Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

টেলি রিভিউ: টকঝাল কমেডির সঙ্গে ঘন আবেগ, মন ভরায় 'সৌদামিনীর সংসার'

Soudaminir Sansar tele serial review: শাশুড়ির মুখ ঝামটা থেকে মাঝরাতে ডাকাত, কোন্দল বাড়ির বউয়ের জীবনে ঝামেলার অন্ত নেই। অনেকদিন পরে টেলিপর্দায় এল ভাল মানের কমেডি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Zee Bangla serial Soudaminir Sansar review

সৌদামিনীর ভূমিকায় সুস্মিলি আচার্য। ছবি: ইউটিউব থেকে

Zee Bangla serial Soudaminir Sansar: দর্শক সন্ধ্যাবেলা একটু বিনোদন আশা করেন টেলিপর্দায়। নির্মাতারও চান দর্শককে তেমন কিছু পরিপাক করে পরিবেশন করতে যা বিনোদন দেবে তো বটেই, পাশাপাশি একটু ভাল মানের কিছু হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা টেলিধারাবাহিকের মান যে পড়ে গিয়েছে অনেকটাই, সেটা যেমন ঠিক, পাশাপাশি কিছু ব্যতিক্রমও যে রয়েছে, সেটাও কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই। জি বাংলা-র ধারাবাহিক 'সৌদামিনীর সংসার' তেমনই একটি ব্যতিক্রম।

Advertisment

একটি কাল্পনিক পিরিয়ড ধারাবাহিকে অত্যন্ত পরিমিতির সঙ্গে হাস্যরসে মিশিয়ে দেওয়া হয় ছোট ছোট সুখ-দুঃখ। সৌদামিনী এক মা-হারা কিশোরী, যে সরল কিন্তু বোকা নয়। তার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব তাক লাগায়। সে বুদ্ধিমান কিন্তু চালাকি দ্বারা মহৎ কার্য করতে চায় না কখনও। বরং সে জীবনকে ছুঁতে চায় দুহাত বাড়িয়ে, হাসিমুখে।

আরও পড়ুন: ফিরছে সোশাল ড্রামার ট্রেন্ড, আসছে 8টি ধারাবাহিক

এমন এক কিশোরীর বিয়ে হয় 'কোন্দল' বাড়িতে। সে বাড়ির প্রভাতী সঙ্গীত থেকে সন্ধ্যারাতের ভজন, সবই কোন্দলময়। নাটকীয়তার প্রয়োজনেই দুই বিপরীতধর্মী স্রোত মুখোমুখি হয়ে তৈরি হয় ঘূর্ণি। শ্বশুরবাড়িতে নতুন বউ নাকানিচোবানি খেতে খেতেই ভেসে ওঠে বার বার। বিদ্বেষ, ঈর্ষা, জটিলতা যেন তলিয়ে যায়, সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলে ধারাবাহিকের গল্প। কিন্তু তেমনটা হতে এখনও বেশ দেরি। তার আগে অনেক কমিক মুহূর্ত আসা বাকি। শুধু তাই নয়, সৌদামিনীর মৃত্যু ও মিনি হয়ে ফেরা ইত্যাদি পুনর্জন্মের বিষয়টিও রয়েছে।

আপাতত শ্বশুরবাড়িতে মাথা উঁচু করে নিজের জায়গাটুকু তৈরি করার সময় সৌদামিনীর। পঞ্চাশ-ষাটের দশকের একটি গ্রামীণ পরিবারে নিত্যদিন ঘটনার ঘনঘটা। কখনও পুকুরঘাটে সাপ তো কখনও রাতবিরেতে ডাকাত। শাশ্বতী ঘোষ, অশ্রনু ঘোষ ও পৌষালী ঘোষ দস্তিদারের সুপটু চিত্রনাট্য-সংলাপ এতটুকু একঘেয়েমি আসতে দেয় না।

আরও পড়ুন: অগাস্ট মাসে মিস করবেন না এই ৫টি ওয়েব সিরিজ

দর্শককে কাঁদানো খুব কঠিন নয়। এমনিতেই টেলিপর্দায় উচ্চ সংবেদনশীল ড্রামা দেখতে ভালবাসেন দর্শক কিন্তু দর্শককে নিষ্কলঙ্ক হাসি উপহার দেওয়াই কঠিন। 'সৌদামিনীর সংসার'-এর হাস্যরসের উপাদানগুলি সহজ এবং স্নিগ্ধ। সেটাই ধারাবাহিকের অন্যতম ইউএসপি। খুব সাধারণ নিত্যনৈমিত্তিক বেঁচে থাকার মধ্যে যে লুকোনো মজা, তাকেই উদযাপন করে এই ধারাবাহিক।

অসম্ভব ভাল কাস্টিং। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সুমিত সমাদ্দার, অরিন্দোল বাগচী থেকে দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত, সমতা দাস, বনি মুখোপাধ্যায়-- একঝাঁক সুঅভিনেতাদের একসঙ্গে পাবেন দর্শক। এই অভিজ্ঞ অভিনেতাদের সঙ্গে সমান তালে সঙ্গত করে চলেছে সুস্মিলি আচার্য ও অধিরাজ গঙ্গোপাধ্যায়, গল্পের নায়ক-নায়িকা।

কথায় আর কাজের মতো, নির্মাতাদের চাওয়া ও দর্শকের পাওয়ার মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেশ বড়সড় ফাঁক থেকে যায়। এই ধারাবাহিকে সেই ফাঁকটুকু চোখে পড়ে না প্রায়। রাত সাড়ে দশটায় বিনোদনের ছাপান্ন ভোগ নিয়েই হাজির হয় 'সৌদামিনীর সংসার'। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে দুটি বিষয় নিয়ে-- মোড়ক দেওয়া পুরুষতান্ত্রিকতা ও অপরিপক্ক প্রেমের উদযাপন।

আরও পড়ুন: সাড়ে ছ’টায় এবার লড়াই সম্পূর্ণা বনাম দিতিপ্রিয়ার

সত্তর-আশি বছর আগে কৈশোর-বিবাহ স্বাভাবিক ছিল। এই সময়ে দাঁড়িয়ে তা কাম্য নয়। এই ধারাবাহিকে অপরিণত বয়সে মেয়েদের বিয়ে এবং সাংসারিক জীবনকে গৌরবান্বিত করা হচ্ছে নিঃসন্দেহে। পাশাপাশি সংসারকে ভাল রাখার দায়ভার যে শুধুই মেয়েদের, সেই বহু প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিই কিন্তু এই ধারাবাহিকের শিরদাঁড়া। সম্ভবত এই প্রশ্নগুলি উঠতে পারে জেনেই সময়কালটা রাখা হয়েছে পঞ্চাশ-ষাটের দশক। ওই সময়ে এই ব্যাপারটিই ছিল স্বাভাবিক।

তাই ক্রিয়েটিভ লিবার্টির সদ্ব্যবহার করে প্রশ্ন দুটিকে পাশ কাটিয়ে যেতেই পারেন নির্মাতারা। তেমনটা করলেও প্রশ্নটা কিন্তু থাকবে প্রশ্নের জায়গাতেই। তবে এই মুহূর্তে যে কয়েকটি ভাল মানের ধারাবাহিক রয়েছে বাংলা টেলিভিশনে, সেই তালিকায় রাখতেই হবে 'সৌদামিনীর সংসার'-কে। ভাল অভিনয় ও চিত্রনাট্যের পাশাপাশি জয় চন্দ্র চন্দ্রের শিল্প নির্দেশনা, সাবর্ণী দাসের পোশাক পরিকল্পনা, রাজেন্দ্র প্রসাদ দাসের পরিচালনা এবং অসাধারণ টিমওয়ার্কই রয়েছে এমন ঝরঝরে উপস্থাপনার নেপথ্যে।

Bengali Serial Bengali Actor Bengali Actress Bengali Television
Advertisment