/indian-express-bangla/media/media_files/2025/07/20/vijayasree-actress-death-cause-2025-07-20-19-20-01.jpg)
কে এই অভিনেত্রী?
Entertainment News: ভারতীয় বিনোদনজগতে বহু নাম রয়েছে, যাঁদের খ্যাতি যেমন উজ্জ্বল, তাঁদের পরিণতি তেমনই হৃদয়বিদারক। কিংবদন্তি সিল্ক স্মিতা, শোভা, জিয়া খান কিংবা সুশান্ত সিং রাজপুত- তাঁরা সবাই এমন এক তালিকার অংশ, এরা চরম হতাশায় নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন। এই তারকাদের মৃত্যু নিয়ে যতই তদন্ত আর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ঘুরে ফিরে আসুক, সত্যি কথা একটাই, ঠিক কী কারণে তাঁরা ভেঙে পড়েছিলেন, তা একমাত্র তাঁরাই জানতেন।
ঠিক তেমনই একজন ছিলেন বিজয়শ্রী- “মালয়ালমের মেরিলিন মনরো” নামে পরিচিত। মাত্র ২১ বছর বয়সে, কেরিয়ারের শীর্ষ মুহূর্তে, তিনি আত্মহত্যা করেন- এক অজানা শূন্যতা আর অব্যক্ত যন্ত্রণার মধ্যে হারিয়ে যান চিরতরে।
বিজয়শ্রী জন্মেছিলেন ১৯৫৩ সালের ৮ জানুয়ারি, কেরালার তিরুবনন্তপুরমে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তামিল ছবি চিঠি (১৯৬৬)-তে পদ্মিনী ও জেমিনি গণেশনের সঙ্গে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সিনেমায় পা রাখেন। তারপর তেলুগু ও কন্নড় সিনেমার প্রস্তাব আসতে থাকে তাঁর কাছে।
Anupam Kher: 'চরস নিয়ে ঘুরছ!' অভিনেতাকে ভয়ঙ্করভাবে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী?
মালয়ালমে তাঁর যাত্রা শুরু হয় পূজাপুষ্পম (১৯৬৯)-এ একটি ছোট চরিত্র দিয়ে। তবে খুব দ্রুত তিনি দর্শকের নজর কাড়েন। তাঁর সৌন্দর্য ও অভিজাত উপস্থিতি তাঁকে আলাদা করে তোলে। ১৯৭০ সালে শশীকুমার পরিচালিত রক্তপুষ্পম-এ প্রেম নাজিরের বিপরীতে, তিনি প্রথম প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরপর থেকে বিজয়শ্রী-নাজির জুটি হয়ে ওঠে হিট মেশিন। তাঁদের একসঙ্গে করা একের পর এক ছবি- 'ওথেনেন্তে মাকান', 'ট্যাক্সি কার', 'আধ্যথেথে কথা', 'পুষ্পাঞ্জলি', 'অঙ্কথাট্টু', 'পদ্মব্যোহম'- সবই বক্স অফিসে সফল হয়। প্রখ্যাত নির্মাতা ভারতন একবার মন্তব্য করেছিলেন, “মানুষ বিজয়শ্রীকে দেখার জন্য সিনেমা হলে যেত। নায়ক নয়, তিনিই ছিলেন সিনেমার কেন্দ্রবিন্দু।”
উজ্জ্বলতার আড়ালে শোষণ আর নিঃসঙ্গতা
কিন্তু সেই খ্যাতির আলাড়ের গল্প ছিল গভীর যন্ত্রণাদায়ক। বিজয়শ্রী ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির “যৌন প্রতীক” হিসেবে টাইপকাস্ট। প্রযোজক ও নির্মাতারা তাঁর রূপ-যৌবনকে বিক্রির হাতিয়ার বানিয়েছিলেন। এক ছবির শুটিংয়ে, শ্লীলতাহানির দৃশ্যের সময় সহ-অভিনেতা তাঁর পোশাক প্রায় ছিঁড়ে ফেলেন। সেই মুহূর্তটির ছবি পোস্টারে ছাপা হয়, যা তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়, আঘাত করে। বাইরে তিনি যতই হাসিমুখে থাকতেন, ভেতরে ছিল ক্ষত। তাঁর শরীরকে এক “প্রোডাক্ট” হিসেবে ব্যবহারের প্রতিবাদ জানানোর মতো সাহস বা অবস্থান, তখনকার দিনে একজন উঠতি অভিনেত্রীর ছিল না।
Ramayana: রামায়ণ নিয়ে ফের দ্বন্দ্ব, নিতেশ তিওয়ারিকে টেক্কা দেবেন বিষ্ণু…
এক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জীবনের আকস্মিক অবসান
১৯৭৪ সালের একদিন, মাদ্রাজের নিজের বাড়িতে বিজয়শ্রী বিষ পান করেন। এক প্রযোজক তাঁকে দেখতে এসেছিলেন সেই দিনই। অভিনেত্রীর মা জানিয়েছিলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি দরজা বন্ধ করে দেন। এবং দীর্ঘক্ষণ না বেরোনোয় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তাঁর মা। ঘরে গিয়ে দেখতে পান রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছে তাঁর। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্তে বিষক্রিয়ার প্রমাণ মেলে, এবং ঘরে একটি বিষভর্তি বোতল পাওয়া যায়।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও বিজয়শ্রী প্রতিবেশী বাচ্চাদের সঙ্গে হাসিমুখে গল্প করেছিলেন। তাঁর বিয়ের কথাও চলছিল, বিদেশে থাকা এক চিকিৎসকের সঙ্গে। সিনেমার জগৎ থেকে বেরিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক গভীর ক্ষত, একাকীত্ব, অপমান, এবং আত্মসম্মানের ক্রমাগত ক্ষয়।