Jatra Para-Jatra Pala: এক সময় লোক সংস্কৃতিতে ভরপুর ছিল গ্রামবাংলা। কালের নিয়মে গ্রাম বাংলা থেকে যেন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি যাত্রাপালা। ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ, এই সময়ে যাত্রাপাড়ার পিক সিজন। গ্রামের মানুষ মুখিয়ে থাকে যাত্রা দেখার জন্য। কিন্তু, শহুরে আবদকায়দা আবার যাত্রাপালার নাম শুনলে অনেক সময় নাক শিটকায়। সম্প্রতি এক বাঙালি সঞ্চালিকা ও গায়িকা পরমা বন্দ্যোপাধ্যায় নাটকের অবমাননা করায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু সেলিব্রিটি বিরোধীতা করেছিলেন। বিশিষ্ট নাট্যকার মঞ্জিল চৌধুরী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেছিলেন, নাটক এমন এক শিল্পী যার ঐতিহ্য কোনও দিন মুছে যাবে না। ২৭ জুন রথযাত্রার দিন যাত্রাপাড়ার চিত্র তাঁর কথার সত্যতা প্রমাণ করল।
কোভিডকালে নাট্যব্যবসায় কিছুটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। তবে এই বছর ব্যবসা ভাল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন যাত্রাপাড়ার নাট্যদলের পরিচলক রাম কুণ্ডু। তিনি বলেন, 'করোনা ও কোভিড পরবর্তী সময় যাত্রার খারাপ সময় ছিল। একদমই ব্যবসা হয়নি। কিন্তু, এখন পরিস্থিতি বদলেছে। যাত্রাপালা আবার পুরনো ছন্দে ফিরেছে। ব্যবসায় আর কোনও মন্দা নেই। এই মরশুমে যে যাত্রাগুলো মঞ্চস্থ হবে রথের দিন সেগুলো উদ্বোধন হয়ে গেল। বায়না চালু হয়ে গিয়েছে। যাঁরা অভিনয় করবেন তাঁরা এখানে এসে কথা বলে সাজসজ্জা দেখে গেল। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কিছু নাটক মঞ্চস্থ হবে। বাকি নাটক দুর্গা পুজোর ষষ্ঠী থেকে আরম্ভ হবে।'
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতিতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর শর্তে আগামী দিনে তা নিয়ে চিন্তায় দিন কেটেছে বাংলার সনাতন লোকশিল্প গোষ্ঠীর। রথের আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত নতুন পালার পোস্টার লাগানো। যাত্রাপাড়া ছেয়ে যেত বিভিন্ন রঙের পোস্টারে। নতুন শিল্পীদের এই সময় থেকেই নিয়ে আসা হত। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে নায়েকরা আসতেন বায়না করতে। মিষ্টিমুখ খাওয়া-দাওয়া সহ এলাহি আয়োজনের বন্দোবস্ত থাকত। যাত্রা অ্যাকাডেমিতে ধুমধাম করে হত পুজোর আয়োজন, প্রত্যেক দল ক্যাম্প করত। রথের দিন থেকেই শুরু হয়ে যেত পুজোর বুকিং। করোনা আবহে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে যাত্রাপাড়া। শিল্পীদেরও মুখে হাসি বহাল রয়েছে।
আরও পড়ুন অতিমারিতে যেন বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছে চিৎপুরের যাত্রাপাড়া
উল্লেখ্য, যাত্রা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় লোকনাট্য ধারা। এটি প্রধানত চার-পাঁচঘণ্টাব্যাপী বিনোদন উপভোগের এক অনন্য মাধ্যম। উচ্চ শব্দ ও চড়া আলোর ব্যবহার এবং বিশালাকার মঞ্চে নাটকীয় উপস্থাপনাই যাত্রার বৈশিষ্ট্য। অতিনাটকীয় ভাবভঙ্গি ও আবৃত্তির মাধ্যমে প্রায়ই যাত্রার উপস্থাপনা করা হয়ে থাকে। গ্রামগঞ্জে এখনও নাটক বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হিসেবেই গন্য হয়।