আসাম এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা গত ৩১ অগাস্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে যে চূড়ান্ত খসড়া এনআরসি প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে যতজনের নাম বাদ পড়েছিল, চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়েছে তার অর্ধেকের কাছাকাছি নাম। আসাম বিজেপি এত কম সংখ্যক মানুষের নাম বাদ পড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) জানিয়েছে, তারা মনে করে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের নাম বাদ পড়া উচিত ছিল।
এনআরসি-তে প্রকাশিত ১৯ লক্ষের চেয়েও বেশি বিদেশি আসামে বাস করেন, এ ধারণার ভিত্তি কী?
২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর আসাম সম্মিলিত মহাসংঘ ও অন্যান্য বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দেয় তার পরেই এনআরসি প্রক্রিয়ায় জোর পড়ে।
আরও পড়ুন, সব বেআইনি অভিবাসীদের তাড়ানো হবে: অমিত শাহ
ওই নির্দেশের ১৩ নং অনুচ্ছেদে একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে সে রিপোর্টটি দিয়েছিলেন আসামের রাজ্যপাল লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস কে সিনহা। রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণনের কাছে। "বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অভিবাসনের ব্যাপক সংখ্যাবৃদ্ধির বিপজ্জনক পরিণামের বিষয়টি অতীব সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। ধর্মনিরপেক্ষতার কোনও ভুল ধারণা বা ভুল ব্যাখ্যা এর মধ্যে আনা উচিত হবে না... আসামের ভূমিপুত্ররা নিজের রাজ্যে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার আশঙ্কার ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে। তাঁদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে, তাঁদের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে যাবে এবং তাঁদের কাজের সুযোগ কমবে।"
রিপোর্টে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিনহা ১৯৯৭ সালের ৬ মে সংসদে তৎলালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের একটি জবাবের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে বলা ছিল সারা দেশে ১ কোটি অবৈধ অভিবাসীর বাস। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক/ ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো সূত্র উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার ১৯৯৮ সালের ১০ অগাস্টে ওই অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ৪০ লক্ষ আসামের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।"
আরও পড়ুন, আসাম এনআরসি-তে ভুল রয়েছে, সরকারকে সংশোধন করতে বলল আরএসএস
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছিল, "২০০৪ সালের ১৪ জুলাই সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন ২০০১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের খতিয়ান অনুসারে ভারতে ১.২০ কোটি অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন, যার মধ্যে ৫০ লক্ষের বাস আসামে।"
৩১ অগাস্ট, রাজ্য বিজেপির সভাপতি রঞ্জিত দাস বলেন, "১৯৯১ সালে আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশরঞ্জন সইকিয়া বলেছিলেন, আসামে ৩০ লক্ষ অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে। এরপর, কংগ্রেসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল রাজ্যসভায় বলেন, আসামে ৫০ লক্ষ অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে। এমনকি এইচ ডি দেবগৌড়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তও আসামে ৪২ লক্ষ অবৈধ বিদেশি বাসের কথা বলেছিলেন... তাহলে এখন কী করে আমরা ১৯ লক্ষ সংখ্যাটা মেনে নেব?"
Read the Full Story in English