাড়িতে ভাড়া থাকত। মাঝে মাঝে আমি দেখতাম, অনেকে আমার শ্বশুর মশাইকে খুঁজতেন মারবেন বলে।"
এতগুলো বছর কি করে এই ধরনের অত্যাচার সহ্য করে কাটালেন তিনি? আগেই কেন সংসার ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন না? অভিনেত্রীর কথায়, "আমি আমার মেয়েটা যাতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে সেই কারণেই চেষ্টা করেছিলাম সংসারটা বাঁচানোর। আমার বাবা, ১ কোটি টাকা খরচা করেছে আবার বেকার স্বামীর জন্য। কিন্তু ওই যে বলে না পয়সা আর যাই করুক শান্তি কিনতে পারেনা। আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। এমনকি, আমার মেয়েকে এখনো মোবাইলে নানান ভাবে উত্তপ্ত করা হয়। ওকে বলা হয় যে, আমরা নাকি ওকে ওর বাবার সঙ্গে থাকতে দিচ্ছি না।" কিন্তু, এখন আগের থেকে অনেকটাই মানসিকভাবে সুস্থ তিনি। ভাল আছেন। অভিনেত্রী বললেন, আমি কোনোদিন কাউকে বুঝতে দি নি, যে আমার সঙ্গে এসব হয়েছে।