Advertisment

১৫ অগাস্ট দিনটিতেই কেন পালিত হয় ভারতের স্বাধীনতা দিবস?

মাউন্টব্যাটেনের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে ভারতের স্বাধীনতা বিল ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে পেশ করা হয় ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই। দু সপ্তাহের মধ্যেই তা পাশ হয়ে যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Independence Day

১৯৪৭ সালের সকাল ৮-৩০, জওহরলাল নেহরুকে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন

১৯২৯ সালে জওহরলাল নেহরু কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর আহ্বানে ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণার কথা ছিল। ১৯৩০ সাল থেকে এ দিনটিকেই কংগ্রেস স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করত, যতদিন না ভারত স্বাধীনতা পায় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। ২৬ জানুয়ারির ওই দিনটিতেই ভারত সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়।

Advertisment

তাহলে ১৫ অগাস্ট কীভাবে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হল? লর্ডমাউন্টব্যাটেনকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আদেশপত্র দিয়েছিল তাতে বলা ছিল এই কাজ শেষ করতে হবে ৩০ জুন, ১৯৪৮-এর মধ্যে। এ ব্যাপারে সি রাজাগোপালাচারীর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ইংরেজরা যদি ১৯৪৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করত, তাহলে হস্তান্তর করার মত কোনও ক্ষমতাই তাদের হাতে থাকত না। ফলে মাউন্টব্যাটেন সে কাজ এগিয়ে এনেছিলেন ১৯৪৭ সালের অগাস্টে।

আরও পড়ুন, সংঘ পরিবার ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর

সে সময়ে মাউন্টব্যাটেন দাবি করেছিলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি এগিয়ে আনার মধ্যে দিয়ে তিনি দাঙ্গা ও রক্তপাত এড়িয়ে যেতে পেরেছেন। তাঁর দাবি ভুল প্রমাণিত হওয়ার পর আত্মপক্ষ সমর্থনে মাউন্টব্যাটেন লিখেছিলেন, "যেখানেই সাম্রাজ্যের শাসনের অন্ত হয়েছে, সেখানেই রক্তপাত হয়েছে। এ দাম দিতেই হবে।"

Independence Day ১৫ অগাস্ট লালকেল্লা থেকে দাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু (ফোটো-এক্সপ্রেস আর্কাইভ)

মাউন্টব্যাটেনের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে ভারতের স্বাধীনতা বিল ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে পেশ করা হয় ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই। দু সপ্তাহের মধ্যেই তা পাশ হয়ে যায়। এর ভিত্তিতে ভারতে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয় এবং তৈরি হয় ভারত ও পাকিস্তান। এ দুই রাষ্ট্রকেই ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।



ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট গ্রন্থে মাউন্টব্যাটেনকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, "আমি দিনটা এমনিই বেছেছিলাম। একটা প্রশ্নের উত্তরে আমি এই জবাব দিই। আমি বদ্ধপরিকর ছিলাম যে আমি দেখাব আমিই গোটা বিষয়টার নিয়ন্ত্রক। ওরা যখন জিজ্ঞাসা করেছিল যে আমি কোনও দিন নির্দিষ্ট করেছি কিনা, আমি বুঝে গিয়েছিলাম দ্রুত ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। আমি ও নিয়ে ভাবিনি তখনও- আমি ভাবছিলাম অগাস্ট বা সেপ্টেম্বর কিছু একটা, তার পর আমি বলে দিই ১৫ অগাস্ট। কেন? কারণ এ দিনটা জাপানের আত্মসমর্পণের দ্বিতীয় বার্ষিকী"।

আরও পড়ুন, ছত্তিসগড়ে মাওবাদীদের মোকাবিলা কীভাবে করছে নিরাপত্তা বাহিনী?

১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাপানের সম্রাট হিরোহিতো একটি রেকর্ডের রেডিও ভাষণ দেন যা পরে জুয়েল ভয়েস ব্রডকাস্ট নামে পরিচিত হয়। সেই রেডিও ভাষণে তিনি মিত্রশক্তির কাছে জাপানের আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করেন। মাউন্টব্যাটেন স্মরণ করতে পেরেছিলেন যে তিনি সে ভাষণ শুনেছিলেন চার্চিলের ঘরে বসে এবং মিত্রশক্তির সুপ্রিম কম্যান্ডার হিসেবে জাপানের আত্মসমর্পণের নথিতে ১৯৪৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরও করেছিলেন।

publive-image লর্ড মাউন্টব্যাটেন ও লেডি মাউন্টব্যাটেন, ১৫ অগাস্ট, ১৯৪৭ (এক্সপ্রেস আর্কাইভ ফোটো)

কিন্তু পাকিস্তান ১৪ অগাস্ট স্বাধীন হল কীভাবে? সত্যি কথা বলতে কি, হয়নি। ভারতের স্বাধীনতা বিলে দুই দেশকেই ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা ছিল। পাকিস্তান প্রথমে ১৫ অগাসটকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মেনেছিল। পাকিস্তানের প্রথম ভাষণে জিন্না বলেছিলেন, "১৫ অগাস্ট স্বাধীন, সার্বভৌম পাকিস্তানের জন্মদিন"।

১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তান ১৪ অগাস্ট থেকে স্বাধীনতা দিবস পালন করতে শুরু করে, তার একটা কারণ হতে পারে করাচিতে ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটেছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট, এথবা ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট ছিল ২৭ তম রমজান যা মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এক দিন।

কারণ যাই হোক না কেন ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই ৭৩ বছর ধরে তাদের স্বাধীনতা দিবস পালন করে তীব্র দেশপ্রেমের সঙ্গে। দুই দেশেই অবশ্য স্বাধীনতার ফল ব্যাপক সংখ্যার নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নিরিখে এ তারিখের তেমন কোনও তাৎপর্য নেই।

Read the Full Story in English

Independence Day
Advertisment