Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

চিত্রনাট্যের বাঁধনেই পোক্ত বিদ্যার 'নটখট'

কোনও অচেনা অদেখা সমাজও নয়। কিন্তু সমাজের গল্পের মধ্যে আরেকটি সমাজকে গড়ে তোলার অনবদ্য প্রয়াস করেছেন পরিচালক শান ব্যাস।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আমাদের জীবনে বড় হয়ে ওঠার প্রতিটি ধাপ যেখান থেকে তৈরি হয় সেটা হল আমাদের বাড়ি, আমাদের পরিবার। ৩৩ মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘ্যের সিনেমা 'নটখট'-এর গল্পের ভরকেন্দ্র সেটাই, 'মূল্যবোধ'। যা আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে, আমাদেরকে মানসিকতাকে রূপদান করে। তাই আজও পিছনে ফেলে আসা শৈশবে মানুষ সেই মূল্যবোধ খুঁজতেই ফিরে আসে বারবার।

Advertisment

নটখট সেই গল্পের কথা বলে, সেই সম্পর্কের কথা বলে। মুম্বাই ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ‘We Are One’-এ দেখানো চারটি ছবির মধ্যে তাই জায়গা করে নিতে পেরেছিল নটখট। সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতা কতটা প্রভাব বিস্তার করে শিশুমনে আর সেই প্রভাবে ছাড়খাড় হয় সমাজ, সেই মূল্যবোধের গল্প শোনায় নটখট।

তবে এখানে গল্প দিয়ে গল্প বুনেছেন পরিচালক। এখানে মূল চরিত্র যাকে ঘিরে সে একটি ছোট্ট ছেলে সানিকা প্যাটেল। দৃষ্টি অসম্ভব রকমের তীক্ষ্ণ, তেমনই মন দিয়েই বুঝে নিতে পারে ঘটনা, এতটাই তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। এমনকী আশেপাশের সকলের নকলও করে পারে বাড়ির আদরের সানু। সামান্য দুষ্টুমি (নটখট) যে কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তা সে বুঝতে পারে না। তাই কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক সেটা শিশুমনে গেঁথে দেওয়ার কাজ পরিবারের। সমাজের টুকরো টুকরো সেই সব ঘটনাকেই এক থালায় সাজিয়ে পরিবেশন করেছেন পরিচালক শান ব্যাস।

publive-image এখানে গল্প দিয়ে গল্প বুনেছেন পরিচালক

আরও পড়ুন, মাকে হারানোর যন্ত্রনা তিনি জানেন, মুজফফরপুরের মৃত মায়ের সন্তানের দায়িত্ব নিলেন শাহরুখ

একটি দৃশ্যে দেখা যায় স্কুলে বড় বড় দাদাদের বেশ কিছু সন্দেহজনক কাজকর্ম ধরা পড়ছে বাচ্চাটির চোখে। এমনকী নিজের ক্লাসের ছেলেদের চাপে পড়ে অংশ নিয়েছিল একটি বাজে ঘটনায়। কিন্তু দিনের শেষে তাঁর মায়ের ভালোবাসা, স্নেহ তাঁকে যেন সমস্ত নেতিবাচকতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর সেই মায়ের চরিত্রে বিদ্যা বালনের অভিনয় অনবদ্য। প্রসঙ্গত, এই ছবির সহ-প্রযোজকও তিনি। আসলে এই সিনেমা সেই যুগ যুগ ধরে চলা আসা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কথা বলে। যেখানে একটি বাচ্চা ছেলের মধ্যে সেই ভাব, সেই মূল্যবোধই গড়ে ওঠে যা সে বাড়িতে দেখছে। হ্যাঁ, এই গল্প নতুন কিছু জানায় না। কিন্তু গল্পের প্রতিটি ছত্রের গল্প সমাজের আয়নায় নিজেদের অন্যধারায় দেখায় শেখায়।

নটখট-এ বিদ্যা বালান অভিনীত চরিত্রটি একবারে সমাজের সেই ঘোমটার আড়ালে থাকা স্ত্রী, যিনি সমাজেরও আড়ালে থাকেন। আর এই ছবিতে বিদ্যার স্বামী হয়ে ওঠেন ছেলের জীবনের মূল কেন্দ্র। খাওয়ার টেবিলে বাবার স্বাধীনচেতা মেয়েদের চরিত্র বিশ্লেষণ, সেই 'বয়েস উইল বি বয়েজ' স্বত্ত্বা সানিকা প্যাটেলকে শিখিয়ে দেয় কীভাবে 'সমাজের ছেলে হয়ে উঠতে হয়"। তাই ছোটবেলায় কোনও মেয়েকে চুল ধরে টানা যেমন অন্যায় নয় তেমনই বড়বেলায় নিজের স্ত্রী'র গায়ে হাত তোলা যে অপরাধ নয় সেই পুরুষতন্ত্রের ভিত গড়ে ওঠে সানুর মধ্যেও। আসলে সানু কেবল এই গল্পের বাচ্চা নয়, ঘুরে তাকালে দেখা যাবে সানু সমাজের সেই শৈশবদের প্রতিনিধি।

আরও পড়ুন, ‘কাট্টি নৃত্যম’: কান-এ পৌঁছল বাঙালি পরিচালকের মালয়ালম ছবি

কিন্তু তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টি আটকে যায় মায়ের শরীরের আঘাতের চিহ্নে। পুরুষশাসিত সমাজে যে মায়ের গলার স্বর ঢেকে দেয় ঘোমটার আড়াল। ঠাকুমা মহিলা হয়েও পাশে দাঁড়ায় না কেবল ইতিহাসের চাকা ধরে রয়েছেন বলে। সানু তাই বড় হয়ে ওঠে মায়ের গল্পে, মায়ের মূল্যবোধে। দিনের শেষে তাই নটখট মা ও ছেলের গল্পই থাকে।

আগেই বলা যে এই গল্পের যে প্লট তা নতুন নয়। কোনও অচেনা অদেখা সমাজও নয়। কিন্তু সমাজের গল্পের মধ্যে আরেকটি সমাজকে গড়ে তোলার অনবদ্য প্রয়াস করেছেন পরিচালক শান ব্যাস। সত্যি কথা বলতে এই ছবিটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের না হয়ে পূর্ণ দৈর্ঘ্যেরও হতে পারত। কিন্তু গল্প যেহেতু 'ছোটগল্প', তাই শেষ কোথায় হল সে প্রশ্ন অজানাই থেকে গেল!

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

vidya balan
Advertisment